বিনোদন

তারকাদের রাজনীতি নিয়ে এত সমালোচনা কেন?

রাজনীতিতে তারকাদের সম্পৃক্ততা নতুন কিছু নয়। বহুকাল ধরেই এই সংস্কৃতি চালু আছে দেশে দেশে। আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে নাম লেখাচ্ছেন একঝাঁক তারকা। আওয়ামী লীগে তারকাদের আধিক্য দেখা দিলেও সংখ্যাটা কম ভারী নয় বিএনপিতে।

Advertisement

কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো তারকাদের রাজনীতিতে আসা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা রকম সমালোচনা। কেন তারকারা রাজনীতিতে আসছেন? কিন্তু আদতে এটা কী সমালোচনার কোনো বিষয় হতে পারে?

সবকিছুতে বিভক্ত হওয়া, বিভ্রান্তি ছড়ানো, নিজের মতামত অন্যের উপরে চালিয়ে দেয়া, গুজব ছড়ানোর বাজে স্বভাব আমাদের রয়েছে। তারকারা নির্বাচন করবে কি-না সেটার জন্য রায় ভক্তরা কেন দেবেন?

একজন তারকা হয়ে উঠার পেছনে যে সংগ্রাম তার সঙ্গে কী কোনোভাবে সম্পৃক্ত থাকেন কোনো ভক্ত? তারকা নিজেকে সংগ্রাম করে একটি জায়গায় নিয়ে গেলে তারপর তার ভক্ত তৈরি হয়! ভক্তরা তারকার তারকাজীবন, পেশাজীবন নিয়ে মাতামাতি করবে। তার ব্যক্তিজীবন নয়। ব্যক্তিজীবনে যদি তিনি অন্যায় করেন, অপরাধ করেন তবে কথা বলুন।

Advertisement

নিশ্চয় এই দেশে রাজনীতি অন্যায় বা অপরাধ নয়। তবে চিত্রনায়ক ফারুক, কবরী, আসাদুজ্জামান নূর, তারানা হালিম, কনক চাঁপা, মমতাজ, মনির খান, বেবী নাজনীন, ফেরদৌস, শাকিল খান, মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, শাকিব খান, রোকেয়া প্রাচীদের রাজনীতির খবরে আপনি বা আপনারা এত উত্তেজিত কেন, কষ্টের সাগরে ভেসে যাচ্ছেন কেন?

তারকারা তাদের জীবনের সাফল্য হিসেবে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠাকে ভাবতেই পারেন। সেটা তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভক্তরা কেন কান্নার ইমো দিয়ে লিখছেন ‘হায়, ম্যাশ কেন রাজনীতিতে নাম লেখালে?’, ‘হায় সাকিব কেন এভাবে বিক্রি হয়ে গেল?’, ‘তোমাদের ভালোবাসতাম, রাজনীতিতে আসার পর আর ভালোবাসি না’। কেন?

প্রতিটি সফল মানুষই দেশের জন্য অবদান রাখার নানা পথ খুঁজেন। রাজনীতি হতে পারে সেই ভাবনার সেরা একটি পথ। আসাদুজ্জামান নূর, তারানা হালিমরা তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মাশরাফিসহ অন্যরাও সফল হোক সেই প্রত্যাশা করি। আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে পরিণত বয়সে মাশরাফিকে দেখতে চাই। সেটা দেখা আমার জন্য গর্ববোধের বিষয় হবে।

কথা হলো, ভক্তরা কেন হাহাকার করছেন? কেন এই ধরনের শস্তা কথা বলা হয় যে তারকারা সর্বজনীন, তার রাজনীতি করা উচিত নয়? তারকারা অনুকরণীয় বলেই সর্বজনীন। কে চাইবে না একজন সর্বজনীন প্রিয় মানুষ দেশের চালিকাশক্তির মজবুত একটি পিলার হোক?

Advertisement

যদি কেউ না চায় তবে হয় তিনি ভন্ড দেশপ্রেমিক, তারকাপ্রেমিক অথবা ভক্তের আবেগে আড়ালে তার রাজনৈতিক মুখোশ আছে। যারা আওয়ামী বিরোধী তারা পছন্দ করছেন না যে তারকারা দলে দলে আওয়ামী লীগে ঢুকছে।

একইভাবে অন্য কোনো দলে গেলেও সমালোচনা করা হবে রাজনৈতিক অবস্থান থেকেই। যদি তাই হয় তবে সমালোচনাটা রাজনৈতিক অবস্থান পরিস্কার করে করা উচিত। ভক্তের আবেগে তারকাদের রাজনীতির সমালোচনা করা ঠিক না।

দেশে দেশে তারকাদের রাজনীতির বহু নজির আছে। বহু তারকা ভারতে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। শচীনের মতো অহিংস মানুষকেও কংগ্রেস সরকার সংসদ সদস্য বানিয়েছিলো সম্মান জানাতে। এছাড়াও হেমা মালিনীর মতো তারকারা সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত।

আমেরিকার বিখ্যাত বডি বিল্ডার, অভিনেতা আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারও সক্রিয়াভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন। তিনি রিপাবলিকান পার্টির হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ৩৮তম গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার জনপ্রিয়তা কমেনি।

একজন তারকা সারা দেশের, সবার। আর যখন নির্বাচনে নামেন তখন তিনি তার নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধি। তাকে নিয়ে রাজনৈতিক সমালোচনা ওই এলাকার লোকে করবে। ভক্ত বা আমি আপনি কেন? আমরা করবো যখন তিনি রাজনৈতিকভাবে জাতীয় পর্যায়ে ভুল করবেন, দেশকে বিপথে নেবেন, অন্যায়ে যুক্ত হবেন।

অনেকেই বলছেন, তারকারা রাজনীতিতে এলে প্রতিপক্ষ রাজনীতি দলের প্রতিবন্ধকতার শিকার হন। একজন তারকা যথেষ্ট বুদ্ধিমান। তিনি নিজে যদি সেটা হজম করে আসতে পারেন তবে সাধারণ মানুষের এত দুশ্চিন্তা কেন! এটা কী নিজের পছন্দের দলের রাজনীতি না করার জন্যই?

জানা গেছে, সাকিব আল হাসান ও শাকিব খান ভক্তদের আক্রমন-আবদারের মুখে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দাঁড়িয়েছেন। এটা কাম্য নয়। যদি তাদের ইচ্ছে থাকে তবে নির্বাচনে আসা উচিত। রাজনীতির মাঠ সাহসীদের জন্য, দেশপ্রেমিকের জন্য সবসময়ই খোলা।

সমালোচনা বাদ দিয়ে চলুন আমরা নির্ভার থাকি। যার জীবন তাকে সিদ্ধান্ত নিতে দেই। তারকা আমার। কিন্তু তারকার রাজনৈতিক আদর্শটা তার একান্ত।

এলএ/পিআর