দেশজুড়ে

ফার্স্ট বয়ই লাস্ট বয়

যে ফার্স্ট বয় সে আবার লাস্ট বয়। অর্থাৎ একটি শ্রেণিতে একজন মাত্র ছাত্র। অন্যান্য শ্রেণিতে পাঁচজনের বেশি শিক্ষার্থী নেই। মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার নালী ইউনিয়নের নিমতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র এটি।

Advertisement

শিক্ষক ও অভিভাবকরা বলছেন, যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না থাকায় বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থী সংকটে পড়েছে। সেইসঙ্গে যেসব শিক্ষার্থী আছে তারাও এখানে পড়তে অনাগ্রহ প্রকাশ করছে।

সরেজমিনে নিমতা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, চারপাশে ফসলের ক্ষেত। মাঝখানে নিমতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালেয়ের একতলা ভবন। যার পাঁচটি শ্রেণিকক্ষ। বিদ্যালয়ের চারপাশে কোনো রাস্তা এবং দোকানপাট নেই। তবে বিদ্যালয়ে তখন পাঠদান চলছিল। দেখা গেল দ্বিতীয় শ্রেণিতে মাত্র একজন শিক্ষার্থীকে পড়াচ্ছেন এক শিক্ষক। শাওন মোল্লা নামের ওই শিক্ষার্থী দ্বিতীয় শ্রেণির একমাত্র শিক্ষার্থী। অর্থাৎ সে ফার্স্ট বয় আবার সেই লাস্ট বয়।

শিক্ষক বেলী মন্ডল বলেন, প্রথম শ্রেণি থেকে উত্তীর্ণ হয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ওঠে দুই শিক্ষার্থী। কিন্তু একজন জানুয়ারিতে অন্য বিদ্যালয়ে চলে যায়। এরপর থেকে শাওন এই ক্লাসের একমাত্র শিক্ষার্থী। একজন ছাত্রকে পড়াতে ভালো লাগে না। শিক্ষার্থী বেশি না থাকলে প্রতিযোগিতা থাকে না। কিন্তু আমরা কী করব।

Advertisement

শাওন মোল্লা জানায়, আমার কোনো সহপাঠী নেই। একাই আমাকে ক্লাসে করতে হয়। খেলাধুলা করার মতো কেউ নেই। একা একা পড়তে খুবই খারাপ লাগে আমার।

তবে বিদ্যালয়ের অন্য শ্রেণিকক্ষে ৩-৪ জন করে শিক্ষার্থী উপস্থিত পাওয়া যায়। বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ২২ জন। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকে শিক্ষার্থী তিনজন, প্রথম শ্রেণিতে চারজন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে একজন, তৃতীয় শ্রেণিতে চারজন, চতুর্থ শ্রেণিতে পাঁচজন, পঞ্চম শ্রেণিতে পাঁচজন শিক্ষার্থী রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ মোট শিক্ষক চারজন। এর মধ্যে তিনজনই নারী।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিরঞ্জন কুমার মন্ডল বলেন, ১৯৭২ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। সরকারীকরণ হয় ২০১৩ সালে। সে সময় শিক্ষার্থী সংখ্যা দেখানো হয়েছিল দেড় শতাধিক।

শিক্ষার্থী সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, চারপাশে যাতায়াতের জন্য কোনো রাস্তাঘাট নেই। ফসলের ক্ষেতের আইল দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। সামান্য বৃষ্টি আর বর্ষায় যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অভিভাবকরা আশপাশের বিদ্যালয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করান। দুর্গম এলাকা হওয়ায় অনেকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করেন। এ কারণে এখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম। অল্প শিক্ষার্থী থাকলেও শিক্ষকরা আন্তরিকতার সঙ্গে পাঠদান করে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

Advertisement

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. ছবেদ আলী বলেন, মাত্র ২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ হলেই বিদ্যালয়ের যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হয়ে যাবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তারা সড়ক নির্মাণের বহু আশ্বাস দিলেও প্রতিষ্ঠার ৪৬ বছরেও রাস্তা হয়নি। সরকারের কাছে স্কুলে যাতায়াতের জন্য একটি রাস্তা নির্মাণের দাবি জানাই।

বিদ্যালয়ের এমন দুরবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রওশন আলী বলেন, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার সময় জায়গা নির্ধারণ সঠিক ছিল না। দুর্গম এলাকায় রাস্তাঘাট না থাকায় অভিভাবকরা শিশুদের ভর্তি করতে চান না। তবে শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়া কিংবা ভর্তি হয়ে অন্য বিদ্যালয়ে চলে যাওয়া ছাড়া আর কোনো কারণ আছে কিনা সে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবো।

বি.এম খোরশেদ/এএম/এমএস