মতামত

ফোকাস থাকুক ক্রিকেটীয় শুভ্রতার দিকে

কথাটা বেশ পুরনো এবং ধার করা। এবং এতোটাই পুরনো যে কথাটা যারা বলতেন তারা সেটাকে এখন বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছেন! তবু ভারতীয় রাজনৈতিক দল বিজেপির সেই কথাটাকেই বাংলাদেশের জন্য বর্তমান প্রেক্ষাপটে সঠিক মনে হচ্ছে। অটল বিহারী বাজপেয়ীর জমানায় একটা শ্লোগান তোলা হয়েছিল;‘ ইন্ডিয়া ইজ শাইনিং’। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম সেই কথাটাকে একটু অন্যরকমভাবে মনে করিয়ে দিচ্ছে। ‘বাংলাদেশ ইজ শাইনিং।’ আর কেন মনে হবে না? সেই অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে থেকে বাংলাদেশ দলের ঔজ্জ্বল্যের ঝলক দেখছে ক্রিকেট বিশ্ব। সব শেষ সিরিজ সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষেও সেখানে ঔজ্জ্বল্যের ঘাটতি নেই। তাহলে মনে হবে না কেন  বাংলাদেশ ইজ শাইনিং? এটা ভেবে আমরা তৃপ্ত হতেই পারি। আমাদের দলটাতো শুধু জিতেই চলেছে। অন্তত রঙিন পোশাকে।তাই পোশাক নিয়েও আমাদের আগ্রহ বেড়েছে কয়েকগুন। কেমন পোশাক হবে বাংলাদেশ দলটার তা ডিজাইনের জন্য আমরা প্রতিযোগিতারও আয়োজন করতে পারি। এবং সেখানে আপনি পেশাদার পোশাক ডিজাইনার না হলেও অংশ নিতে পারবেন! অর্থাৎ, আপনার ডিজাইনের চেয়ে আপনার অংশগ্রহণটাই বড়! কারণ, আমাদের ক্রিকেট আকাশ থেকে এখন এমন আলোক রশ্মি বের হচ্ছে যে আপনি অনুজ্জ্বল হলেও ক্রিকেটীয় আলোয় আপনি উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারেন। এরকম ঔজ্জ্বল্য ছড়ানোর সুযোগ আপনি হাত ছাড়া করবেন কেন! কারণ, বাংলাদেশ ইজ শাইনিং! তাই ফোকাসটা এখন সবার ক্রিকেট। টিভি চ্যানেল, করপোরেট জগৎ, জাতীয় মিডিয়া সবাই ঝাঁপাচ্ছে ক্রিকেটকে ঘিরে। মাঠে ক্রিকেট নেই তাতে কি? ক্রিকেটের বাইরে বাংলাদেশে এখন একটা দিনও ভাবা যাচ্ছে না।ক্রিকেটাররা অবশ্য নতুন মৌসুমের জন্য নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যেটাকে বলা যায় প্রাক মৌসুম প্রস্তুতি। আর মৌসুম শুরুর আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি শুরু হবে দিন কয়েকের মধ্যে। তবে সেই প্রস্তুতিটা কেমন হয় তা দেখার জন্য কৌতূহল নিয়ে বসে আছেন অনেকে। কারণ, এবার বাংলাদেশ মৌসুম শুরু করছে কঠিন এক সিরিজ দিয়ে। প্রতিপক্ষের নাম অস্ট্রেলিয়া। আর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই সিরিজে বাংলাদেশ বাড়তি ঔজ্জ্বল্য ছড়ানো রঙিন পোশাক পরে মাঠে নামতে পারছে না। তাদের খেলতে হবে দুটো টেস্ট ম্যাচ। এবং টেস্ট ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়া অনেক কঠিন প্রতিপক্ষ। তা অ্যাশেজ খুইয়ে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে এলেও। অস্ট্রেলিয়ারাও এখানে শুরু করবে নতুনভাবে। একটা নতুন জমানার শুরু করতে চাইবে তাঁরা বাংলাদেশ থেকে। কারণ, মাইকেল ক্লার্কসহ বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের টেস্ট ক্যারিয়ারে যতি পড়ে যাচ্ছে। স্টিভ স্মিথের নেতৃত্বে নতুন এক অস্ট্রেলিয়ার যাত্রা শুরু হবে। সেই অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হওয়ার জন্য বাংলাদেশেরও দরকার পড়বে অনেক নতুন চিন্তার। অনেক নতুন কিছু। গত মৌসুমে