খেলাধুলা

নিরাপদে থাকতে ৪০০’র বেশি টার্গেট দেয়াই ছিল লক্ষ্য

যদিও আগামীকাল পঞ্চম ও শেষ দিন জিম্বাবুয়ের দরকার ৩৬৭ রান। মাসাকাদজা বাহিনীর হাতে আছে আরও ৮ উইকেট। কিন্তু কাগজে কলমে জিম্বাবুয়ানদের টার্গেট ৪৪৩ রান।

Advertisement

ইতিহাস জানাচ্ছে, টেস্টে এত রানের লক্ষ্য ছোঁয়ার রেকর্ড নেই কারো। তার মানে জিম্বাবুয়েকে জিততে হলে ইতিহাস গড়তে হবে, যে ইতিহাস নেই কারোরই।

ইতিহাস জানাচ্ছে, টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়া করে সবচেয়ে বড় জয়টি ওয়েস্ট ইন্ডিজের । ২০০৩ সালে সেন্ট জোনসে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪১৮ রানের টার্গেট ছুঁয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। রামনরেশ সারওয়ান (১০৫) আর শিবনারায়ণ চন্দরপলের (১০৪) জোড়া সেঞ্চুরিতে ৩ উইকেটের অবিস্মরণীয় জয় পায় ক্যারিবীয়রা। সেটাই টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় টার্গেট ছোঁয়ার বিশ্বরেকর্ড।

এরপর ২০০৮ সালের ২১ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পার্থে চতুর্থ ইনিংসে ৪১৪ রানের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তখনকার প্রোটিয়া ক্যাপ্টেন গ্রায়েম স্মিথ (১০৮) আর এ বি ডি ভিলিয়ার্সের (১০৬ *) জোড়া শতক ও হাশিম আমলা, জ্যাক ক্যালিস এবং ডুমিনির ব্যাট থেকে আসা তিন হাফসেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটের ঐতিহাসিক জয় পায় প্রোটিয়ারা।

Advertisement

এছাড়া ১৯৭৬ সালের ১২ এপ্রিল পোর্ট অব স্পেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৪০৬ রানের টার্গেট ছুঁয়ে ফেলার কৃতিত্ব আছে ভারতের।

ক্রিকেটে অসম্ভব বলে কিছু নেই। তাই ক্রিকেট সবসময়ই অনিশ্চয়তার খেলা। তারপরও শেরে বাংলায় টাইগারদের রানপাহাড় টপকে জিম্বাবুয়ানরা নতুন ইতিহাস রচনা করবে, অতি বড় জিম্বাবুয়ান সাপোর্টারও বোধ হয় তা ভাবছেন না। জিম্বাবুয়ের ভারতীয় বংশোদ্ভুত কোচ লালচাঁদ রাজপুতও তা ভাবছেন না। তাই তো চতুর্থ দিনের খেলা শেষে ম্যাচ সম্পর্কে বলতে গিয়ে রাজপুতের ভাববাদি ব্যাখ্যা, ‘আসলে ক্রিকেট হচ্ছে গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা।’

এদিকে টাইগাররা ভাবছে ম্যাচ তাদের হাতে। আজ খেলা শেষে তাই মেহেদী হাসান মিরাজের মুখে অমন আশার সংলাপ, ‘এখন পর্যন্ত ম্যাচ আমাদের দিকেই আছে। আমরা ৪৪৩ রান টার্গেট দিয়েছি। জিম্বাবুয়ের ২ উইকেট পড়ছে। কালকের একটা দিন আছে। তিনটা সেশন আছে। আশা করি বোলাররা যদি ভালো জায়গায় বল করতে পারে, টাইট লেন্থ বজায় রাখতে পারে তাহলে ম্যাচটা আমাদের দিকে আছে অবশ্যই।’

বলা হচ্ছে বা কেউ কেউ বলছেন, ইনিংস ঘোষণাটা খানিক দেরিতে এসেছে। আরও ঘন্টা খাকে আগে ডিক্লেয়ার করলে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের ওপর আরও বেশি চাপ প্রয়োগ করা যেত। তখন তাদের অন্তত আরও ১২/১৪ ওভার বেশি খেলতে হতো। যদিও শেষ দিকে আলোর স্বল্পতায় ৬ ওভার আগেই খেলা শেষ হয়েছে, তাই আরও আগে ইনিংস ঘোষণা করলে অন্তত ৭-৮ ওভার বেশি বোলিংয়ের সুযোগ থাকতো। কে জানে, একটি উইকেট বেশি পড়তেও পারতো!

Advertisement

তবে মিরাজ তা মনে করেন না। তার ব্যাখ্যা, ‘আমি বলবো চারটা সেশন যথেষ্টর বেশি। আমরা যে সময় ছেড়ে দিয়েছি ওটাতে প্রায় ১২০-১২৫ ওভার কাভার করেছে। চতুর্থ ইনিংসে ১২০ ওভার মানে কিন্তু অনেক ওভার। আমাদেরও তো একটা ব্যালেন্স করে ছাড়তে হবে। এটাই যে টিম ম্যানেজম্যান্ট খুব ব্যালেন্স করে ছেড়েছে। আমরা কোনো সময় ব্যাকফুটে না যাই সে চিন্তাও ছিল।’

ইনিংস ঘোষণা নিয়ে ওপরের কথাগুলোই শেষ নয়। আরও কথা আছে মিরাজের। মিরাজ জানিয়ে দিলেন, আসলে তারা আগে নিরাপদ অবস্থানে পৌঁছাতে চেয়েছেন। তাই একটু দেরি করে ইনিংস ঘোষণা।

