ব্রিজ না থাকায় খাল পাড় হয়ে স্কুলে যাওয়ার সময় পরনের কাপড় ভিজে যায় তাদের। এ কারণে তারা স্কুলে যাওয়ার সময় ব্যাগে অতিরিক্ত কাপড় নিয়ে যায়।একটি ব্রিজ না থাকায় এভাবেই দিনের পর দিন কষ্ট করে স্কুলে যাচ্ছে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার ৫টি গ্রামের শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের মতো করেই ওইসব গ্রামের অভিভাবকদেরও হাট বাজারে যেতে হয় বাড়তি কাপড় নিয়ে। গ্রামগুলো শহরের খুব কাছাকাছি হলেও ওই গ্রামের মানুষগুলো যেন বিচ্ছিন্ন কোনো জনপদের বাসিন্দায় পরিণত হয়েছে। ওই গ্রামে নেই কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসা কেন্দ্র এবং চলাচলের জন্য নেই যোগাযোগ ব্যবস্থা। সবমিলে নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত তারা।মাটিরাঙ্গা উপজেলা সদরের বুক চিরে প্রবাহিত ধলিয়া খালের পূর্ব পাশে মোহাম্মদপুরসহ পাঁচ গ্রামের ছয় সহস্রাধিক মানুষ বর্ষাকাল এলেই গৃহবন্দি হয়ে পড়ে। এ কারণে ওই অঞ্চলের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার হাজার হাজার মানুষ বর্ষাকালে হাট-বাজার কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসতে পারে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার পার্শ্ববর্তী মোহাম্মদপুর, বড়ঝলাসহ আশপাশের পাঁচ গ্রামের ছয় সহস্রাধিক লোকজন উপজেলা সদরে যাতায়াত, হাট বাজার, চিকিৎসা এবং স্কুল-কলেজে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে মাটিরাঙ্গা হাসপাতাল সড়কটিই একমাত্র ভরসা। উক্ত সড়কের ধলিয়া খালের ওপর কোনো সেতু বা ব্রিজ না থাকায় ওই এলাকার লোকজনকে বর্ষাকালে চরম দুর্ভোগে পোহাতে হয়। কেননা ওই এলাকায় কোনো বাজার বা স্কুল নেই। মাটিরাঙ্গা সেনা জোন কর্তৃপক্ষ ওই এলাকার হাজার হাজার অধিবাসীর নিয়মিত দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে দুই বছর আগে খালের উপর লোহার রড দিয়ে একটি ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ করে দিলেও সাম্প্রতিক টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তা পানির স্রোতে তলিয়ে গেছে। ফলে পাঁচ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগে নতুনমাত্রা যুক্ত হয়েছে। খালটির বাস্তব অবস্থা ও জনদুর্ভোগ সরেজমিনে দেখতে সম্প্রতি খালের পাড়ে গিয়ে দেখা যায় স্থানীয়রা বুক সমান পানি দিয়ে তাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে বাজারে আসছে। আর শিক্ষার্থীরা বই, খাতা মাথায় নিয়ে খাল পাড় হচ্ছে। এ সময় কথা হয়, মোহাম্মদপুর ও বড়ঝলা গ্রাম থেকে আসা দুই শিক্ষার্থী ফাহিমা আকতার ও ইব্রাহিম খলিল এর সাথে।তারা জানায়, এ সড়কের ৫টি গ্রামের কয়েকশ শিক্ষার্থী বর্ষাকালে স্কুলে আসতে পারে না। শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত পোষাক সাথে নিয়ে খাল পাড়ি দিতে হয় এমন অভিযোগ করে কেউ কেউ বলেন, প্রতিদিন এভাবে স্কুলে আসা-যাওয়া কষ্টকর! কেউ আমাদের কষ্টের কথা বিবেচনা করেনি। ফলে আমরা বছরের পর বছর এভাবেই যাতায়াত করছি।মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা সরকার মো. আবুল বাসার আক্ষেপ করে বলেন, ধলিয়া খালের পূর্বপাশে কোনো জন-মানব বসবাস করছে বলেই কেউ মনে করে না! কোনো জনপ্রতিনিধির খোঁজ খবর নিতে আমরা দেখি না। খালের ওপর সাঁকো না থাকায় কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বর্ষাকালে নষ্ট হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীরা এ সময় স্কুল-কলেজে যেতে পারে না।মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা শ্রমিক মো. আবদুল আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রবল বর্ষায় আমরা খাল পাড়ি দিয়ে বাজারে যেতে পারিনা বলে কাজ করতে পারিনা। তাই আমাদের ভাগ্যে ভাতও জোটেনা। আমরা পরিবারের অন্যদের নিয়ে এসময় অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটায়। তার উপর রয়েছে সাপ্তাহিক কিস্তির জ্বালা।এ বিষয়ে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র আবু ইউসুফ চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই স্থানীয় কাউন্সিলরের মাধ্যমে একটি সাঁকো করে দিয়েছি। এক সময় সেখানে সেনা জোনের পক্ষ থেকেও রডের ঝুলন্ত সেতু করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডে ব্রিজ নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় বরাদ্ধ পেলে চলতি অর্থ-বছরে ব্রিজটি নির্মাণ করা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন তিনি।এমএএস/আরআইপি
Advertisement