বাংলাদেশ যা করেছে, যাতে সাফল্য পেয়েছে তা কাঁটা ছেড়া করে গলাধঃকরণ করেই অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে আসছে। ঐ খাবার নতুন করে তাদের গেলানো যাবে না। এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। তাই নতুন মৌসুমে চাই নতুন কিছু। চাই নতুন তাস। সেটা আনকোরা নতুন প্লেয়ার হতে পারে। নতুন চিন্তা হতে পারে। মোট কথা একটা ঝটকা দরকার হবে। যদি না হয় তাহলে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ঠোক্কর খেতে হবে। ভারত-সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ ড্র করেছি আমরা। একই ভাবে অস্ট্রেলিয়াকেও রুখে দেবো। এই মানসিকতায় আক্রান্ত হলেই বিপদ অনিবার্য। অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডের কাছে অ্যাশেজ হারলেও তারা লম্বা সময় টেস্ট ম্যাচ খেলার মধ্যেই আছে। সেখান থেকেই বাংলাদেশে আসবে তারা। বাংলাদেশ ভারত, সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ ড্র করলেও ক’টা দিন টেস্ট খেলেছে সেটা বিবেচ্য বিষয়। আর অক্টোবরে বৃষ্টির সম্ভাবনাও কম বাংলাদেশের আকাশে। তাই ভয় হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার কাছে টেস্ট সিরিজ সমর্পিত হলে গুনগুন আওয়াজ উঠতে পারে আমরাতো ওয়ানডেটা ভাল খেলি। টেস্ট কমিয়ে আমাদের ওয়ানডে বেশি খেলা উচিত! আসলে এই চিন্তাটা তাদের মাথায়ই আসতে পারে যারা তাৎক্ষণিক দর্শনে বিশ্বাসী।কিন্তু বাংলাদেশের মতো দেশের ক্রিকেট নীতি এখনো সল্প মেয়াদী হতে পারে না। তাকে দীর্ঘ মেয়াদী চিন্তা নিয়েই এগুতে হবে। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা, পরপর গোটা চারেক ওয়ানডে সিরিজ জয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের ঔজ্বল্যের কথাই বলছে। কিন্তু ইতিহাস বলছে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলা একটা দলও ক্রিকেট মানচিত্র থেকে এখন প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে! এক সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী কেনিয়ার উপস্থিতি-ই এখন আর ক্রিকেট বিশ্বে টের পাওয়া যায় না! কারণ, ওরা মনে করেছিল ওরাতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলছে! ওয়ানডেতে ভাল রেজাল্ট করছে! যে কারণে তাদের কাছে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট হয়ে পড়েছিল গুরুত্বহীন। যার পরিণতিতে এখন ক্রিকেট বিশ্বেই এখন কেনিয়া গুরুত্বহীন এক দল!আবারও গুরুত্ব দিয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে শুরুর কথায়। বাংলাদেশ ইজ শাইনিং! ভেতরে ভেতরে আদৌ তাই কিনা তার বড় পরীক্ষা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ইন্ডিয়া ইজ শাইনিং শ্লোগান যে বাস্তব ছিল না, সেটা অটল বিহারী বাজপেয়ী পরের নির্বাচনেই টের পেয়েছিলেন। অতএব ক্রিকেটের বাইরের রংচং-এ নয়, বাংলাদেশ ক্রিকেটের উচিৎ শুভ্রতার দিকে আরো একটু বেশি নজর দেয়া।লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘ইনজুরি টাইম’ ‘এক্সট্রা টাইম’ ব্যাপক পাঠক প্রিয়তা পেয়েছে। তিনি কাজ করেছেন দেশের নেতৃস্থানীয় বিভিন্ন দৈনিকে, টেলিভিশন এবং দেশি-বিদেশি রেডিওতে। এইচআর/পিআর

Advertisement