অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, দেশে করযোগ্য আরও তিন কোটি মানুষ আছে। এরা সবাই কর দিলে কর দাতার সংখ্যা হতো চার কোটি। কিন্ত বর্তমানে এক কোটি মানুষ কর দেয়। সবাই কর দিলে দেশ থেকে দারিদ্র্য নির্মূল করা সহজ হতো।
Advertisement
মঙ্গলবার রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে আয়কর মেলা-২০১৮ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘একটা সময় ছিল যখন কর দিতে আমাদের খুব অনীহা ছিল। সবাই মনে করতো আজ কর দিলাম, সারাজীবন একটি ফাঁদে পড়ে গেলাম। তবে এখন আর সে অবস্থা নেই। এখন অসংখ্য যুকক এসে লাইন ধরে কর দেয়। এটা আমাদের জাতির জন্য উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আগে আমরা ৭ লাখ করদাতার কাছে কর আদায় করতাম। তখন ১৫ লাখের বেশি করদাতা ছিল না। এখন করদাতার সংখ্যা ৩০ লাখের চেয়ে বেশি হয়ে গেছে। এবং বিভিন্নভাবে এখন এক কোটি মানুষ কর দেয়। অনেক ধরনের কর আছে, সেগুলোকে ধরলে এক কোটি মানুষ আজকে কর দেয়। ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে এক কোটি করাদাতা।’
Advertisement
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের উন্নয়ন যেভাবে ধাবিত হচ্ছে এক কোটি করাদাতা নিয়ে আমরা এখন সন্তুষ্ট নই। আমরা চাই এই এক কোটির সঙ্গে আরও কয়েক কোটি এখানে যুক্ত হওয়া উচিত। অন্তত চার কোটি মানুষের কর দেয়া উচিত।’
মুহিত বলেন, ‘ধরেন চার কোটি মানুষ কর দেয়। তাহলে আমাদের যে সুবিধাটা হবে সরকার যে বিভিন্ন ধরণের সেবা আপনাদের কাছে উপস্থাপন করে তা নানাভাবে ব্যাপ্ত হবে।’
অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন হওয়ায় শহর গ্রামে মানুষ এখন একই ধরনের সেবা পায় উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সারাদেশে একটা একক অর্থনীতির সৃষ্টি হয়েছে। একক অর্থনীতির সৃষ্টি হওয়ার ফলে অর্থনীতির গতি এখন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং সেই অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় মানুষের মধ্যে যে বৈষম্য তা ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে। হ্যাঁ বৈষম্য এখনও আছে। কিন্তু সেটা ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে।’
মুহিত আরও বলেন, ‘আমাদের যখন জন্ম হয় তখন আমাদের দেশে প্রায় ৭০ শতাংশ লোক গরিব ছিল। এখন আমরা বলি গরিবের সংখ্যা ২২ শতাংশ। এই ৭০ থেকে নামিয়ে আমরা ২২ শতাংশে নিয়ে এসেছি। অর্থাৎ সকলের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ২২ শতাংশ কম নয়। আমাদের দেশে ২২ শতাংশ মানে ৩ কোটি মানুষ। এই ৩ কোটি মানুষকে এখন আমাদের উপরে উঠাতে হবে। সেটাই হল আমাদের সরকারের লক্ষ্যমাত্রা। সেটাই আমাদের জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা।’
Advertisement
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা আবুল মুহিত বলেন, ‘এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই নেতৃত্বটা একান্তাভাবে জনকল্যাণে নিবেদিত। জনকল্যাণে নিবেদিত নেতৃত্ব আছে বলেই আমরা দ্রুত গতিতে এগিয়ে যেতে পারছি। এই যে দ্রুত গতিতে আমাদের বিকাশ হচ্ছে, সেই বিকাশটা যাতে আরও সুন্দর হতে পারে, আরও উজ্জ্বল হতে পারে, সেটাই আমার আশা।’
আয়কর মেলা উৎসব পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে তিনিবলেন, ‘যারা এখানে কর দিতে এসেছে তাদের বিশেষভাবে অভিনন্দন। আপনারা মেলাটাকে স্বার্থক করে তুলেছেন। মেলাটা সত্যিকার অর্থেই মেলাতে পরিণত হয়েছে। আজকে যখন ঢুকলাম তখন দেখি মানুষের লম্বা লাইন, যাতে তারা এই মেলাতে আসতে পারে। অর্থাৎ এই মেলাতে কোনো ধরনের অবস্থান নেই যাতে আপনি অখুশি হবেন। খুশি হওয়ার জন্য এসেছেন, উৎসব করার জন্য এসেছেন। উৎসবের পরিবেশে আমরা আমরা থাকবো, সেটাই আমি আশা করি।’
এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে এতে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, মেলার সমন্বয়ক জিয়া উদ্দিন মাহমুদসহ এনবিআরের কর্মকর্তারা।
এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, মেলায় এসে সাধারণ জনগণ যেসব সুবিধা পায়, সহজে যেমন সেবা পায়, কর অফিসগুলোতেও একই রকম সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মেলা চলবে। ১৩ নভেম্বর শুরু হওয়া এ মেলা শেষ হবে আগামী ১৯ নভেম্বর।
এদিকে, প্রথম দিনেই সকাল থেকে উৎসবমুখর পরিবেশ মেলা প্রাঙ্গণে। মূল ফটক থেকে ভেতরে প্রবেশ করতে সকাল থেকেই দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। হেল্প ডেস্ক ও তথ্য কেন্দ্রে করদাতাদের উপচে পড়া ভিড়।
এমএ/এমবিআর/পিআর