ঢাকা টেস্টে আজ তৃতীয় দিনের সত্যিকার নায়ক কে? জিম্বাবুয়ান তারকা ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন টেলর? নাকি বাংলাদেশের বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম? টেলর অনবদ্য শতরান করেছেন (১১০)। আর তাইজুল আবারো ৫ উইকেট শিকারী। টেস্টে এই দুই কৃতিত্ব মানে শতরান ও ৫ উইকেট শিকার যে একই রকম প্রায়!
Advertisement
কিন্তু দিন শেষে সে সব ছাপিয়ে বড় হয়ে দেখা দিল একটি অন্য ইস্যু। অনেকের মুখেই আফসোস- অনুশোচনা; ‘ইস! এতগুলো ক্যাচ না ফেললেই হয়তো খেলার চালচিত্র আরও অন্যরকম হতে পারতো। আজই জিম্বাবুয়েকে ফলোঅনে ফেলে পড়ন্ত বিকেলে কয়েকটি উইকেটের পতনও ঘটানো যেত; কিন্তু তা আর হলো কই?
দিন শেষে তাই ক্যাচ মিসের আফসোস। একটি, দুটি কিংবা তিনটিও নয়। গুনেগুনে পাঁচ-পাঁচটি ক্যাচ হাতছাড়া হলো। সেই প্রথম ঘন্টায় তাইজুল, আর পড়ন্ত বিকেলে মুমিনুল-মিঠুনরা ক্যাচ ফেলার মহড়া দিলেন। এমন নয় যে, খুব কঠিন, অনেক দৌড়াতে হয়েছে, কোনরকমে হাত লাগানোই ছিল সার।
সবগুলো প্রায় হাতের নাগালের মধ্যেই ছিল। কিন্তু ফিল্ডাররা হাত লাগিয়েও সেগুলো ধরে রাখতে পারেননি। দিনের সফলতম বোলার তাইজুল, যিনি বাজ পাখির মত ডিপ মিড উইকেটে শুন্যে শরীর ছুঁড়ে দিয়ে অসাধারণ এক ক্যাচ লুফে জিম্বাবুইয়ান সেঞ্চুরিয়ান ব্রেন্ডন টেলরকে ফেরত পাঠিয়েছেন সাজঘরে- সেই তাইজুলও সকালের সেশনে পয়েন্টে ক্যাচ ফেলে দিয়েছিলেন।
Advertisement
প্রথম ঘন্টায় পেসার খালেদের বলে পয়েন্টে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন জিম্বাবুয়ের ওপেনার ব্রায়ান চারি। তাইজুল তা ধরেও ফেলে দেন। ১৯ রানে জীবন পাওয়া চারি শেষ পর্যন্ত আউট হন ৫৩ রানে।
এরপর প্রথম সেশনে চারি আরও একবার জীবন পেয়েছেন। অফস্পিনার মিরাজের বলে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ লেগ স্লিপে এ জিম্বাবুয়ান ওপেনারের ক্যাচ ফেলে দেন। শেষ সেশনে পিটার মুরের ক্যচও ড্রপ হলো। ফেললেন বদলি ফিল্ডার নাজমুল অপু।
পেসার মোস্তাফিজের বলে এক্সট্রা কভারে ক্যাচ দিয়েছিলেন মুর। তার রান তখন ৭৫। নাজমুল অপু তা ফেলে দেন। পরে মুরকে ৮৩ রানে লেগবিফোর উইকেটের ফাঁদে জড়ান অনিয়মিত পেসার আরিফুল।
এরপর কাইল জারভিস এক ওভারে দু’দুবার জীবন পান অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজের বলে। দুটিই ক্লোজ ইন পজিসনে। প্রথমবার মুমিনুল হক শর্ট লেগে। পরেরবার মিঠুন ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে।
Advertisement
জটিলতার কিছু নেই। সহজ হিসেব। ওই পাঁচ ক্যাচের অন্তত তিনটি তালুবন্দি করা গেলে জিম্বাবুয়ে যেখানে গিয়ে থেমেছে, তারচেয়ে অন্তত ৫০/৬০ রান আগেই অলআউট হতো। আড়াইশোর আশপাশে অলআউট করা যেতো তাদেরকে। তাহলে আজই হয়ত ফলোঅনে পড়ে দ্বিতীয় দফা ব্যাটিংয়ে নামতে হতো মাসাকাদজার দলকে।
শেষ বিকেলে তাইজুল-মিরাজের বল একটু আধটু ঘুরছিল। তাতে একাধিক উইকেটের পতন ঘটারও সম্ভাবনা থাকতো। তখন জয়ের গন্ধটা এসে নাকে লাগতো টাইগারদের। তবে দিন শেষে মিডিয়ার সামনে আসা তাইজুল ইসলামের কথা শুনে অবশ্য বোঝার উপায় নেই যে, এই এতগুলো ক্যাচ হাতছাড়া হওয়ায় বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তাইজুলের ব্যাখ্যা, ‘ক্যাচ ধরতে না পারলে তো মিস হবেই।’ কিন্তু তা দলের জন্য কতটা ক্ষতির কারণ? সে সম্পর্কে কিছু বলেননি তাইজুল। তবে স্বল্পভাষী তাইজুল উইকেট সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা দিয়েছেন। তার কথায় পরিষ্কার, উইকেট এখনো ভালই আছে। বরং দ্বিতীয় দিনের চেয়ে আজ ব্যাটসম্যানদের পক্ষেই ছিল বেশি।
কিভাবে? এর ব্যাখ্যায় তাইজুল বলেন, ‘আগের দিন শার্প টার্ন করছিল। আজ ততটা শার্প টার্ন হয়নি। সাধারণতঃ ভাঙ্গা বা ক্ষতে পড়ে একটু দ্রুতই স্পিন করে, আজ তাও করেনি।’ তবে তাইজুলের আশা ম্যাচের দৈর্ঘ্য যত বাড়বে, ততই বল টার্ন করবে।
তাইজুলের শেষ কথাটি আশা জাগানিয়া, ‘চতুর্থ ও পঞ্চম দিনতো এখনো খেলা বাকি। তাই বল এক সময় না এক সময় স্পিন করবেই।’
এআরবি/আইএইচএস/এমএস