জাতীয় সংসদ নির্বাচন পেছানোসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে আগামীকাল বুধবার নির্বাচন কমিশনে (ইসি) যাচ্ছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। এতে নেতৃত্ব দেবেন ফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন।
Advertisement
এছাড়া বেশকিছু বিষয় নিয়ে ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ করে ইসিকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আহ্বান জানানো হবে বলেও জানান ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলে অবস্থিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে ফ্রন্টের এক জরুরি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
যদিও প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ‘একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটের তারিখ পেছানোর আর কোনো সুযোগ নেই’ বলে জানিয়েছেন। মঙ্গলবার রাজধানীর নির্বাচন ভবনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ব্রিফিং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কে এম নূরুল হুদা এমন মন্তব্য করেন।
Advertisement
নির্বাচন না পেছানোর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ৩০ তারিখ (৩০ ডিসেম্বর) নির্বাচনের দিন নির্ধারিত হয়েছে। এরপর আর তারিখ পেছানোর সুযোগ নেই। প্রথম কারণ হলো, জাতীয় পর্যায়ে এতো বড় একটি নির্বাচনের পর ২৯ তারিখই কিন্তু সংসদ বসতে হবে। ফলে এটি বড় মাপের সময় নয়। কারণ নির্বাচনের পর ফলাফল আসবে, এরপর গেজেট করা। এই তিনশ আসনের গেজেট করার জন্য সময় লাগে।
দ্বিতীয়ত কারণ হলো, টঙ্গীর ইজতেমা হবে জানুয়ারির ১১ তারিখে। এ বিষয়ে আমাদের চিঠি দেয়া হয়েছে। এ সময় সারাদেশ থেকে আইশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আনতে হয়। যাতে কোনো সহিংসতা না ঘটে।
ঐক্যফ্রন্টের আজকের বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে ব্যবস্থাগুলো নেয়া উচিত সেগুলো নিতে ব্যর্থ হয়েছে। রেওয়াজ ছিল, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তফসিল ঘোষণা করা, কিন্তু তা করা হয়নি। আমরা এতে অত্যন্ত হতাশ হয়েছি।’
‘আমরা মনে করছি, নির্বাচন কমিশন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে আগ্রহী নয়।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘আমাদের যে দাবিগুলো ছিল, আলোচনা করে এক মাস তফসিল পিছিয়ে দেয়া, এটা অত্যন্ত জরুরি। এজন্য যে, যে সময়ে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে, সেই সময় বড়দিনের ছুটি থাকবে। এদিনে আমাদের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন, তারা উৎসবের আমেজে থাকবেন। এটা তাদের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান। এছাড়া নববর্ষ আসছে, সেটাও একটা বড় অনুষ্ঠান।’
‘তখন যে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসবেন, সেই সুযোগও থাকবে না যদি নির্বাচন ওই সময়টাতে (৩০ ডিসেম্বর) হয়। এছাড়া আরও কিছু বিষয় আছে, সেগুলো নিয়ে আগামীকাল দুপুর ১২টায় নির্বাচন কমিশনে আমরা আলোচনা করার জন্য যাবো।’
‘ড. কামাল হোসেনসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দও থাকবেন। আমরা আশা করবো, আমাদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ করে এ বিষয়ে ইসি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।’
ফ্রন্টের বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বৈঠকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে যে, আগামী ১৬ তারিখে ড. কামাল হোসেনসহ ঐক্যফ্রন্ট নেতারা জাতীয় প্রিন্টিং মিডিয়ার সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এরপর ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সঙ্গে বসবেন’ বলেও মির্জা ফখরুল জানান।
চলমান রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা এদিন জরুরি বৈঠকে মিলিত হন। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর মতিঝিলে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফা মোহসীন মন্টু, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন ও গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী।
জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদও বৈঠকে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে।
ইসিকে ঐক্যফ্রন্টের চিঠি
১৩ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর এ চিঠি দেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক। জোটটির মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে একটি রেওয়াজ ছিল যে, নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে তফসিল ঘোষণা করে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ক্ষেত্রে এ রেওয়াজ মানা হয়নি।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের সংলাপ শেষ হওয়ার আগেই তড়িঘড়ি করে নির্বাচন কমিশন একতরফাভাবে তফসিল ঘোষণা করে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে একমাস নির্বাচন পেছানোর দাবি করলেও সরকারের পরামর্শক্রমে নির্বাচন ৭ দিন পিছিয়ে পুনঃতফসিল ঘোষণা করা হয়।
এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি।’ এমতাবস্থায় সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন করার স্বার্থে আমরা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে আগামীকাল ১৪ নভেম্বর দুপুর ১২টায় আপনার দফতরে এসে নির্বাচনের তফসিলসহ সামগ্রিক বিষয়ে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলের মধ্যে থাকবেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আ স ম আব্দুর রব, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, মোস্তফা মোহসীন মন্টু, মাহমুদুর রহমান মান্না, সুলতানম মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, অ্যাড. সুব্রত চৌধুরী, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মোকাব্বির খান, এস এম আকরাম ও আবদুল মালেক রতন।
কেএইচ/এমএআর/এমআরএম/পিআর/এমএস