কখনো কোন দলকে ফলোঅন করানোর রেকর্ড নেই। ঘুরিয়ে বললে বা খানিক তীর্যক ভাষা ব্যবহার করলে বলতে হবে আগে কখনই কোন দলকে ফলোঅনে ফেলতে পারেনি বাংলাদেশ।
Advertisement
এ ম্যাচে সে সুযোগ ছিল। ৫২২ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণার পর জিম্বাবুয়েকে প্রথম ইনিংসে ৩০৪ রানে থামিয়ে ২১৮ রানের লিডের পাশাপাশি ফলোঅনেও ফেলার করণীয় কাজটা সম্পাদিত হয়েছিল।
আগের দিন খেলা শেষ হবার পর থেকে আজ সকালে খেলা শুরুর আগে পর্যন্ত একটা প্রশ্নই ঘুরে ফিরে উঠেছে, তা হলো- বাংলাদেশকে জিম্বাবুয়েকে ফলোঅন করাবে? না নিজেরা আবার ব্যাটিংয়ে নামবে?
আজ চতুর্থ দিন খেলা শুরুর আধঘন্টা আগে জানা গেল, নাহ জিম্বাবুয়েকে দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে না নামিয়ে মানে ফলোঅনে না ঠেলে উল্টো নিজেরাই ব্যাট করবে টাইগাররা।
Advertisement
কেন এই সিদ্ধান্ত? একটা দলকে ফলোঅনে ফেলার এমন সুবর্ণ সুযোগ কেনই বা হাতছাড়া করলো মাহমুদউল্লাহর দল? তা নিয়েই রাজ্যের কথা বার্তা, হৈ চৈ, গুঞ্জন।
ঘুরে ফিরে প্রশ্ন একটাই- আচ্ছা জিম্বাবুয়েকে ফলোঅনে না পাঠিয়ে নিজেরা ব্যাট করার যুক্তিটা কী? শেরে বাংলার গ্র্যান্ডস্ট্যান্ড, ক্লাব হাউজ আর গ্যালারিতে উপস্থিত হাজার দুয়েক দর্শক আর টিভির সামনে বসা কোটি বাংলাদেশ সমর্থক-ভক্তের মনে আজ সকাল থেকে এ প্রশ্নই উঁকি দিচ্ছে।
দিনের খেলা শেষ হবার আগে পর্যন্ত সে প্রশ্নর অজানাই থেকে যাবে। তার আগে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ হবে প্রচুর। আলোচনা-পর্যালোচনার সাথে চায়ের কাপে ঝড়ও উঠবে। তবে সেগুলো সবই অনুমান নির্ভর।
খালি চোখে মনে হচ্ছে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং এড়াতেই এ সিদ্ধান্ত। মানে বাংলাদেশ ধরেই নিয়েছে জিম্বাবুয়ে যেহেতু সিলেটের প্রথম ইনিংসে ২৮২ আর এ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৩০০+ করেছে , তাই দলটির সামর্থ আছে ৩০০ রান করার। সেক্ষেত্রে জিম্বাবুয়ে ২১৮ রানের ঘাটতি পুষিয়ে ৩০০+ করলে বাংলাদেশের জিততে দরকার পড়বে ৮০-৯০ কিংবা ১০০ রানের।
Advertisement
এর সাথে সময়েরও একটা ব্যাপার আছে। জিম্বাবুয়ে আজ তিন আর কাল দুই সেশন খেলে ফেললে হিসেবটা কঠিন হয়ে যেতে পারে। পঞ্চম দিনের উইকেটে শেষ দুই ঘন্টায় ১০০+ রান করাটা একটু কঠিন হতে পারে। হয়ত এই ভেবেই নিজেরা আজ সকাল সকাল ব্যাটিংয়ে মেনে পড়া।
উদ্দেশ্য-লক্ষ্য এক ও অভিন্ন- ঘন্টা তিনেক কিংবা দুই সেশন ব্যাট করে অন্তত দেড়শো থেকে পৌনে দুইশ রান করে জিম্বাবুয়েকে সাড়ে তিনশ থেকে ৪০০ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দেয়া।
আজ শেষ সেশন আর শেষ দিনের তিন সেশনে ঐ রান করে জেতা জিম্বাবুয়ে কেন, যে কোন বড় শক্তির জন্যই কঠিন হবে। বোঝাই যায়, তা ভেবেই নিজেরা ব্যাটিংয়ে নেমে পড়া।
কিন্তু পাল্টা ব্যাটিংয়ে নামার পর যা ঘটলো, তা দেখে আশাবাদী হবার বদলে শঙ্কায় বুক কাপতে শুরু করেছিল অনেকেরই। কি ব্যাপার, জয় নিশ্চিত করতে গিয়ে আবার না পরাজয়কে আলিঙ্গন করে বসে টাইগাররা?
