স্কুল জীবন থেকেই জড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন আবিষ্কারের সঙ্গে। বিজ্ঞান মেলাসহ ৩০টির অধিক জায়গায় থেকে পেয়েছেন পুরস্কার। তরুণ প্রজন্মকে আবিষ্কারে উদ্বুদ্ধ করতে ২০১৬ সালে গড়ে তুলেন ‘বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরাম’। ছিলেন বেসিস-এর পরিচালক এবং নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জের তিনবারের কনভেনর। আবিষ্কার অনুসন্ধানী এ যুবকের নাম আরিফুল হাসান অপু।
Advertisement
তার উদ্যোগে এবং ইনোভেশন ফোরামের ব্যানারে শুক্র ও শনিবার (৯-১০ নভেম্বর) রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুই দিনব্যাপী ক্যারিয়ার বিষয়ক সেমিনার ‘ক্যারিয়ার কন-২০১৮’। সেমিনার ও ওয়ার্কশপ মিলে থাকবে মোট ১০টি সেশন। যা চলবে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
যেখানে চাকরির বাজারের বর্তমান অবস্থা, কোন কোন ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ কেমন? জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চাকরির সুযোগ, চাকরির আবদেন তৈরি, ক্যারিয়ার গাইডলাইন, ব্যাংকিং জব, মিলিটারি জবসহ বিভিন্ন চাকরির প্রস্তুতি নিয়ে রয়েছে আলাদা আলাদা সেমিনার ও ওয়ার্কশপ। এ ছাড়া স্মার্ট সিভি (জীবন বৃত্তান্ত) তৈরির কলাকৌশল ও তার গুরুত্ব, সাক্ষাৎকার বোর্ডে নিজেকে জয়ী করার প্রস্তুতি, চাকরির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বাজার নিয়ে সেশন অনুষ্ঠিত হবে।
সম্প্রতি ক্যারিয়ার কন’র বিভিন্ন বিষয় ও বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের বিভিন্ন দিক নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আরিফুল হাসান অপু। তরুণ প্রজন্মকে নতুন নতুন আবিষ্কারে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তুলে ধরের বিভিন্ন দিক নির্দেশনাও।
Advertisement
আরিফুল হাসান অপু বলেন, ছোট একটি আবিষ্কারও একজনের জীবন পাল্টে দিতে পারে। এক সময় ফুজি ফিল্ম বিশ্বের একটি বড় প্রতিষ্ঠান ছিল, তা এখন বন্ধ হয়ে গেছে। ফুজিসহ যেসব প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত হয়ে গেছে তাদের মূল সমস্য হলো ইনোভেশন (আবিষ্কার)। তারা যদি ভবিষ্যৎ চিন্তা করত বা ৫-৭ বছর পরে কী আসবে? এমন চিন্তা থাকলে বিলুপ্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। প্রযুক্তি পরিবর্তনশীল। পণ্যের মধ্যে নতুন নতুন ইনোভেশন আনতে না পারলে এক সময় অবশ্যই ব্যাকডেটেড হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মকে ভালো কিছু করতে হলে প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে। একটা চিন্তা মাথায় আসল, আপনি সেটাকেই মনে করছেন খুব ভালো ইনোভেশন এবং ভাবছেন মার্কেটে সেটা খুব ভালো করবে, তবে আপনার এ চিন্তার বিষয়ে ইন্টারনেটে সার্চ করে দেখতে হবে প্রডাক্টগুলো নিয়ে আগে কিছু হয়েছে কি না। যদি হয়ে থাকে তাহলে কোথায় হয়েছে? তাদের অবস্থা কি? তাদের মার্কেট শেয়ার কেমন? সবকিছু ভালো করে পড়াশোনা করে তারপর পরিকল্পনা করতে হবে।
‘ক্যারিয়ার কন’ আয়োজন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা ইনোভেশন নিয়ে কাজ করি। যতগুলো ইনোভেশন আছে তার সঙ্গে দু’টি জিনিস কাজ করে। একটা হচ্ছে- ইনোভেশনকে কাজে লাগিয়ে খুব ভালো প্রফেশনাল হওয়া। আর দ্বিতীয়টা হচ্ছে- প্রডাক্ট বা সার্ভিসকে মার্কেটে আনা। তরুণ প্রজন্ম যাতে কেরিয়ার নিয়ে সঠিক দিক নির্দেশনা পান -সে লক্ষ্যেই আমরা এটির আয়োজন করেছি।
