টাকার অভাবে নিজে পড়াশোনা করতে না পারলেও বাদাম বিক্রির টাকায় সংসার চালানোর পাশাপাশি ছোট ভাইকে পড়াচ্ছেন তিনি। কারণ নিজের স্বপ্নটাকে ভাইয়ের মাধ্যমেই পূরণ করতে চান তিনি। যার কথা বলছি, তিনি মোজাহার উদ্দিন। তার জীবন সংগ্রামের গল্প শোনাচ্ছেন সজীব বণিক-
Advertisement
ব্রাক্ষণবাড়িয়ার সড়াইল উপজেলার ফরমানপুরের এক দরিদ্র পরিবারে মোজাহারের জন্ম। বাবা আব্দুল আলী পেশায় ছিলেন কুমার। মাটির হাঁড়ি-পাতিল বানিয়ে বাড়ি বাড়ি বিক্রি করেই সংসার চালাতেন তিনি। দুই ভাইয়ের মধ্যে মোজাহার উদ্দিন বড়। অভাবের সংসারে বাবার সীমিত আয়ের মাঝেও সন্তানের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু মোজাহার পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াবস্থায় বাবার মৃত্যু হয়।
এরপর থেকে গোটা পরিবারে নেমে আসে হতাশার ছায়া। অভাব-অনটনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তার পড়াশোনা। তাই ছোট ভাই ও সংসারের দিকে তাকিয়ে মোজাহারের পড়াশোনা আর এগোতে পারেনি। মোজাহার সংসার ও ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার দায়িত্ব নিতে চলে যান কুমিল্লায়।
> আরও পড়ুন- জসিমের ভাগ্য বদলের গল্প
Advertisement
প্রথম দিকে বিভিন্ন স্কুল, কলেজে ঘুরে ঘুরে বাদাম বিক্রি করলেও পরবর্তীতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাদাম বিক্রি শুরু করেন। তারপর থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই প্রতিদিন বাদাম বিক্রি করতে দেখা যায় মোজাহারকে।
ক্যাম্পাসে কতদিন ধরে বাদাম বিক্রি করেন জানতে চাইলে মোজাহার বলেন, ‘আমি দু’বছর যাবত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরে বাদাম বিক্রি করি। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা আসার আগেই আমি বাদাম নিয়ে প্রতিদিন মূল ফটকের সামনে অপেক্ষা করতে থাকি।’
বাবার মৃত্যুর পর থেকে তার মুখে হাসি নেই। তবে চোখজুড়ে বিশাল স্বপ্ন। সংসার ও তার ভাইয়ের পড়াশোনা চালাতে হবে। চেহারায় কেমন জানি একটা বিষণ্নতার ছাপ। এই বয়সে তার কাঁধে স্কুলব্যাগ থাকার কথা ছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ রাস্তায় রাস্তায় বাদাম বিক্রি করতে হচ্ছে তাকে।
> আরও পড়ুন- ৬শ’ টাকা খরচ করলে ১২শ’ টাকা আয়
Advertisement
পথে পথে ঘুরে পাঁচ টাকা ও দশ টাকা করে বাদাম বিক্রি করছেন। প্রতিমাসে বাদাম বিক্রি করে কত টাকা আয় হয়- এ প্রসঙ্গে মোজাহার বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাদাম বিক্রি করি। তাতে আয় হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। কিছু টাকা নিজের খরচের জন্য রেখে প্রতিমাসে ৮-১০ হাজার টাকা পাঠাই বাড়িতে।’
মোজাহারের এ টাকাতেই চলে সংসার। আবারো স্কুলে যেতে ইচ্ছে করে কি না- এ বিষয়ে মোজাহার বলেন, ‘মাঝে মাঝে খুব কষ্ট হয়। স্কুলে যাওয়ার ইচ্ছা হয়, কিন্তু পরিবারের কথা মনে করতেই এসব স্বপ্ন মিছে মনে হয়। আপাতত পরিবার নিয়েই আমার স্বপ্ন। তাদের জন্য কিছু করতে পারলেই আমার স্বপ্ন সার্থক হবে।’
ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘ছোট ভাইকে দু’বছর যাবত সংসার চালানোর পাশাপাশি বাদাম বিক্রির টাকাতেই পড়িয়ে যাচ্ছি। আমার স্বপ্ন ও একদিন বড় হয়ে আমাদের সব কষ্ট দূর করবে এবং স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।’
লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
এসইউ/এমএস