খেলাধুলা

‘খারাপ খেললে আমাদের চোখের পানি কেউ দেখে না’

শেরে বাংলায় টাইগারদের ২১৮ রানের জয়ে শেষ সিরিজ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজে ১-১’এ সমতা। কারো কারো মত, এ জয় সিলেটে ১৫১ রানের পরাজয়ের গ্লানিমুক্তি। আবার কেউ কেউ মনে করেন, পিছিয়ে পড়ে আবার সিরিজ ড্র করাও এক ধরনের কৃতিত্ব।

Advertisement

আসলে কি তাই? এটা কি কৃতিত্ব? না অধঃপতন? ইতিহাসকে সাক্ষী মানলে, এটা অধঃপতন। কারণ, চার বছর আগে ২০১৪ সালে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে সব ম্যাচ জিতে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল টাইগাররা। সেই দলের কাছে প্রথম টেস্ট হার এবং পরের ম্যাচ জিতে সমতা ফিরিয়ে আনা কৃতিত্ব হয় কি করে? বরং অনেকেই এটাকে বিব্রতকর অবস্থা ও অস্বস্তি কাটিয়ে ওঠার ম্যাচ ভাবতেই বেশি আগ্রহি।

এখন প্রশ্ন হলো, টিম বাংলাদেশ এ টেস্ট জয়কে কিভাবে দেখছে? আহত সাকিবের বদলে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এ জয়কে কিভাবে দেখছেন? শেরে বাংলায় টেস্ট শেষে সংবাদ সম্মেলনেও উঠল এ প্রশ্ন।

রিয়াদ অবশ্য এক কথায় তার উত্তর দেননি। তার সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন হলো, ‘বাংলাদেশ প্রত্যাশিত জয় পেয়েছে। প্রথম টেস্টে পারফরমেন্স ভাল ছিল না, ব্যাটিংয়ে শৃঙ্খলাবোধ অনেক কম ছিল। এ টেস্টে সে ঘাটতি কমেছে অনেক এবং নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছে।’ যেহেতু এটা জয়, তাই ভাল লাগা, আনন্দিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ খারাপ পারফরমেন্স যেমন কষ্টর জন্ম দেয়, তেমনি ভাল পারফরমেন্স ও সাফল্যও আনন্দের ফলগুধারা বয়।

Advertisement

তাইতো মুখে এমন কথা, ‘যদি আপনি ম্যাচ জয় করেন তাহলে অবশ্যই আপনার আনন্দ লাগা উচিত। ম্যাচ জিতলে অতটুকু অধিকার থাকে আনন্দ প্রকাশ করার। আমরা যখন খারাপ খেলি, ড্রেসিং রুমে মনটা আমাদেরই বেশি খারাপ হয়। আমাদের চোখের পানিটা কেউ দেখে না। আমরা এটা কাউকে বলিও না।’

প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়েকে ভাল ক্রিকেট উপহারের জন্য কৃতিত্ব দিতে ভুল হয়নি। তার মূল্যায়ন জিম্বাবুয়েও ভাল ক্রিকেট খেলেছে, ‘সমর্থকদের সবাই চাচ্ছিলো জিম্বাবুয়ের সাথে বাংলাদেশ জিতুক। আমার মনে হয় জিম্বাবুয়েকেও ক্রেডিট দিতে হবে, ওরা ভাল ক্রিকেট খেলেছে। ব্যাটিং ও বোলিং দুই বিভাগের ভাল করেছে।’

নিজ দলের পারফরমেন্সের মূল্যায়ন করতে গিয়ে রিয়াদকে সন্তুষ্টই মনে হলা। তার প্রমাণ এই কথাতেই মিলবে, ‘টেস্ট ক্রিকেটে ডিসিপ্লিন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম টেস্টে কিছু ডিসিপ্লিনের ঘাটতি ছিল। সেগুলো আমরা করতে পারিনি, যা এই টেস্টে করতে পেরেছি।’

সিলেটে প্রথম টেস্টে করুণ পরিনতির পর নিজ দলকে চাঙ্গা ও অনুপ্রাণিত রাখতে সহযোগিদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। সে কথার উদ্বৃতি টেনে মাহমুদউল্লাহ বলেন, ‘প্রথম টেস্ট হারের পর আমরা খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। তাই আমাদের টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে সবাই বেশ ডিটারমাইন্ড ছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম তার বহিঃপ্রকাশ মাঠে দেখাতে। আমার মনে হয় আমরা কিছুটা হলেও করতে পেরেছি।’

Advertisement

ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ কি এই ম্যাচ শেষে খানিক স্বস্তি ফিরে পেয়েছে? এ প্রশ্নের জবাবে এ টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান মাহমুদউল্লাহ অনেক কথার ভিড়ে বুঝিয়ে দেন, ‘হ্যাঁ, কিছুটা রিলিফ বলতে পারেন। কারণ আমার শেষ পাঁচ টেস্টে কোন ভাল পারফরম্যান্স ছিল না, কোন ফিফটি ছিল না। আমি এই ফরম্যাটের ক্রিকেটে স্ট্রাগল করছিলাম। আমি চাচ্ছিলাম, আমার জায়গাটা মূল্যায়ন করতে পারে। কারণ অধিনায়ক হিসেবে সবসময় সামনে থেকে পারফর্ম করতে হয়। ওই দায়বদ্ধতা আমার মধ্যে ছিল। আলহামদুলিল্লাহ যে, আমি দলের জন্য কন্ট্রিবিউট করতে পেরেছি। তবে আমার এখনও উন্নতির অনেক জায়গা আছে। আমি চাই এই ফরম্যাটে আরও ধারাবাহিক হতে।’

সিলেটের শ্রী-হীন পারফরমেন্সের পর ভক্ত-সমর্থকরা হতাশায় নীল হয়েছিলেন। অধিনায়ক হিসেবে মাহমুদউল্লাহর দুঃখও ছিল প্রচন্ড। তাই তো জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এসেছিল, একটি দুঃখ ভরা কথা। মনের দুঃখে বলেছিলেন, ‘এভাবে টেস্ট খেলার মানে হয় না।’

এখন ঢাকা টেস্টে পারফরমেন্সর উন্নতি এবং বড় জয়ের পরও রিয়াদের মনে হয় অবশ্যই টেস্ট খেলার মানে আছে। এমন পারফরমেন্স হলে টেস্ট খেলার যৌক্তিকতাও আছে যথেষ্ট। সংবাদ সন্মেলনে প্রশ্ন উঠল, এখনো কি সেই মনোকষ্ট আছে, এ টেস্টে ২১৮ রানের দারুণ জয়ের পরও কি মনে হয় টেস্ট না খেলাই ভাল?

ওই প্রশ্নের জবাবে রিয়াদ বলেন, ‘হ্যাঁ যদি আমরা প্রথম টেস্টের মত খেলি, তাহলে অবশ্যই মানে হয় না। আবার যদি আপনি এই টেস্টের কথা চিন্তা করেন, যদি আমরা এমন মানসিকতা দেখাতে পারি এবং কাজে কর্মে সেটা দেখাতে পারি, তাহলে অবশ্যই মানে হয়।’

তার ডিক্ল্যারেশন বা ইনিংস ঘোষণা নিয়ে কথা হয়েছে। অনেকেই বলেছেন ইনিংস ঘোষণাটি আরও আগে আসতে পারতো। রিয়াদ অবশ্য তা নিয়ে কোনরকম মন্তব্য করেননি। তার মূল্যায়ন, ‘আমার মনে হয় পুরো পাঁচ দিনই উইকেট খুবই ভাল ছিল। আজকের দিনটিও যদি খেয়াল করেন, প্রথম ৩০ মিনিট কিছুটা এদিক-সেদিক টার্ন হয়েছে, এরপর মিরাজ এসে দুটি উইকেট নিয়েছে। আমরা ওই মোমেন্টামের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। একটু রাফ ছিল, আমরা উইকেট থেকে যতটা স্পিন, বাউন্স পাওয়ার আশা করছিলাম সেটা পাইনি। উইকেট অনেক ভাল ছিল।’

নিজ দলের বোলারদের মূল্যায়ন করতে গিয়ে অভিষেক হওয়া খালেদকে খানিক দূর্ভাগা বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ‘খালেদ তার প্রথম ম্যাচের তুলনায় অনেক ভাল পারফর্ম করেছে। হি ওয়াজ অ্যা বিট আনলাকি, তার বোলিংয়ে কিছু সহজ ক্যাচ মিস করেছি, নয়তো তার বোলিং ফিগারটা আরও সুন্দর দেখাতো। মাঝে-মাঝে ভাগ্যও পাশে থাকা লাগে, আমার মনে হয় মোস্তাফিজ ভাল বোলিং করেছে। ভাল জায়গায় বোলিং করেছে। আর স্পিনাররা, মিরাজ-তাইজুল আউটস্ট্যান্ডিং পারফর্মার।’

এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম