বিশেষ প্রতিবেদন

১৮০ সদস্য হারিয়েছে সংসদ

স্বাধীনতার পর দশটি সংসদের সাবেক ও বর্তমান মিলে ১৮০ এমপিকে হারিয়েছে দেশ। এর মধ্যে দশম সংসদের দুজন মন্ত্রী, একজন প্রতিমন্ত্রী ও একজন বিরোধীদলীয় হুইপসহ ১৫ জন এমপি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১২ জন আওয়ামী লীগের। তিনজন জাতীয় পার্টির সদস্য। 

Advertisement

হত্যা করা হয়েছে এক সংসদ সদস্যকে। একই আসনে মারা গেছেন দুই সংসদ সদস্য। ১৪টি আসনের উপ-নির্বাচন হলেও সময় স্বল্পতার কারণে এখনও আসনশূন্য রয়েছে একটিতে। 

উপ-নির্বাচনগুলোর কোনো কোনোটিতে মৃত এমপির স্ত্রী, কারও ছেলে, আবার কারও ভাইকে মনোনয়ন দিয়ে সংসদে নেয়া হয়েছে। একটি ছাড়া সবগুলো উপ-নির্বাচনে যে দলের এমপি মারা গেছেন সেই দলের এমপিই আবার সংসদে গেছেন।

আরও পড়ুন >> স্বাধীনতার পর ১৪১৪ আইন পাস, কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন

Advertisement

দশম সংসদের ২৩টি অধিবশন শুরুর দিন উত্থাপিত শোক প্রস্তাবের বই এবং সংসদ লাইব্রেরিতে রাখা সংসদের কার্যপ্রবাহ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। 

সংসদের আইন শাখা-২ সূত্রে জানা যায়, দশম সংসদ হারিয়েছে সুনামগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত বর্ষীয়ান পার্লামেন্টারিয়ান ও বিশিষ্ট তার্কিক সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে। তিনি একসময় এ সরকারের রেলমন্ত্রীও ছিলেন। এছাড়া মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন সৈয়দ মহসিন আলী (মৌলভীবাজার-৩), মোহাম্মদ ছায়েদুল হক (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১) এবং প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন (ময়মনসিংহ-১)। 

প্রতিমন্ত্রী মর্যাদার বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ কুড়িগ্রাম-২ আসনের জাতীয় পার্টির এমপি মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে হারায় এ সংসদ। মারা যাওয়া আওয়ামী লীগের অন্য এমপিদের মধ্যে রয়েছেন গাইবান্ধা-১ আসনের মো. মন্জুরুল ইসলাম লিটন। ২০১৬ সালের শেষ প্রহরে নিজ বাড়িতে নির্মমভাবে তাকে হত্যা করা হয। ওই আসনের উপ-নির্বাচনে এমপি হন একই দলের গোলাম মোস্তফা আহমদ। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনিও মারা যান। 

এছাড়া সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের মো. ইসহাক হোসেন তালুকদার, মাগুরা-১ আসনের মোহাম্মদ সিরাজুল আকবর, খুলনা-৪ আসনের এস এম মোস্তফা রশদি, বরিশাল-৫ আসনের মো. শওকত হোসেন, টাঙ্গাইল-৮ আসনের শওকত মোমেন শাহজাহান, ময়মনসিংহ-৩ আসনের মজিবুর রহমান ফকির ইন্তেকাল করেন।

Advertisement

জাতীয় পার্টির কুড়িগ্রাম-৩ আসনের এ কে এম মাঈদুল ইসলাম এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের মো. নাসিম ওসমান মারা যান। প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদার বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ কুড়িগ্রাম-২ আসনের এমপি মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে হারায় এ সংসদ। ১৩ আগস্ট মারা যাওয়ার পর আসনটিতে আর উপ-নির্বাচন দিতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। 

নবম সংসদে মারা যান ১১ সদস্য

নবম জাতীয় সংসদের ১০ সদস্য মারা যান। তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রাদেশিক সদস্য, কেউ আবার গণপরিষদের সদস্য ছিলেন। 

মারা যাওয়া এমপিরা হলেন- আওয়ামী লীগের মিজানুর রহমান, সংরক্ষিত মহিলা আসনের বেগম সালেহা মোশাররফ, আ এ এন মাহফুজা খাতুন (বেবী মওদুদ), সাবেক মন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ, অধ্যাপক ডা. এম এ মান্নান, আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য খান টিপু সুলতান, কর্নেল (অব.) এ এ মারুফ সাকলান ও এ বি এম আবুল কাসেম।

