পৃথিবী রং-তামাশার জায়গা নয়। আর তা এমনিতেই সৃষ্টি হয়নি। এ জগত তৈরির পেছনে রয়েছে মহান আল্লাহর সুনির্দিষ্ট মহা পরিকল্পনা। এ সৃষ্টিজগত একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। আল্লাহ ছাড়া মৃত্যুর হাত থেকে কেউ বাঁচতে পারবে না। আল্লাহ বলেন-‘জীবনের অস্তিত্ব আছে এমন সবাইকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।’
Advertisement
হজরত ইসরাফিল আলাইহিস সালামের সিংগার ফুৎকারে সমগ্র জগত ধ্বংস হয়ে যাবে। পর্যায়ক্রমে মৃত্যুর ফেরেশতা ‘মালাকুল মাওত’সহ সবাইকেই মরতে হবে। এ মৃত্যুর আগেই পরকালের সম্বল সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা।
যারা পরকালের সম্বল সংগ্রহ করতে পারবে, তারাই সফলকাম। কেননা মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ভালো কাজের পথ বন্ধ হয়ে যায়। তবে পাঁচটি উপায়ে মৃত মানুষ উপকৃত হবে। আর তাহলো-
> জানাযাজানাযা হলো মৃত ব্যক্তির জন্য। তাই মৃত ব্যক্তিকে জানাযা দেয়া। মৃতব্যক্তির উপকারার্থে প্রিয়নবি জানাযায় অংশগ্রহণকারীর জন্য উপকারিতার ঘোষণা দিয়েছেন।
Advertisement
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, যদি কোনো মুসমানের লাশের ওপর ৪০জন এমন ব্যক্তি জানাযার নামাজ পড়ে, যারা আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করে না। তাদের সুপারিশ (দোয়া) ওই মৃতব্যক্তির জন্য কবুল করা হয়।’ (আবু দাউদ)
আরও পড়ুন > কবর জিয়ারতে উপকার বেশি কার : মৃতব্যক্তির না জিয়ারতকারীর?
> জীবদ্দশায় সমাজ কল্যাণমূলক কাজ করাযে ব্যক্তি মৃত্যুর আগে এমন কাজ করে যায়, যা সাদকায়ে জারিয়া হিসেবে গ্রহণযোগ্য হয়। সে কাজের সাওয়াব সে মৃত্যুর পরও লাভ করতে থাকবে। আর তাহলো-- অন্যকে উপকারি জ্ঞান শিক্ষাদান- উপাসনার জন্য ইবাদতখানা তথা মসজিদ নির্মাণ- এমন স্থাপনা নির্মাণ করা; যার সুবিধাভোগকারী তা নির্মাণে ব্যর্থ।- অন্যান্য সামাজিক ধাতব্য সংস্থা স্থাপন। যা দ্বারা অসহায় ও সাধারণ মানুষ উপকার লাভ করবে। এসব কাজের সমর্থনে হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুমিন ব্যক্তির ইন্তেকালের পরে যে সব আমল ও নেক কাজ তার সঙ্গে মিলিত হবে, তাহলো-- ইলম; যা সে অন্যকে শিক্ষা দিয়েছে এবং তার প্রচার প্রসার করেছে।- তার রেখে যাওয়া নেক সন্তান এবং- কুরআন যাকে উত্তরাধিকারী বানিয়েছে অথবা মসজিদ নির্মাণ করেছে কিংবা পথিকদের জন্য সরাইখানা তৈরি করেছে। অথবা পানির নহর খনন করেছে। জীবদ্দশায় সুস্থ থাকাকালীন দান-সাদকা করেছে। এ জিনিসগুলো সাওয়াব সে মৃত্যুর পরও পেতে থাকবে।’ (ইবনে মাজাহ)
Advertisement
> মৃত (শিশু) সন্তানযদি কারো কোনো সন্তান মারা যায়। আর তারা যদি ভালো কাজ করে কিংবা এসব শিশুদেরকে ছোট সময়ে ভালো কোনো কাজের শিক্ষা দেয়; তবে তারা সে সব ভালো কাজের সাওয়াব লাভ করবে। এ সব ছোট ছোট শিশুরা মৃত বাবা-মার জন্য দোয়া করবে। হাদিসে এসেছে-
এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, ‘হঠাৎ আমার মা মারা গেছেন। আমার মনে হয় তিনি যদি কথা বলতে পারতেন। তবে তিনি দান-সাদকার কথা বলতেন। আমি কি তার পক্ষ থেকে দান করতে পারি? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’, তুমি তোমার মায়ের পক্ষ থেকে দান করতে পার।’ (বুখারি)
আরও পড়ুন > মানুষ কর্মফল জীবদ্দশায় পাবে নাকি মৃত্যুর পর?
> মৃতব্যক্তির ঋণ ও প্রতিশ্রুতি পূরণমৃতব্যক্তির যদি কোনো ঋণ থাকে তবে তার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে অবশ্যই তার ঋণ পরিশোধ করতে হবে। অতঃপর তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে। যদি মৃতব্যক্তি সম্পদ রেখে না যায় আর তার সন্তান-সন্তুতি থাকে তবে তারা মৃতব্যক্তির ঋণ পরিশোধ ও প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে। হাদিসে এসেছে-
জুহাইন গোত্রের এক নারী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসলেন এবং বললেন, আমার মা হজ পলনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। কিন্তু সে হজ করার আগেই মারা যায়। আমি কি আমার মায়ের পক্ষ থেকে হজ সম্পাদন করতে পারি?রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি উত্তরে বললেন, ‘তুমি তার পক্ষে হজ পালন কর। যদি তোমার মায়ের কোনো ঋণ থাকতো তবে তুমি তা পরিশোধ করতে কিনা? এটা আল্লাহর ঋণ; তুমি তার পক্ষ থেকে এ ঋণ পরিশোধ কর।’ (বুখারি)
> মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করামৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা। যখনই কোনো মৃত আত্মীয়-স্বজনের কথা স্মরণ হয় কিংবা তাদের কবরের পাশ দিয়ে অতক্রিম করা হয়; তখনই তাদের জন্য দোয়া করা। অথবা যে কোনো কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সব মৃতব্যক্তির জন্য দোয়া করা।
মৃত ব্যক্তির জন্য জীবিত মানুষের এ সব দোয়া অনেক উপকারি। জীবিত ব্যক্তির জন্যও মৃত ব্যক্তির কবর পরিদর্শন মৃত্যু ও নেক আমলের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। যখনই মানুষ কবর পরিদর্শের ফলে নেক আমল করে তাতে উভয়ের উপকারিতা লাভ হয়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত বিষয়গুলোর মাধ্যমে পরকালের সফলতা লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর