আন্তর্জাতিক

কান্নার জন্য ‘সুদর্শন’ পুরুষ ভাড়া!

বিচ্ছেদের পর একা একা কান্নায় আর আস্থা রাখতে পারছেন না মেয়েরা। তাই কান্নার জন্য টাকার বিনিময়ে সুদর্শন পুরুষের সান্নিধ্য নিচ্ছেন তারা। এমনই রেওয়াজ চালু হয়েছে জাপানে।

Advertisement

জানা গেছে ডিভোর্সের একাকিত্ব বা অন্য কোন কারণে কষ্ট পেলে সঙ্গে সঙ্গে কম্পিউটার বা ফোনের সামনে বসছেন জাপানি নারীরা, অনলাইনে করছেন হ্যান্ডসাম পুরুষের খোঁজ। এজন্য বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে তাদের।

বিষয়টিকে পুঁজি করে রীতিমতো ব্যবসা খুলে বসেছেন হিরোকি তেরাই নামে জাপানি এক উদ্যোক্তা। 

মানুষের মস্তিষ্কে পিটুইটারি নামে একটি গ্রন্থি আছে। দুঃখ বা কান্নার মুহূর্ত এলে টিয়ার গ্ল্যান্ডে সংকেত পাঠায় সেটি। তাতে চাপ পড়ে চোখের কোণ বেয়ে বেরিয়ে আসে পানি, যাকে আমরা বলি কান্না। কিন্তু জাপানি নারীদের একাংশের বিশ্বাস, সুদর্শন পুরুষ চোখের পানি মুছে দিলে নাকি কান্নায়ও সুখ পাওয়া যায়, দূর হয় দুঃখকষ্ট। 

Advertisement

এমন বিশ্বাসকে পুঁজি করে হিরোকি তেরাই নতুন ব্যবসা খুলে বসেছেন। তার প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করলে নারীরা কান্নার সময় ‘হ্যান্ডসাম উইপিং বয়’নামের সুদর্শন পুরুষ পৌঁছে যাবে তাদের কাছে। তারা সান্ত্বনা দেয়াসহ যত্ন করে নারীদের চোখের পানি মুছে দেবেন। 

জাপানি পরিভাষায় এই পদ্ধতির নাম ‘রুই-কাৎসু’। এ জন্য অনলাইনে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে বুক করতে হবে নিজের নাম ও কান্নার সময়। এরপর নির্ধারিত ঠিকানায় পৌঁছে যাবেন এক সুদর্শন যুবক। 

এ প্রসঙ্গে তেরাই জানান, এই ভাবনার কথা প্রথম মাথায় আসে জাপানি দম্পতিদের ডিভোর্সের সময়ের কথা ভেবে। সেখানে কিছু কিছু পুরুষ সপ্তাহ জুড়েই নানা অফিসিয়াল ও ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকায় স্ত্রীরা ডিভোর্সের আবেদন করেন। তখন সংসার ভেঙে যাওয়ার কষ্ট তাদের উভয়কেই পীড়া দেয়। 

তেরাইয়ের মতে দুঃখ ভুলে থাকার কায়দা নারী-পুরুষের আলাদা। সাধারণত পুরুষেরা সারাদিন নানা প্রমোদ, বিলাসিতা ও ঘুমিয়ে বা পরের সপ্তাহে কাজের পরিকল্পনা করে কাটিয়ে দেন। সে ক্ষেত্রে নারীরাই কান্নাকাটি করেন বেশি। তা দেখেই এই ব্যবসার কথা মাথায় আসে। 

Advertisement

তার মতে ডিভোর্সিদের সামনে যদি কোনো বিপরীত লিঙ্গের মানুষ থাকেন, তাহলে তারা অনেকটা ভরসা পাবেন, কান্নায় সমব্যথী হওয়ার জন্য মনের মতো মানুষ পাবেন। এতে একজন দুঃখী মানুষ সঙ্গীও পাবেন, আবার মেয়েদের মনের চাপও কমবে।

কিন্তু সুদর্শন পুরুষই কেন? -এমন প্রশ্নে তেরাই বলেন, সামনের মানুষ বদলে গেলে একই ঘটনায় মানুষের আচরণও অনেকটা বদলে যায়। সামনে আকর্ষক কেউ থাকলে মানুষ কোথাও জীবনের প্রতি একটু বেশি আশাবাদী হয়। তাই সুন্দর মুখকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।

এই অভিনব ব্যবসা শুরু করে দ্রুতই সাফল্য পান তেরাই। অল্প দিনের মধ্যেই তার এই ধারনা ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। শুধু তা-ই নয়, তার এই ভাবনাকে মূলধন করে ছবিও বানিয়ে ফেলেছেন দ্যারিয়েল থমস। ‘ক্রাইং উইথ দ্য হ্যান্ডসাম ম্যান’নামের স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবিতে তিনি এই তত্ত্বের ব্যাখ্যা ও বিশ্বাসকে তুলে ধরেছেন। 

যদিও জাপান জুড়ে বিপুল জনপ্রিয় হওয়া এই অভ্যাসকে ‘সেরিমনিয়াল অ্যাটিটিউড’ বা ‘উদযাপনের অভ্যাস’ হিসেবে মনেছেন করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

এমএমজেড/পিআর