একাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্টের হেভিওয়েট প্রার্থীর সংখ্যা প্রায় ২৫ জন। হেভিওয়েট মাত্রই মনোনয়ন নিশ্চিত- এমনটা ভাবা হলেও এবারের নির্বাচনে চট্টগ্রামে অন্তত তা হচ্ছে না।
Advertisement
দল বা জোটের মধ্যে একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী থাকায় মনোনয়ন দৌড়ে বেড়েছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। একই সঙ্গে একাধিক প্রতিভাবান তরুণ মনোনয়ন প্রত্যাশীর উপস্থিতি সে লড়াই জমিয়ে তুলছে আরও বেশি।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থাকা ১৪ দলীয় জোট ও মহাজোট এবং বিএনপির নেতৃত্বে থাকা ২৩ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার চট্টগ্রামের ১০টি আসনে মনোনয়ন পেতে লড়ছেন ২৫ হেভিওয়েট প্রার্থী। এসব আসনের চারটিতে হেভিওয়েট প্রার্থীরা বিনা চ্যালেঞ্জে মনোনয়ন পাবেন- এমন আভাস মিললেও বাকি ছয়টি আসনে মনোনয়ন পেতে ঘাম ঝরাতে হচ্ছে হেভিওয়েটদের।
চট্টগ্রাম-৯ আসনে (কোতোয়ালি) মহাজোটের হেভিওয়েট প্রার্থী নুরুল ইসলাম বিএসসি, আবদুচ ছালাম, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও জিয়াউদ্দীন আহমেদ বাবলু
Advertisement
লড়াই জমেছে কোতোয়ালি (চট্টগ্রাম) আসনে
চট্টগ্রাম নগরের চারটি আসনের মধ্যে হাইভোল্টেজ আসন কোতোয়ালি (চট্টগ্রাম-৯)। চট্টগ্রামে একটি প্রবাদ চালু আছে, ‘কোতোয়ালি আসন যারা জেতে, তারাই সরকার গঠন করে’। স্বাধীনতার পর থেকে এর স্বাভাবিক পুনরাবৃত্তি চলে আসছে। তাই এ আসনকে ঘিরে সব বড় দল বা জোটেই থাকে আলাদা প্রস্তুতি। প্রনোনয়ন প্রত্যাশীদেরও আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে কোতোয়ালি (চট্টগ্রাম-৯) আসন।
একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি ২৬ জন আগ্রহী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এ আসনে প্রার্থী যেমন বেশি তেমনি রয়েছেন বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থীও।
চট্টগ্রাম-১০ আসনে (ডবলমুরিং) ২৩ দলীয় জোটের তিন হেভিওয়েট প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও জামায়াতের শাহজাহান চৌধুরী
Advertisement
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসনে নৌকার মাঝি হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ও তার ছেলে মুজিবুর রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের মতো হেভিওয়েট প্রার্থীরা।
মহাজোট থেকে এ আসনে মনোনয়ন চাইছেন আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব ও বর্তমান সংসদ সদস্য জিয়াউদ্দীন আহমেদ বাবলু। জোটের বাইরে গিয়ে জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচনে অংশ নিলে তার জন্যও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে দলটি। কয়েক মাস আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ চট্টগ্রাম সফরে এসে বর্তমান সংসদ সদস্য জিয়াউদ্দীন আহমেদ বাবলুকে এ আসনে দল থেকে মনোনয়ন দেয়ার ঘোষণা দিয়ে গেছেন।
তবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলছেন, বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে বেশ কয়েকটি ফ্লাইওভার, লিংক রোড, সড়ক প্রশস্তকরণসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে চট্টগ্রামে। তাই এবার চট্টগ্রাম নগরে কোনো ছাড় নয়। তারা মনে করছেন, উন্নয়নের এ জোয়ারে নগরের সবকটি আসনেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করা সম্ভব হবে। এবার আর দলের বাইরের কাউকে নগরের গুরুত্বপূর্ণ আসনটি ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে না।
এতো গেল জোটের হিসেবে, কোতোয়ালি (চট্টগ্রাম-৯) আসনে দলের ভেতরের হেভিওয়েটদের নিয়েও চিন্তায় আছে আওয়ামী লীগ। জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে কেউ মনোনয়ন পেলে তিনি হবেন এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। কিন্তু ব্যারিস্টার নওফেলের মতো তরুণকে মনোনয়ন দিতে গেলে বাদ পড়তে হবে দলটির অন্যতম দুই প্রবীণ হেভিওয়েট প্রার্থী চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম ও প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসিকে।
তবে দলে (আওয়ামী লীগ) নিজেদের ঝামেলা এড়াতে শেষ পর্যন্ত মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্য জিয়াউদ্দীন আহমেদ বাবলু এ আসনে মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন- এমনটাই শোনা যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম-৮ আসনে (বোয়ালখালী) মহাজোটের তিন হেভিওয়েট প্রার্থী মইন উদ্দীন খান বাদল, মোসলেম উদ্দীন আহমদ, আবদুচ ছালাম ও নুরুল ইসলাম বিএসসি
