নিম্নপদস্থ একজন কর্মীর জীবন বাঁচাতে সাধ্যের সবটুকুই করলেন যশোরের জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল। সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ার পর যশোরের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা এবং বিশেষায়িত হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসাপাতালে (সিএমএইচ) পাঠালেন তিনি। আর এর মাধ্যমে নিয়ে গেলেন দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবার মাঝে।
Advertisement
যদিও জেলা প্রশাসনের কর্মী আব্দুল হালিম এখনও জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। খুবই জরুরি একটি অপারেশনের জন্য এখন অপেক্ষা করছেন সিএমএইচ’র চিকিৎসকরা।
যশোর সদর উপজেলার পাঁচবাড়ীয়া গ্রামের কৃষক হাশেম আলীর ছেলে আব্দুল হালিম শার্শা উপজেলা ভূমি অফিসের এমএলএসএস। গত বুধবার প্রতিদিনের মতো অফিসের কাজ শেষ করে শার্শা বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন আব্দুল হালিম। রাস্তা পার হওয়ার সময় বেনাপোলের দিক থেকে বেপরোয়া গতিতে আসা মোটরসাইকেল তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। মাথায় প্রচণ্ড আঘাতের কারণে শুরু হয় রক্তক্ষরণ।
স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মন্ডল তাকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করেন।
Advertisement
যশোরের এনডিসি প্রীতম সাহা জানান, আব্দুল হালিমের দুর্ঘটনার খবর জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গেই জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল তার খোঁজ-খবর নেন।
চিকিৎসকরা জানান, যশোরে তার সুচিকিৎসা সম্ভব নয়। দ্রুত ঢাকায় স্থানান্তর প্রয়োজন। কিন্তু জেলায় লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রোগী নিয়ে যাওয়ার মতো অ্যাম্বুলেন্স নেই। শেষ ভরসা বিমান বাহিনীর বিশেষায়িত হেলিকপ্টার। কিন্তু এভাবে তাকে ঢাকায় নেয়া পরিবারের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
এমন পরিস্থিতিতে আব্দুল হালিমের চিকিৎসা ভার কাঁধে তুলে নেন জেলা প্রশাসক। ওই রাতেই দ্রুত তাকে নিয়ে যাওয়া হয় যশোর সিএমএইচ’এ। সেখানে দ্রুত তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। সিটি স্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। এরপর আঘাতে ক্ষরণজনিত রক্ত অপসারণ করা হয়। পরে জেলা প্রশাসক ঢাকা সিএমএইচ থেকে বিশেষ মেডিকেল টিমের সহায়তায় বিমান বাহিনীর সহযোগিতায় বৃহস্পতিবার দুপুরে হালিমকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
হালিমকে ঢাকা সিএমএইচ’এ নিয়ে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। এখন তার একটি জরুরি অপারেশন দরকার। কিন্তু তার শারীরিক সক্ষমতা না আসায় চিকিৎসকরা অপেক্ষা করছেন।
Advertisement
এনডিসি প্রীতম সাহা আরও জানান, জেলা প্রশাসক মহোদয় দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে হয়তো ঢাকা সিএমএইচ পর্যন্তই হালিমকে পৌঁছানো যেতো না। কারণ যশোর সিএমএইচ থেকেই চিকিৎসকরা বলেছেন আর আধঘণ্টা দেরি হলে হয়তো সে সিএমএইচ’এ পৌঁছাতো না। যদিও এখনও হালিমের অবস্থা খুবই সঙ্কটাপন্ন। এজন্য তিনি সকলের কাছে হালিমের জন্য দোয়া চেয়েছেন।
যশোর কালেক্টরেটের নেজারত শাখার নাজির হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, হালিমের জন্য ডিসি স্যার যা করলেন তা আগে কেউ করেছে বলে শোনেননি। হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় পাঠানোর খবরে সবাই অভিভূত। তারা এখন হালিমের জন্য দোয়া করছেন। আল্লাহ যেন তাকে দ্রুত সুস্থ করে দেন।
জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আওয়াল বলেন, পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে যেমন কষ্ট হয় ঠিক তেমনিই অনুভূতি হয়েছিল দুর্ঘটনার খবর শোনার পর। কে কোন পদে আছে সেটা বিবেচ্য নয়, সবার আগে মানুষের জীবন। তিনি শুধু তার জায়গা থেকে অভিভাবকের দায়িত্বটা পালন করেছেন।
মিলন রহমান/এফএ/এমএস