বিনোদন

রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার সমালোচনায় যা বললেন চিত্রনায়ক রিয়াজ

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেন। তখন থেকেই ছড়িয়েছে আওয়ামী লীগের হয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসছেন চিত্রনায়ক রিয়াজ। কিন্তু দেশে ফিরে সেই খবরকে গুঞ্জন দাবি করেন তিনি।

Advertisement

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনেক তারকাকেই দেখা গেছে আ. লীগের হয়ে মনোনয়নপত্র কিনেছেন। তবে সে তালিকায় নেই রিয়াজ। প্রমাণ হলো তিনি সংসদ সদস্য হচ্ছেন না। সেজন্য তিনি রাজনীতিতে জড়াননি।

তবে নির্বাচনকে ঘিরে মাঠে সরব থাকবেন এই অভিনেতা। আওয়ামী লীগের প্রচারে কাজ করবেন, ভোট চাইবেন। আওয়ামী লীগের জন্য ভোট চাইতে মাঠে নামছেন সিনেমা ও নাটকের বেশ কয়েকজন অভিনেতা-অভিনেত্রী। মঙ্গলবার বিকেলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে নির্বাচনী প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বাছাইকৃত এই তারকাদের তালিকায় অন্যতম একজন রিয়াজ। তার সঙ্গে আরও থাকবেন শাকিল খান, ফেরদৌস, শমী কায়সার, জাহিদ হাসান, মৌ প্রমুখ।

Advertisement

প্রকাশ্যে তারকাদের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া নিয়ে চলছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা। অনেকেই দাবি করছেন, তারকাদের রাজনীতির মাঠে আসা ঠিক না। এতে তাদের প্রতি ভক্তদের ভালোবাসা কমে যায়, সম্মান নষ্ট হয়ে যায়। রিয়াজকে নিয়েও এমন কথা উঠছে। অনেকেই মনে করছেন এতে করে জনপ্রিয়তা ভাগ হয়ে যাবে এই তারকার।

তবে এই কথা মানতে নারাজ অসংখ্য ব্যবসা সফল ছবির নায়ক রিয়াজ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘কেন এমনটা ভাবা হচ্ছে না আমি ঠিক বুঝি না। একজন তারকারও ব্যক্তিগত জীবন থাকে। তারও রাজনৈতিক আদর্শ আছে। তিনিও ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করেন। সবদেশেই তারকারা রাজনীতিতে যুক্ত হন। কেউ সরাসরি নির্বাচনে কেউবা থাকেন প্রিয় দল ও প্রার্থির সমর্থনে।

বাংলাদেশেও এটা অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। অনেক বড় বড় তারকারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আদর্শ লালন করেছেন, নির্বাচনে গিয়েছেন। তাদের নিয়ে তো এতো সমালোচনা হয়নি। তবে এখন কেন হচ্ছে?’

নিজেই সেই প্রশ্নের জবাব দিয়ে এই অভিনেতা বলেন, ‘কারণ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া আওয়ামী লীগ সরকার সাফল্যে ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অন্যান্য দলগুলোর জন্য। সেইসব দলের সমর্থকরাই তারকাদের রাজনীতি নিয়ে সমালোচনা করছেন। তারা কিন্তু আওয়ামী লীগ অন্য দলগুলোতে যেসব তারকা যুক্ত হচ্ছেন তাদের সমালোচনা করেন না। এখানেই বিষয়টা স্পষ্ট।

Advertisement

কিংবদন্তি অভিনেতা আছেন অন্য দলে সম্পৃক্ত, আছেন গায়ক-গায়িকারাও। তাদের সঙ্গে আমার রাজনৈতিক মতের পার্থক্য আছে। কিন্তু বিবাদ-বিভেদ নেই। তারাও আমার সহকর্মী। এখন তারা রাজনীতি করেন বলে বা আমার মতের বিপরীত দলের সঙ্গে যুক্ত বলে তাদের সৃষ্টিশীলতাকে আমি খাটো করব? তাদেরকে আর ভালোবাসি না এটা বলব? আসলে যে প্রিয় সে সবসময়ই প্রিয়। তারকার বিচার হবে তার স্বভাব, আচরণ, ভালো কাজ দিয়ে। রাজনীতির পরিচয়ে নয়। যদি কেউ প্রিয় তারকাকে একটি দলে দেখে প্রভাবিত হয় ভালো, না হলেও তো ক্ষতির কিছু নেই। এখানে কাউকে কিছু চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে না।’

রিয়াজ তার ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি আমার ভক্তদের অনুরোধ করবো আপনাদের ভালোবাসাতে আমি একটা অবস্থানে এসেছি। আপনাদের আবেগের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। আপনারাও আমার আবেগ, আদর্শ ও ব্যক্তিগত জীবনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন। আপনিও স্বাধীনভাবে আপনার রাজনৈতিক মত প্রকাশ করুন। তবে সেটা বুঝে শুনে ও দেখে। ভবিষ্যত বাংলাদেশ সুন্দর হবে সেটা ভেবে সিদ্ধান্ত নিন।’

