অর্থনীতি

তিন মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ৩২ হাজার কোটি টাকা

রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি থাকলেও বেড়েছে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সামগ্রিক বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৮৫ কোটি ২০ লাখ ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩২ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা।

Advertisement

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণসহ বড় বড় প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্পের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম জোগান দিতেই আমদানি করতে হচ্ছে। রফতানি যে হারে বেড়েছে, আমদানি বেড়েছে তার প্রায় দেড়গুণ। ফলে রেমিট্যান্সের কিছুটা ইতিবাচক পরিস্থিতি সত্ত্বেও বহির্বিশ্বের সঙ্গে লেনদেনে বাংলাদেশের অবস্থার অবনতি হচ্ছে। বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি। যার কারণে ডলারের চাপ বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করা হালনাগাদ প্রতিবেদনে তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তৃতীয় মাস শেষে ইপিজেডসহ রফতানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৯৭৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে এক হাজার ৩৫৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে সেপ্টেম্বর শেষে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় ৩৮৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (বিনিময় হার ৮৪ টাকা দরে) ৩২ হাজার ৩৫৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। যা গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময় ছিল ৩৬৫ কোটি ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাব (-) ঋণাত্মক রয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এ (-) ঋণাত্মক কমেছে। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে চলতি হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৩৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৮১ কোটি ৯০ লাখ ডলার। তবে এক মাসের ব্যবধানে চলতি হিসাব ঋণাত্মক বেড়েছে। অর্থবছরের প্রথম দ্বিতীয় আগস্টে শেষে ঘাটতি ছিল ৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

Advertisement

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো।

এদিকে আলোচিত সময়ে সেবাখাতে বেতন-ভাতা বাবদ বিদেশিদের পরিশোধ করেছে ২৩৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। আর বাংলাদেশ এ খাতে আয় করেছে ১৫৯ কোটি ২০ লাখ ডলার। এ হিসাবে সেবায় বাণিজ্যে দেশে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮০ কোটি ডলার। যা গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল (ঘাটতি) ১০৫ কোটি ডলার। প্রথম তিন মাসে প্রবাসীদের আয় রেমিট্যান্স এসেছে ৩৮০ কোটি ৭০ লাখ ডলার, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৩৩১ কোটি ৯০ লাখ ডলার। রেমিট্যান্স প্রবাহে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আলোচিত সময়ে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ৭২ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেশি। এদিকে এফডিআই বাড়লেও দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাপক হারে কমেছে। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে শেয়ারবাজারে মাত্র ২ কোটি ৯০ লাখ ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। যা তার আগের অর্থবছরে ছিল ১৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

এদিকে দীর্ঘদিন স্থিতিশীল থাকার পর অক্টোবরে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অক্টোবরের আন্তঃব্যাংক ডলারের দামে বেড়েছে ৮ পয়সা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে ৮৩ টাকা ৮৫ পয়সা দরে।

Advertisement

এসআই/জেএইচ/আরআইপি