নামী সাংবাদিক, লিখিয়ে, ক্রিকেট প্রশিক্ষক তথা বরেণ্য ক্রিকেট বোদ্ধা জালাল আহমেদ চৌধুরী প্রেস বক্সে খানিক আক্ষেপের সুরে বলে উঠলেন, ‘পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এবং স্বস্তির মাঝেও অস্বস্তি।’
সত্যিই তাই। একটা সাজানো গোছানো পরিবশ হঠাৎই অগোছানো। প্রথম ইনিংসে দারুণ ব্যাট করে ৫০০ + রান তোলার দলটি একদিন বিরতিতে যেন ব্যাটিং ভুলে গেল!
শুরুই হলো বিপর্যয় দিয়ে। ইমরুল কায়েস অফস্টাম্পের এক ফুট বাইরের খাট লেন্থের ডেলিভারিকে ফ্ল্যাশ করতে গিয়ে থার্ডম্যানে ক্যাচ।
লিটন দাস কাইল জারভিসের দারুন এক এক্সপ্রেস ডেলিভারির পিছনে না এসে জায়গায় দাড়িয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড। স্লিপ আর গালিতে তিন চার জন ওৎ পেতে আছেন,তা দেখেও মুমিনুল থার্ডম্যানে গলাতে গিয়ে উইকেটের পিছনে ক্যাচ।
প্রথম ইনিংসে ধৈর্য্য, সংযমের প্রতীক হয়ে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানো মুশফিকুর রহিম খাট লেন্থের ডেলিভারিকে পুল করতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে। ২৫ রানে চার উইকেট। এ যেন জয় নিশ্চিত করতে গিয়ে উল্টো বিপাকে পড়া।
সে অবস্থা থেকে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ আর মোহাম্মদ মিঠুন হাল ধরে লাঞ্চ পর্যন্ত কাটিয়ে দিয়েছেন উইকেটে। তাতে স্কোর বোর্ডের জীর্ন-শীর্ন অবস্থা যে খুব ভাল হয়ে গেছে তা নয়। তবে যে শঙ্কা দেখা দিয়েছিল , তা খানিক কেটেছে।
তারপরও কথা থেকেই যাচ্ছে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মিঠুন, আরিফুল আর মেহেদি হাসান মিরাজরা মিলে পরের সেশনে কত দূর এগিয়ে দেবেন? নিশ্চয়ই চা বিরতি পর্যন্ত ব্যাট করে লিডটাকে ৪০০ বা তার খুব কাছে নিতে চাইবেন রিয়াদ।
প্রশ্ন হলো তা কি হবে? ৪০০ রানে লিড নিতে হলে আজ চার ঘন্টায় ১৮০ রান করতে হবে। সেই কাজটি কি হবে? তা না হলে যে ‘মহাভারত অশুদ্ধ’ হয়ে যাবে, বাংলাদেশের জেতার পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে বা টাইগাররা জিতবে না- তা বলার অবকাশ নেই।
৩০০+ রানের টাগেট দিতে পারলেও টাইগারদের জয়ের সম্ভাবনা ও সুযোগ থাকবে। এখন সেটাকে ৪০০‘তে নিয়ে যাওয়াই হলো আসল কাজ। মাহমুদউল্লাহ সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে সে কাজটি করতে পারবেন? সাথে মিঠুনও কি সহায়ক ভুমিকা নিতে পারবেন?
রিয়াদ একদমই রানে নেই। আগের ৯ ইনিংসে রান মোটে ৯৩। মিঠুনও টেস্ট অভিষেকের প্রথম ইনিংসে ফিরে গেছেন ০ হাতে। তারও ভাল করা জরুরী ।
কাজেই দলের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি নিজেদের ক্যারিয়ারের জন্য হলেও রিয়াদ-মিঠুনের ভাল খেলা এবং রান করা জরুরী। প্রথম ইনিংসে মুশফিক আর মুমিনুল যত বড় খেলেছেন , তত বড়র দরকার নেই। রিয়াদ-মিঠুনের জোড়া ফিফটিই হতে পারে ম্যাচ জেতাতে যথেষ্ঠ।
তাতে তাদের ক্যারিয়ারও শঙ্কামুক্ত হবে। দলও পাবে লড়িয়ে পুজি। বাকিটা তাইজুল-মিরাজরা বল হাতেই হয়ত করে দেবেন। কি বলেন?
এআরবি/এসএএস/আরআইপি