এত এত রাজনৈতিক দল থাকতে কেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত হলেন? জবাবে রিয়াজ বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করি। তার হাত ধরেই এদেশে চলচ্চিত্র আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা করেছিলো। সেই চলচ্চিত্রের অভিনেতা হিসেবে আমি তার আদর্শকে পাশ কাটাতে পারি না। তাছাড়া আমি একজন সচেতন, বুদ্ধিমান মানুষ। নিজের চোখে যা দেখি সেটাকে কীভাবে অস্বীকার করবো!

গেল দশ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দল আওয়ামী লীগ সরকার দেশে অনেক উন্নয়ন করেছে। মোটামুটি বলা চলে সব ক্ষেত্রেই উন্নয়নের ছাপ পড়েছে। আজকে গ্রামের কৃষক তার ফসলের ছবি তুলে তাৎক্ষনিকভাবে তার চিকিৎসা পাচ্ছেন। সেটা কী করে হচ্ছে? তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে। এই উন্নয়ন কী অস্বীকার করতে পারবেন কেউ?

এটা একটা উদাহরণ মাত্র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবদিকেই নজর দিয়েছেন। আমাদের চলচ্চিত্রেও গেল দশ বছরে অনেক উন্নতি এসেছে। তিনি তো আর সিনেমা বানিয়ে দেবেন না। যেটা পারছি না সেটা আমাদের দোষ। তিনি গেল দশ বছরে শতাধিক শিল্পীর পাশে দাঁড়িয়েছেন মোটা অংকের সহায়াতা নিয়ে। তিনি দল দেখেননি, মত দেখেননি, ধর্ম দেখেননি। শিল্পী জেনেই তাকে সহায়তা করেছেন। এই নজির তার মতো করে আর কেউ এই দেশে স্থাপন করতে পারেনি। আমি একজন শিল্পী হিসেবে তাই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে, আমার নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকেই চাই।

এছাড়া তার সঙ্গে জাতিসংঘের যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে নিজের চোখে দেখেছি বিশ্ব রাজনীতিতে তার ইতিবাচক প্রভাব। কানাডার মতো বহু উন্নত দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানেরা তার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য বসে ছিলেন। কারণ বাংলাদেশে বিনিয়োগ। সারা বিশ্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও এগিয়ে যাওয়াটা দৃশ্যমান। কিন্তু আমাদের দেশে কেউ কেউ সেটা দেখতে পারছেন না।

হতে পারে সেটা তার দুর্বলতা। কিন্তু আমার সেই দুর্বলতা নেই। আরও অনেকেই আছেন আমার তারকা, যারা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন যে আওয়ামী লীগের আবারও ক্ষমতায় আসা উচিত। আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করবো। কারণ, পদ্মা সেতুসহ অনেক উন্নয়নে ধাক্কা লাগবে নতুন কোনো দল সরকারে এলে।

একটা দলের সব ভালো হয় না। কোনো সরকারই শতভাগ নিখুঁত হতে পারে না। এটা সম্ভবও না। কিন্তু একটি সফল দলকে ছোট করতে তার ভালো কাজগুলো বাদ দিয়ে অল্প কিছু ব্যর্থতাকে হাইলাইট করার মানে নেই। অনেক রিউমার ছড়ানো হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে। তবুও দেখুন, এখনো এই দেশে শেখ হাসিনার বিকল্প কোনো নেতৃত্ব নেই। তার মতো এমন একটা ব্যক্তিত্ব দেখান যাকে সবশ্রেণির মানুষ বিপদের বন্ধু মনে করে, নিজেদের নেতা মনে করে। আমি কেন তবে প্রকাশ্যে শেখ হাসিনা ও তার দলের কথা বলবো না!’

এই চিত্রনায়ক আরও বলেন, ‘অনেকেই মনে করেন যে আওয়ামী লীগ আমাকে বা আমাদের না জানি কী কী দিয়ে দিচ্ছে। দেখুন, আওয়ামী লীগের কাছে কিছু প্রত্যাশা নেই আমার। আমি চাই দেশটা ভালো থাকুক। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকুক। আমি যখন মনে করবো দেশকে কিছু দিতে পেরেছি তখন না হয় দেশের কাছে চাইবো। আপাতত দেশের জন্য কাজ করছি।’

রিয়াজ জানান, শিগগিরই আওয়ামী লীগের হয়ে প্রচারণায় নামবেন তিনি। একঝাঁক তারকা নিয়ে সেই প্রচারণার কর্মসূচি দ্রুতই জানা যাবে।

এলএ/পিআর