‘আমাদের প্রথম চিন্তা ছিল নিরাপদ থাকা। প্রথমে আমাদের সেইফ জোনে যেতে হবে। আমাদের দ্রুত কিছু উইকেটের পতন ঘটেছে। আমরা তখন ব্যাকফুটে ছিলাম। রিয়াদ ভাই ও মিঠুন ভাই একটা ভালো জুটি গড়েছে বলে আমাদের রানটা বেড়ে গেছে। আমাদের চিন্তা ছিল ৪০০ প্লাস রান করার। সেটা করতে পারলে আমরা নিরাপদ থাকব। আমরা যদি ওদের চার সেশন বা আরেকটু বেশি দিতে পারি, তাহলেই হয়ে যাবে। আমরা যেমন পরিকল্পনা করছিলাম সেই অনুযায়ী ভালোই হয়েছে।’-মিরাজের ব্যাখ্যা।

উইকেটের অবস্থা কেমন? পঞ্চম ও শেষ দিন কি পিচের চরিত্র পাল্টাবে, না এরকমই থাকবে? নানা প্রশ্ন। গুঞ্জন। একই প্রশ্ন উঠলো প্রেস মিটেও। মিরাজের কথা শুনে মনে হয়েছে, উইকেটে তেমন কিছুই নেই। সে অর্থে ভাঙেনিও তেমন। ক্ষত তৈরি হয়নি। তাই বিপজ্জনক টার্ন, বাউন্স কোনটাই নেই।

তবে বাউন্সটা সমান নয়। বল পড়ে কখনো উঁচু হচ্ছে। আবার কিছু ডেলিভারি নিচুও থাকছে। তাই তো মিরাজের মুখে এমন কথা, ‘উইকেট কিন্তু আন ইভেন না। দুই-একটা ডেলিভারি ওঠা নামা করেছে।’

তাহলে তাদের মানে স্পিনারদের করণীয় কি? মিরাজের সহজ উত্তর, ‘উইকেটে এখনো তেমন কিছু হচ্ছে না। আমাদের ভালো জায়গায় বল করতে হবে। আমাদের মনের দিক থেকে তৈরি থাকতে হবে, উইকেটে তেমন সাহায্য মিলবে না। তাই হার্ডওয়ার্ক করতে হবে। কষ্ট করতে হবে কালকের দিনটা। আশা করছি বোলাররা যারা আছে, তারা শতভাগ চেষ্টা করবে উইকেটের জন্য।’

প্রথমে বলেছেন, আজও পর্যন্ত উইকেটের চরিত্র পাল্টায়নি। আগের তিন দিনের মতই আছে। আবার পরক্ষণে অন্য কথাও আছে, ‘আজকে কিছু কিছু সময় উইকেট ভিন্ন আচরণ করেছে। কালকে উইকেট আরও চেঞ্জ হবে।’

সেক্ষেত্রে উইকেট টু উইকেট বল করার কথাই ভাবছেন মিরাজ। তার ধারণা, সেটাই হবে সবচেয়ে কার্যকর কৌশল। তাহলে উইকেট পাবার সুযোগও থাকবে বেশি।

দুই ইনিংসে অনেকগুলো ক্যাচ ড্রপ হয়েছে। মিরাজ মনে করেন, ক্যাচ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। তার কথা, ‘এ ম্যাচে আমরা অনেকগুলো ক্যাচ মিস করেছি। আমাদের সুযোগগুলো নিতে হবে। হাফ চান্সকে ফুল চান্স করার চেষ্টা দরকার।’

বাংলাদেশের ফ্রন্টলাইন বোলিংয়ের ধার কম থাকার কারণেই হোক কিংবা ফিল্ডারদের ক্যাচ ধরার ব্যর্থতার কারণেই হোক; জিম্বাবুয়ের উদ্বোধনী জুটি আজ অনেকটা সময় উইকেটে কাটিয়ে দিয়েছে। ব্রায়ান চারি আর হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ২০ ওভার ব্যাট করে প্রথম উইকেটে ৬৮ রান তুলে রীতিমত চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলেন স্বাগতিকদের। পরে মিরাজ প্রাথমিক ব্রেক থ্রু আনেন। তার বলে শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান জিম্বাবুয়ান ক্যাপ্টেন।

সেই জুটি কতটা চিন্তার কারণ হয়েছিল? মিরাজ জানালেন, চিন্তা নয়, দুই সিনিয়র মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিক তাদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন বলে সাহস ছিল। তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন যে আজ একটা উইকেটের পর আরেকটা উইকেট পড়েছে। শেষ দিনের উইকেটই এমন। একটা জুটি হবে, ৫০-৬০ রান বা ১০-১৫ ওভারের, কিন্তু যখন একটা উইকেট পড়বে, তখন কিন্তু তিন-চার-পাঁচটা উইকেট চলে যাবে। রিয়াদ ভাই- মুশফিক ভাই এটাই বলেছে, জুটি হলে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। জাস্ট ভালো জায়গায় বল করে যেতে হবে। একটা ব্রেক থ্রু আসলে জিম্বাবুয়ানরা ঠিকই ব্যাকফুটে চলে যাবে।’

মিরাজের সে আশা পূর্ণ হলেই ভালো। কারণ পেসারদের কার্যকারিতা কম। ফিল্ডাররাও ক্যাচ ফেলছেন প্রচুর। তাই স্পিনাররা এক উইকেট পতনের পর আবার উইকেট শিকার করতে পারলে জিম্বাবুয়ানদের চাপে ফেলা যাবে। তাতে পঞ্চম দিনের উইকেটে জয়েরও ভালো সুযোগ থাকবে টাইগারদের।

এআরবি/এমএমআর/পিআর