টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মা ও তিন মেয়েকে পুড়িয়ে হত্যা করার ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামি জাহাঙ্গীরকে ধরিয়ে দিতে এক লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। আজ শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মির্জাপুর থানায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এস এম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান এ ঘোষণা দেন। এ সময় টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) পঙ্কজ চন্দ্র রায় ও বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।এ ঘটনায় আজ সকালে এজাহারভুক্ত আরেক আসামি বদরউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। কিন্তু প্রধান আসামি জাহাঙ্গীর এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।৭ অক্টোবর উপজেলার সোহাগপুর উপজেলার দক্ষিণপাড়া গ্রামে প্রবাসী মজিবর রহমানের ঘরের দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে দাহ্য পদার্থ ছিটিয়ে আগুন দেওয়া হয়। এতে তাঁর স্ত্রী হাসনা বেগম (৩৫), তিন মেয়ে—নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মনিরা আক্তার (১৪), বাকপ্রতিবন্ধী মীম আক্তার (১১) ও নার্সারির ছাত্রী মলি আক্তার (৭) আগুনে পুড়ে মারা যায়।পুলিশ জানায়, এ হত্যার ঘটনায় হাসনা বেগমের ভাই মোফাজ্জল হোসেন একই গ্রামের বাহার উদ্দিনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে প্রধান আসামি করে ১০ জনের বিরুদ্ধে মির্জাপুর থানায় মামলা করেন।হত্যার নেপথ্য কারণ: নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মনিরা আক্তারকে একই গ্রামের সিঙ্গাপুরপ্রবাসী জাহাঙ্গীর আলম সম্প্রতি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু এ প্রস্তাবে রাজি হননি মনিরার মা। এতে ক্ষুব্ধ ও প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে জাহাঙ্গীর আলম সহযোগীদের নিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবারের অন্য সদস্য ও প্রতিবেশীরা।হাসনার শ্বশুর চান মিয়া ফকিরের ভাষ্য, তাঁর নাতনি মনিরার বয়স যখন সাত বছর, তখন জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে তাঁর বিয়ের কথা হয়েছিল। দুজনের মধ্যে আংটিও বদল হয়। তবে প্রায় দেড় বছর আগে জাহাঙ্গীর বিদেশে থাকাকালে মনিরা গ্রামের একটি গানের অনুষ্ঠান দেখতে যায়। ওই খবরে তিনি সিঙ্গাপুর থেকে বাড়িতে ফোন করে বকাঝকা করেন। এ ঘটনায় বিয়ে দেওয়ার বিষয়টি আর না এগিয়ে বরং ভেঙে যায়। ১০ মাস আগে জাহাঙ্গীর দেশে ফিরলে গ্রাম্য সালিস বসে। এতে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে মনিরার বিয়ে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর জাহাঙ্গীর সিঙ্গাপুর গিয়ে দুই মাস পর আবার দেশে ফেরেন। আবারও মনিরাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন তিনি। কিন্তু মনিরার মা রাজি না হলে জাহাঙ্গীর পরিবারটির ওপর বিভিন্নভাবে অত্যাচার শুরু করেন।প্রতিবেশী আবদুস ছবুর ও মনির হোসেনের ভাষ্য, সপ্তাহ খানেক আগে জাহাঙ্গীর মনিরার মায়ের গলা চেপে ধরেছিলেন।মনিরার মামা মো. মোফাজ্জল হোসেনের অভিযোগ, বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর থেকে জাহাঙ্গীর মনিরাকে উত্ত্যক্ত করা শুরু করেন। তাই মনিরাকে একই গ্রামে নানার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ঈদ উপলক্ষে মনিরা দাদার বাড়িতে এসেছিল। আর এ আসাই সবার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াল।
Advertisement