ভারতে গান্ধী পরিবারই সম্ভবত একমাত্র রাজনৈতিক পরিবার; যারা বিশাল এই দেশটিতে পারিবারিক প্রথম ব্র্যান্ড নাম হিসেবে পরিচিত। ভারতের প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দারাও সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর নামের সঙ্গে পরিচিত।
Advertisement
ভারতীয় এ পরিবারটি সম্পর্কে সবাই জানলেও প্রকৃতপক্ষে আমরা গান্ধী পরিবারের সবার সম্পর্কে খুব কম জানি। তবে এখন সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটি দেখা দিয়েছে সেটি হলো, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী কী রাজনীতিতে যোগ দেবেন কিংবা তিনি কী প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য নির্বাচনে লড়াই করতে যাচ্ছেন? ভারতীয় কংগ্রেসের এক নেতা ব্যক্তিগতভাবে প্রিয়াঙ্কাকে ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী চমৎকার একজন বক্তা। তিনি তার মা সোনিয়া গান্ধী ও ভাই রাহুল গান্ধীর মতো নন। প্রিয়াঙ্কার আচরণ, ব্যক্তিত্ব ও চলাফেরা তার দাদি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মতো। ইন্দিরা গান্ধী এখনও ভারতীয়দের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর প্রচুর ধৈর্য্য ও সহ্যক্ষমতা রয়েছে। কেননা তিনি বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষা করেছেন তার ভাই রাহুল গান্ধী রাজনীতিতে পরিপক্ব হয়ে উঠবেন। ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টি গান্ধী পরিবারকে ব্যাপক শ্রদ্ধা করে।
আরও পড়ুন : বেঁচে আছেন খাশোগি, দাবি আমিরাত পুলিশ প্রধানের
Advertisement
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইংরেজি দৈনিক গালফ নিউজের প্রতিনিধি স্বতী চতুর্বেদী এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলেছেন, আমি দীর্ঘদিন ধরেই এ বিষয়টি নিয়ে জানার চেষ্টা করেছি যে, গান্ধীকে কে ভালো জানেন। কিন্তু অনেকে বলতে চাইলেও তাদের একটাই শর্ত কোনোভাবে তাদের নাম প্রকাশ করা যাবে না।
রবার্ট ভদ্র নামের এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। তাদের ঘরে একটি ছেলে ও মেয়ে আছে। আমি তার একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। তাকে আমার বেশ সহজ-সরল ও নরম হৃদয়ের মানুষ বলেই মনে হয়েছে। ২০১৪ সালে বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ক্ষমতা গ্রহণের ১০ দিনের মাথায় তিনি দুর্নীতির দায়ে ভদ্রকে কারাগারে পাঠাবেন। কিন্তু মোদির ক্ষমতা গ্রহণের চার বছর পার হয়ে গেলেও এখনো তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। গান্ধী পরিবারে ভদ্রর রিয়েল এস্টেট ব্যবসা নিয়ে বেশ আলোচনা হয়।
স্বতী চতুর্বেদী লিখেছেন, সাক্ষাৎকারের পর আমি এটা বুঝতে পারলাম ভদ্র জনসম্মুখে আসতে চান; কিন্তু তাকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি সরাসরি না বলে দেন আমাকে। এদিকে, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও সেভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটিসহ দলটির সমস্ত নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত থেকে তিনি নিজেকে সরিয়ে রাখছেন।
আরও পড়ুন : ভারতকে মুসলিমরাই বেশি দিয়েছে : যোগীর মন্ত্রী
Advertisement
সাম্প্রতিক তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল উত্তর প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন। যেটা মূলত কংগ্রেসের জন্য এক বিপর্যয়। তিনি ওই নির্বাচনের মাঝামাঝি সময়ে এসে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন। তার একমাত্র ছেলের দুর্ঘটনা ও তার সেবাযত্নের কারণ দেখিয়ে তিনি নিজেকে সরিয়ে নেন।
আর এসব বিষয় বিশ্লেষণ করে বোঝা যাচ্ছে, প্রকৃত ঘটনা হলো তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় না হওয়ার কারণে উত্তর প্রদেশের নির্বাচেন তার সীমাবদ্ধতাগুলো দেখা যায়। তার বদমেজাজি মনোভাব ও অতি আত্মবিশ্বাস হলো আরেকটা বড় সমস্যা। এ বিষয়ে রাহুলকেও কৃতিত্ব দেয়া উচিত; কেননা তিনি তাকে সকল উপায়ে চলে যাওয়ার রাস্তাটি তৈরি করে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন : শ্রীলঙ্কায় ক্ষমতা দখলের লড়াই
তাদের দুই ভাইবোনের সম্পর্ক ও মা সোনিয়া গান্ধীকে নিয়ে দিল্লির অলিতে গলিতে আলোচনা হচ্ছে। প্রিয়াঙ্কা গান্ধী অনেক দিন থেকে উত্তর প্রদেশের রাইবেরেলি জেলায় মায়ের আসন থেকে নির্বাচন করতে মাকে রাজি করানোর চেষ্টা করছেন। যদি তিনি ২০১৯ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তাহলে হয়তো এখান থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তিনি।
প্রিয়াঙ্কা যে এই আসন থেকে নির্বাচন করবেন সেটা তার পরিবারের এক ঘনিষ্ঠজনের মাধ্যমে জানা যায়। তবে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী যদি আনুষ্ঠানিকভাবে পুনরায় রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করেন; তাহলে ৪০ বছর বয়সে এসে সেটি হবে তার নতুন রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু। সুতরাং ভদ্রকে নিশানা করে নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের আক্রমণের শিকারও হতে পারেন তিনি।
এসএ/এসআইএস/পিআর