রাজনীতি

আট বছর পর এবার নৌকার মাঝি হতে চান মনজুর!

গুঞ্জনটা বেশ পুরোনো হলেও বরাবরই রাজনীতিতে ফেরার কথা অস্বীকার করে আসছিলেন চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মনজুর আলম। আট বছর আগে আওয়ামী লীগ ত্যাগ করা মনজুর রাজনীতি থেকে পাকাপাকিভাবে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে। কিন্তু রাতারাতি বিএনপিসমর্থিত মেয়র ও দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা বনে যাওয়া মনজুর আলম এবার চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং ও হালিশহর) আসনে নৌকার মাঝি হতে চান।

Advertisement

এজন্য শনিবার (১০ নভেম্বর) ঢাকার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়নের ফরম সংগ্রহ করেছেন তিনি। মনজুর আলমের পক্ষে মনোনয়ন ফরমটি সংগ্রহ করেন তার চাচাতো ভাই আবুল কালাম আজাদ।

মনজুর আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সাড়ে তিন বছর ভারপ্রাপ্ত মেয়র এবং পাঁচ বছর নির্বাচিত মেয়র ছিলাম। এসব দায়িত্ব পালনকালে নগরবাসীকে অনেক সেবা দিয়েছি। তাই আবারও মানুষের কাছে যেতে চাইছি। আজ (শনিবার) ঢাকা থেকে একটি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছি।’

মোহাম্মদ মনজুর আলম নগরীর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড থেকে ১৯৯৪ সাল থেকে পরপর তিনবার ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচিত হন। এই পুরো সময় চট্টগ্রামের মেয়র ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। ওয়ার্ড কমিশনার হিসেবে তিনি ছিলেন মেয়র মহিউদ্দিনের খুবই আস্থাভাজন।

Advertisement

এ কারণে তিনবারের মেয়র মহিউদ্দিন ৯ বার ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দিয়েছিলেন মনজুর আলমকে। সর্বশেষ ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দশমবারের মতো ভারপ্রাপ্ত মেয়র হয়ে একটানা ১৮ মাস দায়িত্ব পালন করেন। আর এই পুরো সময় জেলখানায় ছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী।

মূলত এই দেড় বছরের ঘটনা পরম্পরাই দুজনের গুরু-শিষ্যের সম্পর্কে বড় ধরনের চিড় ধরায়। মহিউদ্দিন চৌধুরী অবিশ্বাস করতে শুরু করেন মনজুর আলমকে। ফলে জেল থেকে বের হয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরী পুনরায় মেয়রের দায়িত্ব নিলেও সেই মেয়াদে কমিশনার হিসেবে আর একদিনের জন্যও নগরভবনে যাননি মনজুর আলম।

২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। আর বিএনপির সমর্থন নিয়ে প্রার্থী হন মনজুর আলম। ওই বছরের ১৭ জুনের নির্বাচনে গুরু মহিউদ্দিন চৌধুরীকে এক লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দেন শিষ্য মনজুর আলম। পুরস্কার হিসেবে জোটে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ।

তবে বিএনপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েই যায়। এমনকি নিজ অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে একটি স্কুলও যথানিয়মে চালাতে থাকেন। এ নিয়ে বিএনপির নেতারা প্রকাশ্যে সমালোচনা করলেও নিজের মত বদলাননি মনজুর আলম।

Advertisement

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তিনি আবারও বিএনপির সমর্থনে মেয়র প্রার্থী হন। কিন্তু ভোট শুরুর তিন ঘণ্টার মাথায় নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন ও রাজনীতি থেকে নিজেকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন মনজুর আলম।

কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই ২০১৬ সালের ১ অক্টোবর বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ফাউন্ডেশনের এক অনুষ্ঠানে সমাজসেবায় অবদান রাখার জন্য প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতাদের স্বীকৃতি দেয়া হয়। সে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।

পরবর্তীতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের আরও একটি অনুষ্ঠানে মনজুর আলম হাজির হন। ওই অনুষ্ঠানে মহিউদ্দিন চৌধুরী জাতীয় পতাকা এবং মনজুর আলম আওয়ামী লীগের দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এরপরই চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর গুঞ্জন শুরু হয়, আওয়ামী লীগে ফিরছেন মনজুর। তবে রাজনীতি নিয়ে বরাবরই চুপচাপ ছিলেন মনজুর আলম।

এসআর