বিশেষ প্রতিবেদন

ঐক্যফ্রন্ট না এলে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে জাতীয় পার্টি

হেনা খান। ভাইস চেয়ারম্যান, জাতীয় পার্টি। আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ডিজাইনার। মহাব্যবস্থাপক, চেলসি গার্ল ফ্যাশন হাউস। দায়িত্ব পালন করছেন বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনেও।

Advertisement

সম্প্রতি নির্বাচন, সংলাপসহ রাজনীতির নানা প্রসঙ্গ নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজ-এর। রাজনীতি শুদ্ধতার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকেই এগিয়ে আসতে হবে বলে উল্লেখ করেন। বলেন, মানুষ পরিবর্তন চায়, আর পরিবর্তন প্রশ্নে জাতীয় পার্টির গুরুত্বও বাড়ছে।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।

জাগো নিউজ : রাজনীতি এখন নির্বাচনমুখী। আপনার দল জাতীয় পার্টিও ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সংলাপ করলেন। কীভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন রাজনীতি?

Advertisement

হেনা খান : জাতির প্রত্যাশা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। সবাই গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছেন। রাজনীতিতে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, তা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কেটে যাবে। রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হবে। একটি ভালো নির্বাচনই জাতির মেরুদণ্ড শক্ত করতে পারে। তবে এর দায় সবার। রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা মিললেই নির্বাচনে আশার প্রদীপ জ্বলবে। তবে নির্বাচন সংকটের দায় জনগণেরও।

সম্প্রতি সংলাপ আলোচনায় সমাধান না আসলেও আমি এটিকে ইতিবাচভাবেই মূল্যায়ন করব। অন্তত এমন আলোচনায় বৈরিতা কমার সুযোগ তৈরি হয়। আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান খুঁজতে হবে। আমাদের দলের পক্ষ থেকে সংলাপে অংশ নিয়ে সে কথাই বলা হয়েছে। পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। জাতীয় পার্টি ৮ দফা প্রস্তাব দিয়েছে। সরকার বিবেচনা করবে বলে আশা করছি।

জাগো নিউজ : স্ব-স্ব অবস্থানে অনড় ক্ষমতাসীন দল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। কোথায় যাচ্ছে রাজনীতি?

হেনা খান : জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে যেসব দাবি উপস্থাপন করা হয়েছে, তার অনেকগুলো সংবিধান পরিপন্থী। সাংবিধানিক সংকট তৈরি করে তো আর সমাধান আসতে পারে না। সংকট আরও তীব্র হবে। এটি কেউই চাইবে না। তবে সংকট উত্তরণে স্থায়ী সমাধানের পথ বের করা জরুরি। মানুষের আস্থা না থাকলে দেশ কোনো স্থির অবস্থানে থাকবে না। এমনকী টেকসই উন্নয়ন করতে হলে রাজনীতির স্থিরতা দরকার।

Advertisement

সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্বাচনকালীন সরকার, সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতা এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়গুলো সংবিধান ও আইনসিদ্ধ নয়। এই বিষয়গুলো সংলাপে সহজেই সমাধান হওয়ার কথা নয়। সরকারের পক্ষে এই মুহূর্তে মেনে নেয়াও সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন>> জাতীয় পার্টি ছাড়া কোনো দলই গণতন্ত্র আর উন্নয়ন দিতে পারেনি

জাগো নিউজ : এর আগে তো এমন বিষয় নিয়ে সমঝোতা হয়েছে। এখন সম্ভব নয় কেন?

হেনা খান : খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দিলে সরকার তো এখন ইমেজ সংকটে পড়বে। আইন তো সবার জন্য সমান। আইনের ওপর জনআস্থা কমবে।

জাগো নিউজ : এরশাদেরও সাজা হয়েছিল। তিনিও এখন মুক্ত…

হেনা খান : খালেদা জিয়ার মুক্তি কেন হচ্ছে না, তার ব্যাখ্যা সরকার দিয়েছে। আইনের ব্যাপার। অন্তত আইনের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা রাখতেই পারি।

জাগো নিউজ : বিদ্বেষের এই রাজনীতির শেষ কোথায়?

হেনা খান : এই মুহূর্তে হয়তো কারও জানা নেই, এই রাজনীতির শেষ কোথায়। আরেকটু দেখতে হবে। আন্দোলনের মধ্যে সমাধান কারও কাম্য নয়। একটি সংকট চাপা পড়ছে আরেকটি সংকট দিয়ে। সবাই স্থায়ী সমাধানের প্রত্যাশায়। সংঘাত হলে কেউই ভালো থাকবে না।

জাগো নিউজ : সংকট উত্তরণে জাতীয় পার্টির ভূমিকা কী হবে?

