আন্তর্জাতিক

আপনারা জিতে গেলেন, আমি হেরে গেলাম : ফাঁসির আগে কাসাব

আলোচিত মুম্বাই হত্যা মামলার অন্যতম আসামি পাকিস্তানি নাগরিক আজমল কাসাবের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে ২০১২ সালের ২১ নভ্ম্বের। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি কাসাবের প্রাণভিক্ষা আবেদন নামঞ্জুর করলে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

Advertisement

ভারতীয় আইন ব্যবস্থা নিয়ে আজমল কাসাবের ধারণা ছিল কিছুতেই তার ফাঁসি হবে না। যদিও সেই বিশ্বাস ভেঙে যায় ফাঁসি কার্যকরের ঠিক আগের দিন। ২৬/১১-এর মুম্বাই হামলা মামলার মূল তদন্তকারী অফিসার রমেশ মহালে এমনটাই জানিয়েছেন।

ফাঁসি দেয়ার জন্য আর্থার রোড জেলের বিশেষ সেল থেকে ইয়েরওয়াড়া জেলে আজমল কাসাবকে নিতে গিয়েছিলেন রমেশ মহালে। হিন্দুস্তান টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে রমেশ জানান, “কাসাবের চোখে-মুখে প্রথমবারের জন্য তখনই মৃত্যুভয় ফুটে উঠেছিল। অস্ফুট স্বরে সে বলে উঠে, ‘আপনারা জিতে গেলেন, আমি হেরে গেলাম’। তারপরই একদম চুপ হয়ে যায় কাসাব।’’

আজমল কাসাবকে চারবছর ধরে জেরা করা -এ রকমই নানা মুহূর্ত সামনে নিয়ে এসেছেন মুম্বাই পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের তৎকালীন এ প্রধান রমেশ মহালে। ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর হামলার সময়ই মুম্বাই পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের প্রধান ছিলেন তিনি।

Advertisement

তদন্তে ও জেরার বিভিন্ন সময় কাসাবের নানা মন্তব্যে চমকে যেতেন তিনি। ক্রাইম ব্রাঞ্চে প্রায় দেড় মাস কাটানোর পর আজমল কাসাবের মন্তব্য ছিল, ‘ভারতীয় আইন ব্যবস্থায় সহজে ফাঁসির সাজা দেয়া হয় না। মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করার ৮ বছর পরও আজমল গুরুর ফাঁসি দিতে পারেনি ভারত।’

২০০৮ সালে এমন কথা বলার সময় কাসাবের চোখে-মুখে প্রত্যয়ের ছাপ ফুটে উঠত বলে জানান রমেশ মহালে। মাত্র ১৭ বছরের ওই কিশোরের বুদ্ধি দেখে অবাক হতেন রমেশ মহালে।

কাসাব উল্টোপাল্টা উত্তর দিয়ে কিভাবে তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করতেন -তাও সামনে এনেছেন মহালে। আদালতে জবানবন্দি দেয়ার সময় কাসাব হঠাৎই একদিন বলেন, ‘আমি পাকিস্তানি নাগরিক। অমিতাভ বচ্চনকে দেখতে ভারতে এসেছি। অমিতাভের জুহু বাংলোর সামনে যখন দাঁড়িয়ে ছিলাম, তখনই আমাকে ধরে ফেলে ভারতীয় গোয়েন্দারা। তারপরেই আমাকে তুলে দেয়া হয় মুম্বাই পুলিশের হাতে। লকাপে ঢোকানোর আগে আমার হাতে গুলি করে পুলিশ। চারদিন পর ২৬/১১ হামলার সঙ্গে ওরা আমাকে জড়িয়ে দেয়।’

২০১২ সালের ১১ নভেম্বর ভারতের বিশেষ আদালতে কাসাবকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। ১৯ নভেম্বর গভীর রাতে তাকে আর্থার রোডের জেল থেকে ইয়েরওয়াড়া জেলে নিয়ে যান রমেশ মহালে। সে সময় কাসাবের কক্ষে গিয়ে রমেশ বলেছিলেন, ‘কী বলেছিলে, মনে পড়ছে? চার বছর হতে এখনও সাতদিন বাকি। তার আগেই তোমাকে ফাঁসি দেয়া হবে।’

Advertisement

এর পরই প্রথমবারের জন্য কাসাবের মুখে মৃত্যুভয় দেখতে পেয়েছিলেন রমেশ মহালে। অস্ফুট স্বরে কাসাব বলে উঠেছিল, ‘আপনি জিতে গেলেন, আমি হেরে গেলাম।’ এর পর আর ২১ নভেম্বর সকালে পুনে যাওয়ার পথে সাড়ে তিন ঘণ্টার রাস্তায় আর কোনো কথা বলেনি কাসাব। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

আরএস/আরআইপি