লাল মিয়া (৪০) রাস্তায় ট্রাকচাপায় মারা যাননি। ফিল্মি কায়দায় প্রথমে ট্রাকটি হত্যার উদ্দেশ্যে লাল মিয়ার মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। পরে রাস্তায় পড়ে থাকা দেহের মাথার উপর দিয়ে পিছন দিকে চালানো হয় ট্রাক। মৃত্যু নিশ্চিত করে ট্রাক নিয়ে পালিয়ে যায় লাল মিয়ার চাচাত ভাই সবুজ।
Advertisement
শনিবার সকালে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন গত ৫ নভেম্বর টঙ্গী-কালীগঞ্জ-ঘোড়াশাল বাইপাস সড়কে ট্রাকচাপায় নিহত লাল মিয়ার পরিবার।
এ ব্যাপারে নিহত লাল মিয়ার স্ত্রী ঝুমা আক্তার সবুজ ও তার গাড়ির হেলপার রুবেলের নামে কালীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। সেই মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ সবুজকে আটক করে তার বিরুদ্ধে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠায়।
নিহত লাল মিয়া কালীগঞ্জ পৌর এলাকার চৈতারপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল বারেকের ছেলে। তিনি স্থানীয় একটি ইট ভাটায় ঠিকাদারীতে ইট ভাঙার কাজ করতেন।
Advertisement
অন্যদিকে অভিযুক্ত সবুজ একই গ্রামের মো. আফজাল হোসেনের ছেলে। তিনি স্থানীয় সেভেন রিং সিমেন্ট কারখানার ট্রাকের চালক। ট্রাক ও হত্যার সহযোগী রুবেল ওই গ্রামেরই ওয়াছ করনীর ছেলে।
জানা গেছে, গত ৫ নভেম্বর উপজেলার কালীগঞ্জ পৌরসভার বালীগাঁও চৌধুরী বাড়ি সংলগ্ন নাভানা প্লাস্টিক পাইপ কোম্পানির পশ্চিম পাশে টঙ্গী-কালীগঞ্জ-ঘোড়াশাল বাইপাস সড়কে দুর্ঘটনা ঘটে। এতে স্থানীয় সেভেন রিং সিমেন্ট কারখানার খালি ট্রাকের (ঢাকা-মেট্রো-উ-১১-১৯৬৭) চাপায় মোটরসাইকেল চালক লাল মিয়ার মৃত্যু হয়।
প্রাথমিকভাবে এটি সড়ক দুর্ঘটনা বলে স্থানীয়ভাবে জানাজানি হলেও পরিবারের দাবির মুখে থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করে।
মামলার বাদী ঝুমা আক্তার বলেন, সবুজের সঙ্গে তাদের পরিবারের জমি নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ বিরোধ চলছিল। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে চলতি বছরের শুরুর দিকে সবুজ ভাড়া করা সন্ত্রাসী নিয়ে তার স্বামীকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে। এ ব্যাপারে তার স্বামী বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা করেন। সেই মামলায় জামিনে মুক্তি পেয়ে মামলাটি তুলে নেয়ার জন্য তার স্বামীকে নানাভাবে ভয়ভীতি ও হত্যার হুমকি দিত।
Advertisement
তিনি আরো জাানান, গত ৫ নভেম্বর তার স্বামী শারীরিক অসুস্থতার কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওষুধ আনতে বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হন। এ সময় উপজেলার টঙ্গী-কালীগঞ্জ-ঘোড়াশাল বাইপাস সড়কে পৌঁছালে অভিযুক্ত চাচাত ভাই সবুজ ফিল্মি কায়দায় তাকে ট্রাকচাপা দেয়। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করে ট্রাক নিয়ে পালিয়ে যায় সবুজ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. সুলতান উদ্দিন খান বলেন, নিহত লাল মিয়ার সঙ্গে সবুজের জমি সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। সেই বিরোধের জেরে তাদের মধ্যে মারামারি এবং পাল্টাপাল্টি মামলা ছিল। সবুজ যে ট্রাকটি চালাতো সেটি জব্দ করা হয়েছে। সেখান থেকে কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, বর্তমানে মামলাটি গাজীপুর বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। সবুজের বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে তাকে গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।
আব্দুর রহমান আরমান/এফএ/এমএস