নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বাদ পড়ছেন কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সরকারদলীয় এমপি আবদুর রহমান বদি। ওই আসনে নৌকার মাঝি হচ্ছেন তার স্ত্রী শাহীনা আক্তার চৌধুরী।
Advertisement
বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ-বিদেশে দলকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে দলের কয়েকটি সূত্র বিষয়টি জানিয়েছে।
এই সিদ্ধান্তে শেষমেশ মাইনাস হলো দেশজুড়ে নানা বিতর্ক নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনায় থাকা সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি।
সোমবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির একান্ত সহকারী হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, দলের নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত মতে এবারে উখিয়া-টেকনাফ আসনে নৌকার টিকিট পাচ্ছেন বর্তমান এমপির স্ত্রী শাহীনা আক্তার চৌধুরী, যা সম্প্রতি সময়ে অনেকটা নিশ্চিত।
Advertisement
এই আসনে নৌকার ধারাবাহিক বিজয় ধরে রাখতে এবং দলকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রেখে আরও শক্তিশালী করতে প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এটি সময়োপযোগী বলেও মনে করছেন উখিয়া-টেকনাফসহ কক্সবাজারের মানুষ।
স্থানীয় সূত্রমতে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দুই মেয়াদে শিক্ষক পেটানো, প্রকৌশলী ও আইনজীবীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত এবং ইয়াবা ইস্যুতে তুমুল সমালোচনায় পড়েন আবদুর রহমান বদি।
পাশাপাশি একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে নিজে যেমন বিতর্কে জড়িয়ে যান ঠিক তেমনি দলকেও ফেলেন নানা বেকায়দায়। যে কারণে প্রতিনিয়তই তাকে নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগদের মধ্যে ছিল বিরোধিতা ও অসন্তোষ।
তবে সব কিছুর ঊর্ধ্বে ওঠে আমজনতার কাছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল আবদুর রহমান বদি এটিও অস্বীকারের কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করেন উখিয়া-টেকনাফের অসংখ্য মানুষ। তাদের মতে, আগামী নির্বাচনে বদির গ্রিন সিগন্যাল ছাড়া এই আসনে জয়লাভ করা যাবে না। যে কারণে নেত্রী সব বুঝেই তার স্ত্রীকে নৌকার টিকিট দিচ্ছেন।
Advertisement
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নৌকার মাঝি হয়ে এ আসন থেকে ২০০৮ ও ২০১৪ সালে পরপর দুবার জাতীয় সংসদে যান আবদুর রহমান বদি। টানা ১০ বছর সংসদ সদস্য থাকার কারণে বিএনপির দুর্গে নিজের অবস্থান পোক্ত করেন তিনি।
কিন্তু ইয়াবা ও অন্যান্য ইস্যুতে তৈরি হওয়া বিতর্কগুলো শেষ পর্যন্ত বদির জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকার পরও নিজের নৌকা নোঙর করছে স্ত্রীর ঘাটে।
জানা যায়, এই আসন থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৭ জন প্রার্থী নৌকার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ৪-৫ জন প্রার্থী দলগতভাবে শক্তিশালী। কিন্তু দলীয় অবস্থান শক্ত হলেও প্রায় সবারই জনপ্রিয়তায় ভাটা।
কিন্তু এমপি বদির স্ত্রী শাহীনা আক্তার চৌধুরী এক্ষেত্রে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে। উখিয়ার বৃহত্তর রাজনৈতিক পরিবারের মেয়ে তিনি। উখিয়াজুড়ে তাদের রাজনৈতিক প্রভাব বিদ্যমান।
সবদিক বিবেচনা করে শাহীন চৌধুরীকেই দলটি মনোনয়ন দেয়ার কারণ হলো তাকে মনোনয়ন দিলে একদিকে যেমন দল পরিচ্ছন্ন ইমেজের প্রার্থী পাবে, অন্যদিকে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন নিয়েও বিতর্কে পড়তে হবে না দলকে।
উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুল আলম মাবু বলেন, বর্তমানে নৌকার টিকিট পেতে যাচ্ছেন শাহীনা আক্তার চৌধুরী। তিনি শুধু এমপি বদির স্ত্রী নন, জন্ম থেকেই আরও অনেক বড় পরিচয় বহন করেন তিনি।
মূলত শাহীনা চৌধুরী উখিয়ার ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তার বাবা নুরুল ইসলাম চৌধুরী ঠান্ডা মিয়া ছিলেন উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তার বড় ভাই হুমায়ুন কবির চৌধুরী জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্য এবং আওয়ামী লীগ নেতা।
ছোট ভাই জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তার চাচা হামিদুল হক চৌধুরী উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং উখিয়া বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ।
চাচি অর্থাৎ হামিদুল হক চৌধুরীর স্ত্রী নিগার সুলতানা উখিয়া উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। এছাড়া পারিবারিকভাবে উখিয়া-টেকনাফের ঐতিহ্যঘেরা কয়েকটি পরিবারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি পরিবারে জন্ম নেয় শাহীনা আক্তার চৌধুরী। তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়ান। পরে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহীনা আক্তার চৌধুরী বলেন, দল থেকে এখনও মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে আমি আশাবাদী। কারণ আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে নৌকার মনোনয়ন দেন, তাহলে নৌকাকে বিজয়ী করার জন্য যা করার সব করব।
এএম/আরআইপি