বিএনপির এমপিদের মধ্যে রয়েছেন- এম কে আনোয়ার ও মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন। জাতীয় পার্টির এমপিরা হলেন- মজিবর রহমান ও জাফরুল হাসান ফরহাদ। 

স্বাধীনতার পর সাবেক এমপিদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ৪৫ জন, বিএনপির ৪৮ জন, জাতীয় পার্টির ৩১ জন, প্রাদেশিক পরিষদের আটজন, গণপরিষদের ১০ জন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) চারজন, সিপিবি, জাতীয় পার্টি (জেপি), জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), কমিউনিস্ট পার্টি, মুসলিম লীগ, সম্মিলিত বিরোধীদল ‘কপ’ এর একজন এবং স্বতন্ত্র দুজন সদস্য মারা যান। 

আওয়ামী লীগ হারিয়েছে যাদের 

দলটির সাবেক উপ-রাষ্ট্রপতি এ কে এম নুরুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী কল্পরঞ্জন চাকমা ও মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন আতা উদ্দিন খান, মোছলেম উদ্দিন খা ও কুরবান আলী। 

এছাড়া গোলাম মুর্শেদ ফারুকী, মো. শাহ্জাহান, মির্জা সুলতান রাজা, এ বি এম মূসা, কে এইচ রশীদুজ্জামান, অ্যাডভোকেট আবদুল আউয়াল মিঞা, অ্যাডভোকেট আব্দুল হাই, কাজী আব্দুর রশীদ, তাহেরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেন, ড. মোহাম্মদ সেলিম, মুহাম্মদ আশরাফ আলী, মো. আলিম উদ্দিন, সুদীপ্তা দেওয়ান, আবদুল লতিফ ভূঁইয়া, আবদুল মালেক, সুলতানুল কবির চৌধুরী, বেগম জাহানারা রব, মো. গোলাম মোস্তফা, প্রফুল্ল কুমার শীল, এম আব্দুর রহিম, অধ্যাপক ডা. এম এ মান্নান, আলী রেজা রাজু, আবদুর রাজ্জাক খান, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা, ডা. আফসার হোসেন মোল্লা, আবুল হোসেন, ধীরেন্দনাথ সাহা, মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ, সাদত আলী সিকদার, অধ্যক্ষ এম এম আবু সাঈদ, শফিকুল ইসলাম খোকা, আমান উল্লাহ্ খান, ড. মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন, শরীফ খসরুজ্জামান, আলফাজ উদ্দিন, মমতাজ আহমেদ, সাদির উদ্দিন আহমদে ও শাহ আজিজুর রহমান মারা যান।

বিএনপি হারিয়েছে যাদের 

সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস, সাবেক স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলী, ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকী, সাবেক মন্ত্রী আ স ম হান্নান শাহ, তরিকুল ইসলাম, এম শামসুল ইসলাম, হারুনার রশিদ খান মুন্নু, ইঞ্জিনিয়ার এল কে সিদ্দিকী, ড. আর এ গণি। প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন- নূরুল হুদা, ফজলুর রহমান পটল ও মো. জিয়াউল হক জিয়া।

আরও পড়ুন >> সংসদীয় কমিটির খরচ ১০ কোটি, উপস্থিতি অর্ধেক

এছাড়া সাবেক হুইপ মাহবুবুল আলম তারা, সাবেক হুইপ রেজাউল বারী ডিনার, উপমন্ত্রী জামাল উদ্দিন আহম্মদ, ডা. এ কে এম মোয়াজ্জেম হোসেন, মো. জয়নুল আবেদীন জায়েদী, অধ্যক্ষ আতিউর রহমান, অধ্যক্ষ আবুল হাছানাত, খন্দকার মাহবুব উদ্দিন আহমাদ, আব্দুর রউফ চৌধুরী, আমানুল্লাহ চৌধুরী, মজিবুর রহমান মঞ্জু, মো. ফজলুর রহমান সুলতান, আবুল কালাম আজাদ, অ্যাডভোকেট এ এফ এম নজমুল হুদা, অধ্যক্ষ একরামুল আলম, মো. আজিজুর রহমান, শহীদুল ইসলাম, মো. মোজাহার হোসেন, মিঞা মো. মনসুর আলী, কে জে হামিদা খানম, কে এম আবদুল খালেক চন্টু, কাজী মো. আনোয়ার হোসেন, এহসান আলী খান, আহসান আহমেদ, ডা. ছানাউল্লাহ, মোজাম্মেল হক, কাজী নুরুজ্জামান, আবদুর রব চৌধুরী, মোজাহার আলী প্রধান, চমন আরা বেগম, সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম, অধ্যক্ষ মো. আব্দুল মান্নান মন্ডল, মো. মর্তুজা হোসেন মোল্লা, আনোয়ারা হাবীব, মোছাম্মত গুলবদন ও শাহ মোস্তানজিদুল হক খিজির।

জাতীয় পার্টি হারিয়েছে যাদের 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদ, মন্ত্রী সরদার আমজাদ হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) এম. শামসুল হক, মামদুদুর রহমান চৌধুরী, এম. মতিউর রহমান। এছাড়া সাবেক এমপি ও মেয়র সরফুদ্দিন আহম্মেদ ঝন্টু, প্রতিমন্ত্রী এ বি এম শাহজাহান।  

এমপিদের মধ্যে রয়েছেন- সৈয়দা রাজিয়া ফয়েজ, দেওয়ান নুরুন্নবী, মোহাম্মদ আজাহারুল হক মোল্লা, মতিউর রহমান, আনসার আহম্মদ, রুহুল আমীন, মোজাম্মেল হোসেন, মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া, চৌধুরী মোতাহার হোসেন, নওশের আলী সরকার, ইয়াকুব আলী চৌধুরী (বাদশা চৌধুরী), ডা. কামরুন নেছা নীলু, ডা. রফিকুল হোসেন, মো. সিরাজুল ইসলাম ভূইয়া, মেজর (অব.) সামসুল হুদা বাচ্চু, মাহবুবুর রব সাদী চৌধুরী, ফিরোজা জামান, অ্যাডভোকেট বদরুদ্দোজা গামা, মোফাজ্জল হোসেন, মো. জয়নুল আবেদীন সরকার, এ কে এম খায়রুজ্জামান, খন্দকার মো. খুররম, মো. ফজলে এলাহী প্রমুখ।

মারা গেছেন প্রাদেশিক পরিষদের যেসব সদস্য

শিক্ষামন্ত্রী এস এম আমজাদ হোসেন, আব্দুল মান্নান সরদার, মো. আবদুল হাকিম, মো. সরওয়ার জাহান মিয়া, আলহাজ ফজলুল করিম, মির্জা তোফাজ্জল হোসেন মুকুল, মো. ইসহাক মিঞা ও মোশাররফ হোসেন। 

মারা গেছেন গণপরিষদের যেসব সদস্য

সাবেক গণপরিষদ সদস্য ডা. মোশারফ হোসেন, মোহাম্মদ আবুল খায়ের, আফছার আলী আহমেদ, সেতাব আলী খান, এ এম আহমেদ খালেক, আব্দুল হাকিম, ফজলুর রহমান ভূইয়া, মো. আনিসুর রহমান, শেখ আলী আহম্মদ ও শাহ মো. আ. রাজ্জাক। 

জাসদ যাদের হারিয়েছে 

সংসদ সদস্য মো. মখলেছুর রহমান, আবদুল মতিন, গাজী আতাউর রহমান ও মুস্তাফিজুর রহমান মারা গেছেন।  এছাড়া সিপিবির সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ইউসুফ, জাতীয় পার্টির (জেপি) আব্দুর রউফ মিয়া, জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) আমেনা বারী, কমিউনিস্ট পার্টির অধ্যাপক সরদার ফজলুল করিম, মুসলিম লীগের ইসমাইল হোসেন তালুকদার, সম্মিলিত বিরোধী দলের ‘কপ’ খন্দকার মফিজুর রহমান এবং স্বতন্ত্র মোজাফফর হোসেন ও আব্দুল গণি মারা যান। 

বর্ষীয়ান রাজনীতিক সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি সংসদে শোক প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা একই সঙ্গে আন্দোলন করেছি, সংগ্রাম করেছি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক সংগ্রাম আমাদের করতে হয়েছে।’ 

“সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বিরোধী দলের ভূমিকায় একাই একশ ছিলেন। তিনি যখন কথা বলতেন বঙ্গবন্ধু সবসময় তাকে উৎসাহ দিতেন। ‘কেউ এতো বলতে পারে না, যে বলতে পারে তাকেই সুযোগ দাও।’ এভাবে বলে বলে তাকে সৃষ্টি করে গিয়েছিলেন।”

এইচএস/এমএআর/জেআইএম