এদিকে, কোতোয়ালি (চট্টগ্রাম-৯) আসনে নগর বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা ধানের শীষ প্রত্যাশা করছেন। যদিও দুজনই গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। একই আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন নগর বিএনপির এ দুই নেতা। যদিও এর আগে কোতোয়ালি আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান নির্বাচন করতেন। কিন্তু এবার তিনি চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে মনোনয়ন চাইছেন।
নোমানের আসনে লড়তে চান খসরু-শাহজাহান
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বন্দরনগরীর হালিশহর-পাহাড়তলী ও খুলশী থানা এলাকা নিয়ে গঠন করা হয় নতুন একটি আসন চট্টগ্রাম-১০। বরাবরই এ আসন থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও নগরের সবচেয়ে অবহেলিত এলাকা এটি।
২০০৮ সালে এ আসন থেকে প্রথমবারের মতো অংশ নেন বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান। এর আগে এখানে দলটির প্রার্থী ছিলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তবে গত নির্বাচনে হেরেও এলাকা ত্যাগ করেননি বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমান। বরং পরবর্তী নির্বাচনের জন্য নিজেকে গুছিয়ে নেন।
অন্যদিকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গত দুটি সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসন থেকে। কিন্তু নির্বাচনের ডামাডোল শুরুর পর ওই আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। একই আসন থেকে ভোটে লড়তে নির্বাচন কমিশনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন আদালতের রায়ে নিবন্ধন হারানো আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী নগর জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীও। ফলে চট্টগ্রাম-১০ আসন নিয়ে জটিলতার আশঙ্কা করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
জামায়াতের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামে যে তিনটি আসনে চাওয়া হচ্ছে তার অন্যতম চট্টগ্রাম-১০ আসন। জামায়াত নিজেদের বিরোধ মীমাংসা করতেই ২৩ দলীয় জোট থেকে এ আসনে শাহজাহান চৌধুরীকে মনোনয়ন পাইয়ে দিতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ আল নোমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘২০০৮ সালে আমাকে মাত্র আট হাজার ভোটে হারিয়ে দেয়া হয়েছিল। আমি অসুস্থ ছিলাম। মাত্র দুদিন গণসংযোগ করেই আমি এত ভোট পাই। এরপর থেকে আমি নিয়মিত এ আসনে কাজ করছি। এ আসনে মনোনয়ন পাব বলে আশাবাদী। মনোনয়ন না পেলে নির্বাচন করব না।’
এদিকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১০ আসনে বিএনপির অন্যতম শীর্ষ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানকে হারিয়ে জিতেছিলেন আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম নগর পর্যায়ের নেতা ডা. আফছারুল আমিন। এবারও তিনি সেই আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। তবে হঠাৎ আলোচনায় এসেছেন সাবেক মেয়র মনজুর আলম। রাতারাতি বিএনপি-সমর্থিত মেয়র ও দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা বনে যাওয়া মনজুর আলম এবার চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং ও হালিশহর) আসনে নৌকার মাঝি হতে চান। দলীয় সূত্রে খবর, আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের পরামর্শে হেভিওয়েট এ প্রার্থী দলীয় মনোনয় ফরম সংগ্রহ করেছেন।
চট্টগ্রাম-১৫ আসনে (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) জামায়াতের শামসুল ইসলাম ও শাহজাহান চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগের আবু রেজা নদভী ও আমিনুল ইসলাম আমিন
মনজুর আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সাড়ে তিন বছর ভারপ্রাপ্ত মেয়র এবং পাঁচ বছর নির্বাচিত মেয়র ছিলাম। এসব দায়িত্ব পালনকালে নগরবাসীকে অনেক সেবা দিয়েছি। তাই আবারও মানুষের কাছে যেতে চাইছি। আমি তো আওয়ামী লীগেরই মানুষ।’
যেকোনো ভাবে নৌকায় উঠতে মরিয়া বাদল
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনটি ২০০৮ ও ২০১৪ সালে পরপর দুবার জোটের শরিক জাসদকে ছেড়ে দেয়ার পর এবার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভেতরেই জোর দাবি উঠেছে দলীয় প্রার্থী দেবার। আওয়ামী লীগের যে অংশটি বর্তমান সংসদ সদস্য জাসদ নেতা মইন উদ্দীন খান বাদলের সঙ্গে ছিলেন তারাও নতুন মুখের দাবি জানিয়েছেন। তবে সেখানেও বিপত্তি। আওয়ামী লীগের ভেতরে রয়েছে একাধিক হেভিওয়েট প্রার্থী। সব মিলিয়ে জোটের আর ভোটের হিসাবে এখানে দারুণ জটে পড়েছে মহাজোট।
চ্যালেঞ্জটা বুঝতে পেরেছেন বর্তমান এমপি জাসদের একাংশের নেতা মইন উদ্দীন খান বাদলও। তাই একই আসন থেকে দুটি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। ১৪ দলের শীর্ষ এ নেতার মনোনয়নপত্র নেয়ার সময় একবার জাসদের পরিচয় এবং আরেকবার নিজেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন মইন উদ্দীন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা খানও। অবস্থাদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, কোনোভাবেই মনোনয়ন দৌড়ে পিছিয়ে থাকতে চাইছেন না তিনি।
মইন উদ্দীন খান বাদল জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগে থেকেই ঠিক করা আছে আমি মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা মার্কায় নির্বাচন করব।’
এদিকে মহাজোটের এ শীর্ষ নেতা যখন যেকোনো ভাবে মনোনয়ন নিশ্চিতে তৎপর, তখন তাকে টেক্কা দিতে তৈরি আওয়ামী লীগের তিন হেভিওয়েট প্রার্থী। তারা হলেন- চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দীন আহমদ।
অন্যদিকে তরুণ্যের চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছেন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান। তার সঙ্গে মনোনয়ন দৌড়ে আছেন তারই রাজনৈতিক শিষ্য নগর বিএনপির সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান ও চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এরশাদ উল্লাহ।
সাতকানিয়ায় দুই জোটেই ফ্যাক্টর জামায়াত!
সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-১৫ আসন বরাবরই নিবন্ধন হারানো দল জামায়াতে ইসলামীর ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এবারও মনোয়ন দৌড়ে ১৪ দলীয় জোট ও ২৩ দলীয় জোটে প্রার্থী নির্বাচনে ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করছে জামায়াত সংস্লিষ্টরা।
একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম-১৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ১৮ জন। এ ১৮ জনের মধ্যে রয়েছেন সাবেক জামায়াত নেতা ও বর্তমান সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীও। বিএনপির ফরম সংগ্রহ করেছেন সাতজন। ফরম সংগ্রহ করেছেন জামায়াতের কারাবন্দি দুই শীর্ষ নেতা ও সাবেক এমপিও।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ১৮ জনের মধ্যে আলোচনায় আছেন- বর্তমান এমপি আবু রেজা নদভী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেব।
সংসদ সদস্য নদভীর আত্মীয়–স্বজনরা জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ কারণে আওয়ামী লীগের অনেকেই তাকে মেনে নিতে পারছেন না। আবার আওয়ামী লীগের যারা আছেন, তারাও ঐক্যবদ্ধ নন।
সবচেয়ে যে ঘটনাটি আলোচনার জন্ম দিয়েছে সাতকানিয়ায়, সেটি হলো একই আসনে জামায়াতের কারাবন্দি দুই শীর্ষ নেতা ও সংসদ সদস্যের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ। ক্যাডার ভিত্তিক সংগঠন হওয়ায়, স্বভাবতই ধারণা করা হয় যে, জামায়াতের সবকিছু তাদের কেন্দ্র নির্ধারণ করে, ব্যক্তি প্রধান্য পায় না। কিন্তু জামায়াতের রাজনৈতিক ইতিহাসে এবারই প্রথম কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থিতার নজির মিলল। জামায়াতে ইসলামের চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান দুই নেতা একই আসন থেকে মনোনয়নপত্র কেনায় দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।
চট্টগ্রাম-৫ আসনে (হাটহাজারী) বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও ২৩ দলীয় জোটের সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম এবং মহাজোটের আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও আওয়ামী লীগের এম. এ সালাম
জানা যায়, দুই হেভিওয়েট প্রার্থী কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য শামসুল ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামের কর্মপরিষদ সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী, কেউই চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসন ছাড়তে রাজী নন। দুজনেই একই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।
