বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, ‘এখনও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের সামান্যতম পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ ছাড়াও নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা যাতে না থাকতে পারে সেজন্য ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন নির্ধারণ করেছে ইসি।’ তিনি বলেন, ২৫ ডিসেম্বর বড় দিন, থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষের কারণে বিদেশি পর্যবেক্ষক, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও কর্মকর্তারা ছুটিতে থাকবেন। সুতরাং তাদের দৃষ্টির অন্তরালেই একটি বড় ভোটচুরির নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে সরকারের কৌশলী নির্দেশেই ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন ঘোষণা করেছে ইসি।
Advertisement
মঙ্গলবার সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী।
রিজভী আহমেদ বলেন, ‘আমাদের পূর্বের দাবি অনুযায়ী নির্বাচন এক মাস পেছাতে হবে। পুনঃতফসিল দিতে হবে। এছাড়াও নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় ও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারে সব রাজনৈতিক দলকে সমান সুযোগ দিতে হবে।’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট মামলা দেয়া, গ্রেফতার-হয়রারি বন্ধের নির্দেশ দেয়া হলেও এখনও পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ভুয়া মামলা দায়ের করা হচ্ছে, গ্রেফতার করা হচ্ছে, তল্লাশির নামে বাড়িতে বাড়িতে হানা দিয়ে হুমকি দেয়া হচ্ছে।’
Advertisement
রিজভী বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে আদালতের নির্দেশে বিএসএমএমইউ (পিজি)-তে ভর্তি করে সরকারের নির্দেশে চিকিৎসা না দিয়েই আবারও কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। বর্তমানে তার কোনো চিকিৎসা চলছে না। নিয়মিত যে থেরাপি দেয়া হতো তা থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি গুরুতর অসুস্থ।’
খালেদা জিয়াকে নির্দোষ দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তাকে মাইনাস করার জন্যই কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আর কোনো কারণ নেই। এ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়া যতগুলো নির্বাচনে যত আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, সবগুলোতেই লাখ লাখ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন, অনেকেই তা পারেননি। এজন্যই বেগম জিয়ার প্রতি এতো প্রতিহিংসা। আমি এই মুহূর্তে বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।’
নির্বাচনে ইভিএম প্রসঙ্গে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্রদের ছাড়া বিএনপিসহ দেশের সব রাজনৈতিক দল, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী ও জনমতকে উপেক্ষা করে সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছিলেন সিইসি। কিন্তু দুদিন আগে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন ৮০ থেকে ১০০টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছেন। যা আরও গভীর চক্রান্ত বলেই সকলেই বিশ্বাস করছে।’
তিনি বলেন, ‘ইভিএম শুধু দেশেই বিতর্কিত নয়, ইভিএমে ভোট কারচুপি হয় বলেই পৃথিবীর প্রায় সবদেশেই এটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ভারতসহ যে দু-একটি দেশে সীমিত আকারে ব্যবহার করা শুরু হয়েছিল, সেখানেও জালিয়াতির কারণেই ইভিএম ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে উঠেছে। ভোট কারচুপি ও ভোট ডাকাতির এই মেশিন আরও ব্যাপকভাবে ব্যবহার করার এই সিদ্ধান্ত আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোট জালিয়াতিরই মহাপরিকল্পনা।’
Advertisement
রিজভী বলেন, ‘নির্বাচনে কোনো ইভিএম ব্যবহার করা চলবে না। ভোট ডাকাতির যন্ত্র ইভিএম ব্যবহারের এই মহাপরিকল্পনা থেকে সরে আসতে হবে। নির্বাচন কমিশনের সচিব বলেছেন-ইভিএম সেন্টারে সেনাবাহিনী নিয়োগ থাকবে। তার এই বক্তব্যে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। ইভিএম তো একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র, যা বহুদূর থেকে ম্যানিপুলেট করা যায়, তাহলে সেখানে সেনাবাহিনী নিয়োগ দিয়ে কী লাভ?
রিজভীর মতে, ম্যানুয়ালি ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যালট পেপার কেড়ে নেয়া, জোর করে সিল মারতে গুন্ডামি হয়। সুতরাং গুন্ডামি-সন্ত্রাসী ঠেকাতে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন। ক্ষমতাসীন দল ছাড়া দলমত-নির্বিশেষে ৩০০ আসনে প্রতিটি সেন্টারে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী নিয়োগের দাবি জানান তিনি।
কেএইচ/এসআর/পিআর