আন্তর্জাতিক

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন স্থগিত

মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইনে ফিরে না যাওয়ার দাবিতে কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গাদের এই বিক্ষোভের পর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়েছে।

Advertisement

গত অক্টোবরে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম দফায় দুই হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে রাখাইনে প্রত্যাবাসন শুরুর কথা ছিল বৃহস্পতিবার। কিন্তু তখন থেকেই এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার শুরু হওয়া নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ দেখা দেয়।

জাতিসংঘের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা রাখাইনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিরোধীতা করে বলছে, সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য এখনো নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা হয়নি। বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি রাখাইনে ব্যাপক সহিংসতার শিকার রোহিঙ্গারাও মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার বিরোধীতা করে আসছে।

আরও পড়ুন : পুরস্কারের দরকার নেই : দম্ভ মিয়ানমারের

Advertisement

মিয়ানমার সীমান্তের কাছে কক্সবাজারের উঁচিপ্রাং শরণার্থী শিবিরে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। এসময় ‘না, না, আমরা ফেরত যাবো না’ বলে স্লোগান দিতেও দেখা যায় তাদের। অনেকের হাতে প্ল্যাকার্ডে দেখা যায়, আমরা ন্যায়বিচার চাই, নাগরিত্ব ছাড়া আমরা কখনোই মিয়ানমারে ফিরে যাবো না।

এর আগে, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্তত তিনজন রয়টার্সকে বলেছে, প্রথম দফায় তালিকাভূক্ত রোহিঙ্গাদের কেউই রাখাইনে ফিরতে রাজি না হওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে প্রত্যাবাসন শুরু হবে না। ওই সূত্রের একজন বলেন, ‘কেউই ফিরে যেতে চায় না।’

বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় দুই হাজার ২০০ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর কথা ছিল। এদিকে, মিয়ানমারের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে প্রস্তুত ছিলেন। তবে বাংলাদেশ বলছে, জোরপূর্বক কাউকে ফেরত পাঠানো হবে না। তালিকাভূক্ত রোহিঙ্গারা আসলেই মিয়ানমারে ফিরতে চায় কি-না তা নিশ্চিত করার জন্য জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা।

আরও পড়ুন : সৌদিতে বন্যায় নিহত ৩০

Advertisement

বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই সূত্র বলছে, কেউই রাখাইনে ফিরতে রাজি নয়; এমন তথ্য জানাতে সীমান্তে মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। তবে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত বেশ কিছু ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সীমান্তের ওপারে একটি অভ্যর্থনা কেন্দ্রে অপেক্ষা করছেন মিয়ানমারের কর্মকর্তারা। গত বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইনে দেশটির রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী। রক্তাক্ত ওই অভিযানের মুখে প্রায় সাত লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা প্রতিবেশি বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।

রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা সেখানে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ নৃশংস অভিযানের অভিযোগ করেছেন। তবে দেশটির সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে বলে দাবি করে আসছে। একই সঙ্গে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আনা সব ধরনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

এসআইএস/পিআর