দক্ষিণ এশিয়ায় কার্পজাতীয় মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীতে ফের মৃত ডলফিন ভেসে উঠেছে। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাট এলাকার হালদা নদী থেকে ডলফিনটি উদ্ধার করা হয়।
Advertisement
এ নিয়ে গত এক বছরে হালদা নদীতে ১৯টি ডলফিন মারা গেল। এর আগে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে বেশ কয়েকটি মৃত ডলফিন পাওয়া যায়। প্রতিটি ডলফিনের শরীরে ক্ষতের চিহ্ন ছিল।
হালদাপারের বাসিন্দারা জানান, নদীতে চলাচল করা বালুবাহী নৌযান এবং ইঞ্জিনচালিত নৌকার প্রপেলারের আঘাতে এসব ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে।
হালদায় যে ডলফিন দেখা যায়, তা স্থানীয়ভাবে উতোম বা শুশুক নামে পরিচিত। মিঠাপানির স্তন্যপায়ী এই প্রাণী গেঞ্জেস বা গাঙ্গেয় ডলফিন। সাধারণত দূষণমুক্ত পরিষ্কার পানিতে এরা বিচরণ করে।
Advertisement
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘নদীতে ডলফিন মারা যাওয়ার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে হালদা নদী রক্ষা কমিটির সদস্যরা ডলফিনটি উদ্ধার করে। এটি দৈর্ঘ্য ৪ ফুট ১০ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ১ ফুট ১০ ইঞ্চি এবং ওজন ৩৭ কেজি ৬০০ গ্রাম। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডলফিনটিকে মাটিকে পুঁতে ফেলা হয়।’
নদীতে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচলের সময় ধাক্কা লেগে ডলফিনগুলো মারা যাচ্ছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তিনি।
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ছত্তার খালের মুখ থেকে হাটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাট পর্যন্ত নদীর প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা ডলফিনের মূল বিচরণক্ষেত্র। এই এলাকার মধ্যেই মরা ডলফিনগুলো পাওয়া যাচ্ছে।
গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে গত এক বছরে ১৯টি ডলফিন মারা গেছে বলে জানান হালদা নদী গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. মনজুরুল কিবরিয়া।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ড্রেজার দিয়ে হালদা থেকে বালু তোলা এবং সেই বালু ইঞ্জিনচালিত নৌযানে পরিবহন করায় ডলফিনের বিচরণ মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে। হালদা নদীতে এখনো ১৫০টির বেশি ডলফিন রয়েছে।’
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) ডলফিনের এই প্রজাতিটিকে অতি বিপন্ন (লাল তালিকাভুক্ত) হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
হালদা দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র। সরকার ২০১০ সালে চট্টগ্রামের নাজিরহাট থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত নদীর প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকাকে জলজ প্রাণীর অভয়ারণ্য ঘোষণা করে।
আবু আজাদ/জেএইচ/এমএস