প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির শতবর্ষ পালন করতে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে মিলিত হয়েছিলেন একাধিক বিশ্বনেতা। ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর এক চুক্তির মাধ্যমে এ যুদ্ধ সমাপ্ত হয়েছিল। সংঘাতের অবসান সংক্রান্ত সেই চুক্তি ‘আর্মিস্টিস’ নামে পরিচিত।
Advertisement
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ-সহ শীর্ষ নেতারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত লাখ লাখ অজ্ঞাতপরিচয় সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তাদের মধ্যে অনেকে একসঙ্গে প্যারিসের শঁজেলিজে সড়ক থেকে বিজয় তোরণ পর্যন্ত পদযাত্রায় অংশ নেন।
একশ’ বছর আগের পরিস্থিতি আজও কতটা প্রাসঙ্গিক তা মনে করিয়ে দেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে উগ্র জাতীয়তাবাদের উত্থান আবার মানবজাতির জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
মাক্রোঁ বলেন, “জাতীয়তাবাদ দেশাত্মবোধের একেবারে বিপরীত। জাতীয়তাবাদ আসলে দেশাত্মবোধের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। যখন আমরা বলি, ‘সবার আগে আমাদের স্বার্থ দেখতে হবে, বাকিদের নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই’ -সেই মুহূর্তে আমরা জাতির সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ -অর্থাৎ নৈতিক মূল্যবোধ মুছে দেই।”
Advertisement
রাজনৈতিক মতাদর্শ, ধর্ম ও তথ্য উপেক্ষা করার প্রবণতার ফায়দা তোলার প্রচেষ্টা সম্পর্কেও সতর্ক করে দেন মাক্রোঁ৷ তার মতে, প্রায়ই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা দেখা যায়।
‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রবক্তা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অত্যন্ত গম্ভীর মুখে সেই ভাষণ শুনছিলেন। সম্প্রতি মিডটার্ম নির্বাচনের প্রচারে তিনি গর্বের সঙ্গে নিজেকে ‘জাতীয়তাবাদী’ হিসেবে তুলে ধরেছেন।
সরাসরি তাকে উদ্দেশ্য করে মাক্রোঁ এমন বক্তব্য না রাখলেও উপস্থিত নেতাদের মধ্যে তিনিই যে উগ্র জাতীয়তাবাদের উত্থানের সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত, তা নিয়ে কারো মনে সন্দেহ ছিল না। গোটা সফর জুড়ে ট্রাম্প মাক্রোঁ-সহ বাকি নেতাদের যতটা সম্ভব এড়িয়ে গেছেন।
শীর্ষ নেতাদের পদযাত্রায়ও তিনি অংশ নেননি। অতীতে প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁর সঙ্গে ব্যক্তিগত উষ্ণতার যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, এবারের সফরে তার কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি। বাকি নেতারাও ট্রাম্পের প্রতি কোনো বিশেষ উষ্ণতা দেখাননি।
Advertisement
এদিকে প্যারিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়ার পর বিমান থেকেই এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প মাক্রোঁর একটি প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করেছেন। ইউরোপীয় স্তরে এস যৌথ সেনাবাহিনী গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার উদ্যোগ নস্যাৎ করে ট্রাম্প আবার সামরিক জোট ন্যাটোয় ইউরোপীয় দেশগুলির যথেষ্ট আর্থিক অবদানের অভাবের সমালোচনা করেছেন।
তবে মাক্রোঁর সুরে সুর মিলিয়ে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল পারস্পরিক সহযোগিতার উপর জোর দেন। তার মতে, কোনো দেশের পক্ষে একা বড় সমস্যাগুলোর সমাধান করা সম্ভব নয়।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অবশ্য এক সাক্ষাৎকারে ইউরোপীয় স্তরে সামরিক বাহিনীর প্রস্তাবের প্রতি নরম মনোভাব দেখিয়েছেন। তার মতে, রাজনৈতিক ঐক্যের পর পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে ঐক্যের উদ্যোগের প্রচেষ্টা ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য অত্যন্ত স্বাভাবিক পদক্ষেপ। সূত্র : ডয়েচে ভেলে
আরএস/পিআর