দেশজুড়ে

জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার আগ্রহ নেই ফুলছড়ির নেতাদের

যমুনা নদী বেষ্টিত ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত গাইবান্ধা-৫ আসন। ফুলছড়ির সাতটি ইউনিয়নের সবগুলোই পড়েছে নদীর সীমানায়। দুই লক্ষাধিক মানুষের ৩১৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ফুলছড়ি উপজেলা হলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো কোনো হেভিওয়েট প্রার্থী নেই এ উপজেলা থেকে। এর বদলে আছে সাঘাটা থেকে হেভিওয়েট প্রায় ডজনখানেক প্রার্থী।

Advertisement

ফলে ফুলছড়ির প্রধান সমস্যা নদী ভাঙন হওয়ায় চরাঞ্চলের এসব মানুষদের হয় না ভাগ্যের পরিবর্তন ও উন্নয়ন। চরাঞ্চলগুলোর ভাঙনরোধে কখনও নেয়া হয়নি কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাও। আর তাই জাতীয় সংসদের মতো বড় নির্বাচনে যদি ফুলছড়ি থেকে কোনো হেভিওয়েট প্রার্থী থাকতো তাহলে ভাঙনরোধসহ চরবাসীর জীবনে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতো বলে মনে করেন ফুলছড়ির মানুষ।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ১৯১৪ সালে গাইবান্ধা থানা বিভক্ত হয়ে দক্ষিণের দিকে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে স্থাপিত হয় ফুলছড়ি থানা। ফুলছড়িতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়াও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ফুলছড়ির নদী বেষ্টিত ইউনিয়নগুলোর মধ্যে ফুলছড়ি, এরেন্ডাবাড়ী, ফজলুপুর সম্পূর্ণটা ও কঞ্চিপাড়া, উড়িয়া, গজারিয়ার প্রায় অর্ধেকটা এবং উদাখালী ইউনিয়নের সামান্য কিছু অংশ রয়েছে নদীতে।

জাতীয় সংসদ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাঘাটার ওয়ালিউর রহমান রেজা, ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ফুলছড়ির রুস্তম আলী, ১৯৮৬ সালের ৭ মে, ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ ও ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সাঘাটার ফজলে রাব্বী মিয়া, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সাঘাটার মতিয়র রহমান টুকু, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন আবারও ফজলে রাব্বী মিয়া, ২০০১ সালের ১ অক্টোবর ময়মনসিংহের রওশন এরশাদ, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে পুনরায় ফজলে রাব্বী মিয়া সাংসদ নির্বাচিত হন।

Advertisement

১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন ফুলছড়ির দেলুয়াবাড়ী চরের বিএনপি নেতা রুস্তম আলী। তার ছেলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহামুদ্দুন নবী টিটুল। তিনি ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দুইবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও কখনও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেননি। গজারিয়ায় বাড়ি ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত।

তাই যতদিন ফজলে রাব্বী মিয়া নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ততদিন হাবিবুর রহমান এ আসনে নির্বাচন করবেন না বলে মনে করেন উপজেলার মানুষ। এ ছাড়া উড়িয়া ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামে বাড়ি জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট হামিদুল হক ছানা’র। গাইবান্ধা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও হামিদুল হক ছানা কখনও গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে নির্বাচন করেননি। ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ফুলছড়ির এরেন্ডাবাড়ীর বিএনপির হাসান আলী দু-বারই পরাজিত হয়েছেন।

অপরদিকে সাঘাটার ৬ বারের সাংসদ ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপনসহ রয়েছেন প্রায় ডজনখানেক হেভিওয়েট প্রার্থী।

বিভিন্ন সময় চরাঞ্চলগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, নদী বেষ্টিত চরাঞ্চলগুলোতে বসবাসকারী পঞ্চাশোর্ধ মানুষেরা কতবার যে নদী গর্ভে বসত ভিটা হারিয়েছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান কারোরই আর মনে নেই। শুধু জানতে চাইলে ধারণার উপরেই অনুমান করে বলতে চেষ্টা করেন তারা। এই উপজেলার মূল সমস্যা নদী ভাঙন। নেই পর্যাপ্ত পাকা রাস্তা, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান, ব্রিজ-কালভার্ট। চরে নেই একটিও সরকারি উচ্চ বালক ও বালিকা বিদ্যালয় এবং কলেজ। শিক্ষক ও ডাক্তাররা যথাসময়ে পৌঁছান না কর্মস্থলে। আবার নির্ধারিত সময়ের আগেই কর্মস্থল ত্যাগ করেন তারা।

Advertisement

বিএনপি নেতা মাহামুদ্দুন নবী টিটুল জাগো নিউজকে বলেন, আমার বাবা গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে তিনবার সংসদ নির্বাচন ও আমি চেয়ারম্যান পদে দুইবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট করেছি। ফুলছড়ির মানুষ একত্রিত না হলে কখনও এ উপজেলা থেকে কেউ নির্বাচিত হতে পারবে না। ফুলছড়ি থেকে কেউ সাংসদ হলে এ উপজেলার অনেক উন্নয়ন হবে। এবার আমি গাইবান্ধা-২ (সদর) আসন থেকে দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছি।

এ বিষয়ে ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ফুলছড়িতে মেইনল্যান্ডের থেকে চরের উন্নয়ন কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই। এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়ন শতভাগ বিদ্যুতায়ন, ফুলছড়িতে চারতলা বিশিষ্ট মাদরাসা ভবন নির্মাণ ও ফজলুপুরে সোলার প্লান্ট চালু করা হয়েছে। চরে পাকা রাস্তা ও ব্রিজ করা হয়েছে।

নদী ভাঙনের বিষয়ে তিনি বলেন, চরে নদী ভাঙনরোধে কখনও কোনো কাজ হয়নি। চরে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো কাজ করে না। এবার সংসদ নির্বাচনে ফুলছড়ি থেকে কোনো প্রার্থী নেই। আগামীতে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কি-না জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান বলেন, আমি কেন মনোনয়ন চাইবো। ডেপুটি স্পিকার আছেন, তিনিই অনেক ভালো কাজ করছেন। ওসবে আমি যাব না।

এমএএস/এমএস