১৯৯১ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে আসনটিতে জামায়াতের শাহজাহান চৌধুরী বিজয়ী হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন জামায়াতের আ ন ম শামসুল ইসলাম। সম্প্রতি কেন্দ্র থেকে আ ন ম শামসুল ইসলামকে দলের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শাহজাহান চৌধুরীকেই দলীয় প্রার্থী ঘোষণার দাবি জানানো হচ্ছে।
স্থানীয় জামায়াত নেতারা জানান, আসনটিতে নির্বাচন করতে কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর আ ন ম শামসুল ইসলামকে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। একই আসনে জনৈক আবদুর রাজ্জাক শাহজাহান চৌধুরীর পক্ষে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। বিষয়টি উপজেলা পর্যায়ের নেতারা জানেন না।
সাতকানিয়া উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা আবুল ফয়েজ জানান, চট্টগ্রাম-১৫ আসনে নির্বাচনে করতে কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর শামসুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম-১০ আসনে শাহজাহান চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম-১৫ আসন থেকে শাহজাহান চৌধুরীর মনোনয়ন ফরম নেয়ার বিষয়টি জানা নেই।
হাটহাজারীতে হেভিওয়েটদের গলার কাঁটা জোট-মহাজোট
হাটহাজারী (চট্টগ্রাম-৫) আসনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুদলেই হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন। তবে প্রধান দুদলেরই মনোনয়ন প্রত্যাশীদের গলার কাঁটা হয়ে আছেন জোট-মহাজোটের প্রার্থীরা। জোট ভিত্তিক নির্বাচন হলে এখানে দুই বড় দলকে আসনটি তাদের শরিকদের ছেড়ে দিতে হবে, এটা প্রায় নিশ্চিত।
জাতীয় পার্টি যদি এবারও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটে থাকে তবে এখানে বঞ্চিত হবেন মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগ নেতারা। আর বিএনপির জোটে যদি কল্যাণ পার্টি থাকে তবে একই অবস্থা হবে দলটির নেতাদের ক্ষেত্রেও।
২০০৮ ও ২০১৪ সালে হাটহাজারী থেকে মহাজোটের এমপি জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। বর্তমান সরকারে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। তাই আগামী নির্বাচনেও জোটের প্রার্থী হবেন তিনি, এটা প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু এখনও হাল ছাড়তে নারাজ আওয়ামী নেতারা। যাদের মধ্যে রয়েছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম. এ সালাম, সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, যুগ্ম সম্পাদক ইউনুস গণি চৌধুরী। শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি মহাজোটে থেকে নির্বাচন করলে কপাল পুড়বে এসব হেভিওয়েট প্রার্থীর।
বারবার এ আসনে বিজয়ী হয়ে আসা বিএনপি এবার হাটহাজারীতে মধুর সমস্যায় আছে। দলীয় বিরোধের পাশাপাশি জোটের শরিকরা এখন তাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবার ২৩ দলীয় জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম এখান থেকে মনোনয়ন পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে নির্বাচন করতে প্রস্তুতি শুরু করেছেন সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। ইতোমধ্যে তিনি জোট থেকে গ্রিন সিগনালও পেয়েছেন।
যদিও এ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হকের মতো হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন। যদি সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ২৩ দলের মনোনয়ন পান, তবে কপাল পুড়বে বিএনপির এসব শীর্ষ নেতার।
তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বড় শর্ত। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পেলে হাটহাজারীতে বিজয়ী হবে বিএনপি। আমি মনোনয়ন পেলে নেত্রীর আস্থার প্রতিদানও দিতে পারব।'
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘২০০৮ সালে আমি নির্বাচন করেছি। আসছে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলে সেটি হবে দ্বিতীয়। ২৩ দলীয় জোটনেত্রীর সম্মতিতে হাটহাজারীতে সময় ও শ্রম বিনিয়োগ করেছি। এ আসনে জোট থেকে প্রার্থী হতে চাই। তবে বড় দল হিসেবে স্থানীয় একাধিক রাজনীতিবিদ মনোনয়ন চাইতে পারেন। এটা দোষের কিছু নয়। এটি সুষ্ঠু গণতন্ত্র চর্চার একটি অংশ।’
আবু আজাদ/এমএআর/এমএস