হেনা খান : জাতীয় পার্টি নির্বাচনমুখী। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে। জাতীয় পার্টি চায় সংঘাতময় পথ পরিহার করে সবাই নির্বাচনে আসুক। আমরা সরকারের সঙ্গে আছি। জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করব, তা চেয়ারম্যান বলেছেন। সংকট উত্তরণে নির্বাচনের বিকল্প নেই। সংকট উত্তরণে আমরা আট দফা প্রস্তাব দিয়েছি।

তবে পরিস্থিতির ওপর সব নির্ভর করছে। আমরা তিনশ আসনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারি।

জাগো নিউজ : জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে আসলে জাতীয় পার্টির চ্যালেঞ্জ কী হবে?

আরও পড়ুন>> জাতীয় পার্টি দেশের মানুষের শেষ ভরসা

হেনা খান : জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে অংশ নেয়া জাতীয় পার্টির জন্য অবশ্যই চ্যালেঞ্জ হবে। নির্বাচনের মাঠে প্রতিটি রাজনৈতিক দলই চ্যালেঞ্জ নিয়ে লড়াই করে। আমরা সে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে প্রস্তুত রয়েছি।

আমরা খুব সচেতনভাবে এগোচ্ছি। প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রেও এবার আমরা অধিক সতর্ক। একক হোক আর জোটবদ্ধ হোক বিজয় নিশ্চিত করতেই হবে। আমরা আপাতত ভালো অবস্থানে আছি বলে মনে করি।

জাগো নিউজ : ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিশেষ সমঝোতা করেই জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে আসে। এবার এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা?

হেনা খান : ক্ষমতাসীন জোটের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। আলোচনার ভিত্তিতেই ২০০৮ সালে মহাজোটে গিয়েছিল জাতীয় পার্টি। ২০১৪ সালের নির্বাচনী প্রেক্ষাপটে জাতীয় পার্টিকে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হয়েছে। সাংবিধানিক বিধি রক্ষার ওই নির্বাচন জাতিকে বিপদ থেকে রক্ষাও করেছে বলে মনে করি। নইলে ভিন্নধারার সরকার আসার আশঙ্কা ছিল।

এবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নিলে জাতীয় পার্টি মহাজোট থেকে নির্বাচন করবে বলে দলের প্রধান ঘোষণা দিয়েছেন। আর নির্বাচনে বিএনপি বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট না এলে তিনশ আসনে প্রার্থী দেবে জাতীয় পার্টি।

জাগো নিউজ : জোটবদ্ধ নির্বাচনে গেলে জাতীয় পার্টি কয়টি আসনে মনোনয়ন পাবে বলে মনে করছেন?

হেনা খান : দলের চেয়ারম্যান গত বছরের চাইতে বেশি আসন চেয়েছেন। এটা আমাদের প্রত্যাশাও বটে। আসন বণ্টন হবে আলোচনার ভিত্তিতে। মানুষ জাতীয় পার্টির ওপর আস্থা রাখছে। আমাদের টার্গেট থাকবে প্রতিটি আসনে বিজয়ী হবার।

জাগো নিউজ : নরসিংদী রায়পুরায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। মনোনয়ন পাবার ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী?

হেনা খান : আমার বাবা একজন শহীদ। পারিবারিকভাবেই আমি এলাকায় বিশেষভাবে পরিচিত। এক যুগ ধরে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে সক্রিয়। আস্থা তৈরি করেছি বলেই দল আমাকে ভাইস চেয়ারম্যান বানিয়েছে। মনোনয়ন প্রত্যাশা করতেই পারি।

জাগো নিউজ : আপনি মনোনয়ন পেলে বিজয়ের ব্যাপারে কী বলবেন?

হেনা খান : আমি এলাকায় গিয়ে কাজ করছি। দলের নেতাকর্মীরা আমার প্রতি আস্থাশীল। এরপরও আমি মনে করি, রাজনীতির মাঠে গোল দেয়া সহজ বিষয় নয়। নিজের দলেও প্রতিদ্বন্দ্বী আছে। সবাই চেষ্টা করছে মনোনয়ন পেতে। দল এবং দলের বাইরের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার নামই রাজনীতি।

দল মনোনয়ন দিলে অবশ্যই সবার মন জয় করে বিজয়ী হতে পারব।

এএসএস/এমআরএম/পিআর