‘এটাই আমার টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস।’ সরাসরি এমন কথা বলেননি। তবে মুমিনুল হকের অনুভব, উপলব্ধি এটা তার জীবনের অন্যতম সেরা ইনিংস ছিল এটি। কেন অন্যতম সেরা? দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে তার সুষ্পষ্ট ও পরিষ্কার ব্যাখ্যা দিতে না পারলেও হাবভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন, আজকের শতকটি অনেক কারনেই চ্যালেঞ্জিং।
Advertisement
পরিবেশ-প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতি বিবেচনায় এ ইনিংসটি তার কাছে অন্যরকম হয়ে থাকবে। প্রথম ও শেষ কথা, দলের এবং তার নিজের খারাপ সময় যাচ্ছে। আগের চার টেস্টের আট ইনিংসে টিমে দলের একবারের জন্য দু’শোর ঘরে পৌঁছেনি।
তার নিজের ব্যাটও কথা বলেনি। এ বছর জানুয়ারিতে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে উভয় ইনিংসে (১৭৬ + ১০৫) শতরানের পর থেকেই রান খরা। আট ইনিংসে (০+৩৩+১+০+০ ১৫+১১+৯) সাকুল্যে ৬৯ রান।
এর সাথে আগের টেস্ট হারের দগদগে ঘা যোগ হয়েছে। এ ম্যাচেরও শুরুটা ভাল হয়নি। চরম অনিশ্চিত যাত্রা ছিল সকালে। ২৬ রানেই (ইমরুল, লিটন আর মিঠুন) তিন-তিনজন প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যান সাজঘরে। কাইল জার্ভিস ও চাতারার দ্রুত গতি আর বিষাক্ত সুইং রীতিমত চিন্তার ও শঙ্কার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছিল।
Advertisement
এতগুলো প্রতিকুলতা এবং নেতিবাচক পরিস্থিতির মধ্যে মাথা তুলে দাঁড়ানো খুব কঠিন। তারওপর আবার প্রতিপক্ষ জিম্বাবুইয়ান বোলাররা চেপে বসেছিলেন- এরকম এক জটিল পরিস্থিতি আর কঠিন সংকটেও মুমিনুলের ব্যাট থেকে আসলো ১৬১ রানের অসামান্য ইনিংস।
যা শুধু সংকট, বিপদ ও চাপ কাটাতেই সাহায্য করেনি, দিন শেষে বাংলাদেশের স্কোর বোর্ডটাকেও করেছে ভদ্রস্থ। এমন এক কার্যকর ইনিংস খেলা তাই বড় এক স্বস্তি। সন্তুষ্টিরও।
কিন্তু প্রথম দিন শেষে প্রেস কনফারেন্স রুমে মুমিনুলকে দেখে তা মনে হয়নি। খেলা না দেখা দিন শেষে শেরে বাংলার কনফারেন্স হলে মুমিনুলের সংবাদ সম্মেলন দেখে কারো বোঝার উপায় ছিল না, এই ছোট-খাট গড়নের ব্যাটসম্যান অল্প কিছুক্ষণ আগেও দারুণ এক ইনিংস খেলে এসেছেন।
নিজের ব্যাটিংয়ের প্রশংসা-স্তুতি গাওয়া বহুদুরে, দিন শেষে মুমিনুলের মুখে বরং মুশফিকের প্রশংসাই শোনা গেল বেশি। তার ব্যাটিং এবং লম্বা ইনিংসটি সম্পর্কে বলতে গিয়ে কক্সবাজারের এ ২৭ বছর বয়সী যুবার কন্ঠে মুশফিকের প্রশংসাই বেশি। তার ধারনা, মুশফিকুর রহীমই তাকে গাইড করেছেন। তার পরামর্শ ও সঙ্গ এমন দীর্ঘ ও ভাল ইনিংস খেলার পিছনে রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
Advertisement
তাইতো কন্ঠে এমন কথা, ‘মুশফিক ভাই খুব সাহায্য করেছেন। তিনি আমাকে ভালো গাইড করেছেন। আমি মাঠে অনুভব করেছি কেন তিনি বাংলাদেশের সেরা পাঁচ ক্রিকেটারের একজন। মাঠে খেলার সময় এই জিনিসটা আমাকে খুব নাড়া দিয়েছে। উনার কিছু কিছু অ্যাডভাইজ, গাইডেন্স অনেক ভালো ছিল। যা ব্যাটিংয়ের সময় অনেক সাহায্য করেছে। আমার ইনিংসে তার সাহায্যটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’
দুঃসময়ে, সংকটে ও চাপে কি করে প্রতিপক্ষ বোলারদের চেপে বসা অবস্থায় দাঁতে দাঁত কামড়ে উইকেটে টিকে থাকতে হয়, সরাসরি আক্রমণে না গিয়ে পরিবেশ-পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগে সেশন টু সেশন খেলার চিন্তা ও চেষ্টা প্রয়োজন- বোঝাই গেল মুমিনুলকে সেই বুদ্ধি ও পরামর্শই দিয়েছেন সিনিয়র পার্টনার মুশফিক।
কিন্তু মাঠের চালচিত্র অন্য কথাও বলছে। শুধু মুমিনুলের রান খরা কাটানোয় পরামর্শক হওয়াই নয়, বাংলাদেশের সংকট কাটাতেও এ ম্যাচে মুশফিকের অবদান যথেষ্ট। তার আর মুমিনুলের পার্টনারশিপটিই আসলে বাংলাদেশকে দিন শেষে স্বস্তি উপহার দিয়েছে।
যেখানে আগের চার টেস্টের আট ইনিংসে পুরো দল ২০০ করতে পারেনি, সেখানে ২৬ রানে তিন উইকেট হারানো যে আবার খাদের কিনারায় পড়ে যাওয়া। অমন বিপদে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ২৬৬ রানের রেকর্ড পার্টনারশিপ শুধু বড়ই নয়, হিমালয় সমানও। সামনে এগিয়ে যাবার বড় পাথেয়ও।
যদিও সংখ্যা তত্ত্বে জুটির ৬০ ভাগের বেশি রান মুমিনুলের, তারপরও মুশফিকের ১১১ রানের হার না মানা ইনিংসটিও ভুমিকাও যে কম নয়। বড়। অনেক বড়। সত্যিই তো, উইকেটে মুশফিকের মত একজন দক্ষ, কুশলী, অভিজ্ঞ, পরিণত আর পরিশ্রমী যোদ্ধাকে বড় একটা সময় সঙ্গী হিসেবে পাওয়া যে অনেক কিছু। তাই তো মুমিনুলের মুখে মুশফিকের এত প্রশংসা।
এআরবি/আইএইচএস/পিআর