ধর্ম

সুপথ প্রাপ্ত ব্যক্তির পরিচয় ও প্রতিদান

পৃথিবীতে নানান মত ও মতবাদের ভিড়ে সঠিক পথ ও সুপথ প্রাপ্ত লোকরা দিন দিন বিলিন হয়ে যাচ্ছে। ভেজালের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে ইসলাম ও মুসলমানদের সঠিক আকিদা-বিশ্বাস ও ঠিকানা। মানুষ যাতে সঠিক পথের ওপর স্থায়ী হয় এবং উত্তম প্রতিদান লাভ করে সে বিষয়ে কুরআনে রয়েছে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা।

Advertisement

আল্লাহ তাআলার ঘোষণা যে, তিনি পবিত্র কুরআন (হেদায়েত) নাজিল করেছেন আর তিনিই তা হেফাজত করবেন। আর কুরআনের হেফাজতের মাধ্যমেই তিনি সঠিক পথপ্রাপ্তির ধারা অব্যাহত রাখবেন।

কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা সঠিক পথপ্রাপ্ত লোকদের পরিচয় তুলে ধরে বলেন-‘যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানে কোনো প্রকার শিরকের সংমিশ্রণ ঘটায়নি তাদের জন্য রয়েছে নিরাপত্তা এবং তারা সঠিক পথপ্রাপ্ত।’ (সুরা আনআম : আয়াত ৮২)

সঠিক পথের সন্ধান লাভকারী ব্যক্তিদের আকিদা বিশ্বাস কেমন হবে তা জানিয়েছেন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যারা প্রিয়নবির হাদিস অনুযায়ী বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তা মেনে চলবে তারাই সঠিক পথে বিশ্বাসী। হাদিসে এসেছে-

Advertisement

হজরত উবাদাহ ইবনে সামেত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এ সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই এবং তার কোনো শরিক নেই। আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা এবং রাসুল।

আর ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। তার বাণী যা রূহ হিসেবে মরিয়ম আলাইহিস সালামের মধ্যে নিক্ষেপ করেছিলেন। আর জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য (মেনে নেবে)। সে ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। চাই সে যে কোনো আমলই করুক না কেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)

সুপথ প্রাপ্ত লোকের প্রতিদানযারা কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিশ্বাস স্থাপন করবে, তাদের জন্য রয়েছে অনেক প্রতিদান। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-‘আর (হে নবি) যারা ঈমান গ্রহণ করেছে এবং নেক আমল করেছে, তাদেরকে এমন জান্নাতের সুসংবাদ দিন, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। যখনই তারা খাবার হিসাবে কোনো ফলমূল পাবে, তখনই তারা বলবে, এতো অবিকল সে ফলই যা আমরা ইতিপূর্বেও পেয়েছিলাম। এবং তাদেরকে দেখতে একই রকম (তবে স্বাদ হবে ভিন্ন) ফলমূল দেয়া হবে এবং সেখানে তাদের জন্য পুতঃপবিত্র স্ত্রী থাকবে। আর তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৫)

আরও পড়ুন > ফজরের পর যে তাসবিহ পড়তে বলেছেন প্রিয়নবি

Advertisement

সুপথ প্রাপ্ত লোকদের সম্পর্কেও প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিদান লাভের কথা ঘোষণা করেন। হাদিসে এসেছে-

হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে একজন মানুষ এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! ওয়াজিবকারী দু’টি জিনিস কী? তিনি উত্তরে বললেন-

‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করে মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশে করবে।’ (মুসলিম)

কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে এ কথা সুস্পষ্ট, যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না, সে হলো সুপথপ্রাপ্ত ব্যক্তি। আর যে ব্যক্তি সুপথপ্রাপ্ত তার জন্যই রয়েছে জান্নাতের নিশ্চয়তাসহ আল্লাহ ঘোষিত সব সুবিধা।

সুতরাং মুসলিম উম্মাহর উচিত দুনিয়ার চাকচিক্য থেকে মুখ ফিরিয়ে কুরআন সুন্নাহর আলোকে শিরকমুক্ত ঈমান লাভের চেষ্টা করা। ছোট ছোট গোনাহগুলো থেকে নিজেদের বিরত রাখতে গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি কবিরা গোনাহ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখা। তবেই সহজে শিরকমুক্ত ঈমান লাভ সম্ভব হবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিরকমুক্ত ঈমান লাভে আল্লাহর রহমত ও কল্যাণ লাভের তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহ ঘোষিত সব নেয়ামত লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস