প্রবাস

শততম দেশ ভ্রমণ করলেন খুলনার আসমা

সবুজ পাসপোর্ট নিয়ে দেশ ভ্রমণে সেঞ্চুরি করলেন কাজী আসমা আজমেরী। গত সপ্তাহে তুর্কমেনিস্তানের মাটিতে পা দিয়ে শততম দেশ সফরের আশা পূরণ করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন তিনি। দেশ সফরের স্বপ্ন পূরণে বিভিন্ন মহাদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এ পরিব্রাজক।

Advertisement

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ট্রাভেলার্সদের মধ্য অন্যতম এক নাম কাজী আসমা আজমেরী। তিনিই একমাত্র মেয়ে যে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। ভ্রমণের মধ্য দিয়ে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, প্রকৃতি, দেশের মানুষ সম্পর্কে জানাচ্ছেন।

আসমা আজমেরী ২০০৭ সালে প্রথম দেশ হিসেবে থাইল্যান্ড যাত্রা করেন। দুই মাস আগে কানাডা সফরকালে আসমা জানান, টরন্টো এসেই জানতে পারলাম, আমার মতো আরেক বাংলাদেশি মেয়ে ডলি বেগম অন্টারিও পার্লামেন্টের সাংসদ হয়েছেন।তাকে দেখেই কিছুটা উৎসাহ বলা যায়।

দীর্ঘ দশ বছর দীর্ঘ যাত্রার পর ভ্রমণ সেঞ্চুরির স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হলো আসমার।

Advertisement

আরও পড়ুন>> গাড়িতে বিশ্বভ্রমণে বাংলাদেশি সাত্তার

কাজী আসমা আজমারী বলেন, ‘আমি শৈল্পিকভাবে ইবনে বতুতা, ঠাকুরমার ঝুলি, তেপান্তরের রাজ্যকন্যার গল্পে শুনে আমার শৈশবে কল্পনায় তাদের মনে মনে ভাবতাম। কিন্তু তারপর তাদের ছেড়ে দেয়া যায় না। তাই আমি স্বাবলম্বী হওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম।’

‘আমার জনপ্রিয়তার জন্য নয়, আসমা দেশ ভ্রমণ করে নিজের শখ থেকে। প্রথম দিকে শখের বশত ভ্রমণ শুরু করলেও এখন আসমা অনুভব করেন যে, সে তার ভ্রমণের মাধ্যমে নিজ দেশকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরতে পারছেন। সেটা তাকে বেশ আনন্দ দেয়।’

আসমা জানান, তপ্ত মরুপথে হাঁটা থেকে শুরু করে ঠাণ্ডা বরফে দেশে কিংবা নীল সাগরের পাড় থেকে সবুজ পাহাড়ের চূড়ায় অথবা গভীর অরণ্য থেকে হারিয়ে যাওয়া কোনো অচেনা গ্রামের গল্পের বিচিত্র অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি বই লিখবেন তিনি।

Advertisement

আসমা যেসব দেশ ভ্রমণ করেছেন- এরপর ২০০৯ সালে ভারত, নেপাল, ভুটান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং। ২০১০ সালে কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, ব্রুনেই, চীন, ম্যাকাউ, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, সাইপ্রাস, তুরস্ক, মিশর, মরক্কো, সংযুক্ত আরব আমিরাত। ২০১১ সালে স্কটল্যান্ড, ওয়েলস, স্পেন, জার্মানি, পর্তুগাল, চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া, মিয়ানমার, দক্ষিণ কোরিয়া, উত্তর কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, জাপান।

আরও পড়ুন>> বিশ্ব জয়ের পথে নাজমুন নাহার

২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়া, ফিজি, নিউজিল্যান্ড, কুক দ্বীপ, টঙ্গা। ২০১৩ সালে নিউ ক্যালেডোনিয়া, তাহিতি, সলোমন দ্বীপ, নিউ, কিরিবাটি তাইওয়ান, ভানুয়াতু, মার্কিন যুক্তরাষ্ট। ২০১৪ সালে মেক্সিকো, গুয়াতেমালা, এল সালভাডর, হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া, কোস্টারিকা, পানামা, কলম্বিয়া, ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে, বলিভিয়া, পেরু, ইকুয়েডর। ২০১৫ সালে পোর্ট রিকা, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র, হাইতি, বেলিজ, জ্যামাইকা, বাহামা, আরুবা।

২০১৬ সালে ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, মন্টিনিগ্রো, কোসোভো, আবলানিয়া, ম্যাসেডোনিয়া, বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, মোল্দাভিয়া, পোল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, সুইডেন, ডেনমার্ক, ইতালি, হাঙ্গেরি, সার্বিয়া, নরওয়ে, কুয়েত। ২০১৭ সালে কিউবা, সামোয়া, কাতার। ২০১৮ সালে ফিলিপাইন, মঙ্গোলিয়া, রাশিয়া, কানাডা, জর্জিয়া, বেলারুশ, আজারবাইজান।

আসমা খুলনা শহরে বড় হয়েছেন। কাজী গোলাম কিবরিয়া ও কাজী সাহিদা আহমেদ দম্পতির এক মাত্র মেয়ে। আসমা ইকবালনগর গার্লস হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করে। এরপর খুলনা মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে স্নাতক করেন।

উত্তর দক্ষিণ বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিষয়ে এমবিএ। আসমা এখন থাকেন অস্ট্রেলিয়ার পার্থে। সেখান থেকে সারা দুনিয়া ঘুরে লাটাই সুঁতার টানে ফিরে যান বাংলাদেশে। আবার পাখির মতো উড়াল পরবর্তী না দেখার দেশে।

এমআরএম/পিআর