বিশেষ প্রতিবেদন

বিএনপির ব্যাকআপ প্ল্যান জোবাইদা

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনীতির পানি ঘোলা হচ্ছে প্রতিক্ষণে। এ ঘোলা পানিতেই ভাগ্য নির্ধারিত হচ্ছে জিয়া পরিবারের। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালতের রায়ে আপাতত নির্বাচনে অযোগ্য। কারান্তরীণ খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি-না, তা নির্ধারিত হবে উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে। আপিল বিভাগের রায় বিপক্ষে গেলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না তিনি।

Advertisement

দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও আপাতত নির্বাচনে অযোগ্য। পলাতক (আদালতের ভাষায়) তারেক রহমান একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। নির্বাচনের আগে দেশে ফেরার সম্ভাবনাও নেই তার। রাজনীতির মাঠে কূল পেতে বিএনপি তথা ২৩ দলীয় জোট ‘ঐক্যফ্রন্টে’ মিলেমিশে একাকার। নির্বাসনে থাকা তারেক রহমান প্রযুক্তির কল্যাণে দৃশ্যমান হলেও নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে সরব থাকার সুযোগ নেই।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে সবচেয়ে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে বিএনপি। অবস্থাদৃষ্টে অনেকেই মনে করছেন শীর্ষ নেতৃত্ব ছাড়াই নির্বাচনে যেতে হবে বিএনপিকে। তবুও বিএনপির ঘরে চলছে নির্বাচনী আমেজ। প্রশ্ন হচ্ছে, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাজা বহাল থাকলে অথবা তারা নেতৃত্বে না আসতে পারলে কে ধরবেন বিএনপির হাল?

রাজনীতির মাঠে এ প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে সামনে আনছেন। মিডিয়া পাড়াতেও জোবাইদা রহমানকে নিয়ে এখন জোর আলোচনা।

Advertisement

সূত্র জানায়, ফেনী-১ আসন, বগুড়া ৬ ও ৭ আসনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিকল্প হিসেবে জোবাইদা রহমানকে রাখা হয়েছে। এ তিন আসনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পাশাপাশি জোবাইদা রহমানের নামেও দলীয় মনোয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান নির্বাচন করতে না পারলে জোবাইদাই প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন এসব আসনের যে কোনোটিতে।

তবে পাসপোর্ট জটিলতায় আটকে যেতে পারে জোবাইদার নির্বাচনে অংশ নেয়া। পাসপোর্ট এখনও লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের হাতে। ফলে দেশে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ এক নেতার সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকার চাইছে বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করতে। আদালতের ওপর ভর করে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে তারা। শত চেষ্টা করেও বিএনপিকে বিভাজিত করতে পারেনি। এর কারণ হচ্ছে জিয়া পরিবারের প্রতি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ভালোবাসা।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘কোনো কারণে যদি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের দলের নেতৃত্বে আসতে জটিলতা সৃষ্টি হয়, তাহলে জিয়া পরিবার থেকেই এমন কাউকে সামনে আনা হবে যিনি অধিক যোগ্য। যার প্রতি দলের নেতাকর্মীদের আনুগত্য থাকবে। সেই বিবেচনায় জোবাইদা রহমান অগ্রভাগে অবস্থান করছেন বলে আমি বিশ্বাস করি।’

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রাপ্তবয়স্ক সব নাগরিক নির্বাচন করার অধিকার রাখেন, বাংলাদেশের সংবিধান তা সংরক্ষণ করে। জোবাইদা রহমান বাংলাদেশের নাগরিক। তিনি দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। তার নির্বাচনে অংশ নেয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বলে আমি মনে করি।’

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের পারিবারিক ও শিক্ষাগত যোগ্যতায় বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। জোবাইদার বাবা রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলি জিয়াউর রহমানের আমলে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সেনা সরকারে তিনি যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী জোবাইদার চাচা। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আইরিন খানের চাচাতো বোন জোবাইদা চিকিৎসকদের সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় প্রথম হন। লন্ডনের ইম্পিরিয়াল ইউনিভার্সিটি অব মেডিসিন থেকে রেকর্ড নম্বর ও স্বর্ণপদক নিয়ে এমএসসি করেন তিনি।

এএসএস/এনডিএস/এমএআর/এমএস