একটি প্রফেশনাল স্মার্ট সিভি (জীবন বৃত্তান্ত) কিভাবে লিখতে হবে তার কলাকৌশল ও গুরুত্ব আমরা তুলে ধরবো। তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশই জানেন না কিভাবে প্রফেশনাল সিভি লিখতে হয়। আমরা চাচ্ছি যারা চাকরি করবেন বা উদ্যোক্তা হবেন তাদের একটি সঠিক গাইডলাইন দিতে।
Advertisement
একজন তরুণ পড়ালেখা শেষ করে কোন দিকে যাবেন তা অনেক সময় বুঝতে পারেন না। কারণ তিনি ইন্ডাস্ট্রির ভেতরের অবস্থা জানেন না। কোন জায়গায় তার জন্য চাকরি অপেক্ষা করছে? কী পরিমাণ চাকরির সুযোগ সেখানে আছে এবং সেখানে আবেদন করতে হলে কী ধরনের পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হবে -সে বিষয়গুলোই ক্যারিয়ার কনের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে।
ক্যারিয়ার কন-এ কোনো বিশেষ সেক্টরকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে কি না? -জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো বিশেষ সেক্টরকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। এখানে যেমন ব্যাংকিং ক্যারিয়ার আছে, তেমনি ডিফেন্স ক্যারিয়ারও আছে। সেনাবাহিনী, নৌ-বাহিনীর চাকরি সম্পর্কে অনেকেই হয় তো জানেন না। এবারই প্রথম আমরা এটা করছি। সাবেক একজন সেনা অফিসার সেই সেশনটি নেবেন।
‘ক্যারিয়ার কনে লাইভ ইন্টারভিউ’র একটি সেশন রয়েছে। কাফকোর এইচআর প্রধান কাজী রাকিবউদ্দিন আহমেদ সেশনে বক্তব্য রাখবেন। সবার সামনে লাইভ ইন্টারভিউ নিয়ে আলোচনা করবেন, লাইভ ইন্টারভিউ-এ কী কঅ ভুল থাকে, কী কী করলে ইন্টারভিউ পারফেক্ট হবে। এ রকম বেশ কিছু বিষয় ক্যারিয়ার কন থাকবে।
চাকরির বাজার সম্পর্কে তিনি বলেন, ইন্ডাস্ট্রিতে একটা কথা আছে ‘যোগ্য লোক পাওয়া যায় না’। আবার শিক্ষার্থীরা বলে ‘আমরা চাকরি পাই না’। বাস্তবতা হলো, বিশেষ করে আইটি সেক্টরে আপনি যদি যোগ্য হয়ে থাকেন তাহলে চাকরির সমস্যা নেই।
বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরাম প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নতুন নতুন আবিষ্কারের মানসিকতা তৈরি করায় বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের প্রধান লক্ষ্য। ইনোভেটিব চিন্তা-ভাবনাকে আরও ডেভেলপিং করা, সারা দেশে যাতে এ চর্চা শুরু হয়। কারণ, তরুণদের মধ্যে যতো ইনোভেটিব চিন্তা আসবে দেশ তত উন্নত হবে।
বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা আরিফুল হাসান অপু বলেন, একজন মানুষ যদি নিজের উন্নয়ন করেন তাহলে সেটা তার পরিবারকেও উন্নয়ন করবে। ব্যক্তি ও পরিবারের উন্নয়ন হলে তা সমাজেরও উন্নয়ন করবে। আর সমাজের উন্নয়ন মানেই দেশের উন্নয়ন। আমরা চাচ্ছি, ইনোভেটিব আইডিয়াগুলো রুট লেভেলে (প্রত্যন্ত অঞ্চল) চলে যাক। তাহলেই দেশ এগিয়ে যাবে।
ক্যারিয়ার কনের আগে বাংলাদেশ ইনোভেশন ফোরামের ব্যানারে ৬০টির মতো প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর আগে বিজনেস ইনোভেশন সামিট ও স্পেস ইনোভেশন সামিটসহ আমরা প্রায় ৬০টির মতো প্রোগ্রাম করেছি। প্রথম প্রোগ্রাম করা হয়েছে ডিজিটাল ওয়াল্ড ইনোভেশন ক্যাম্প। সেখানে সারা দেশ থেকে ১৪শ’ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছিল। এখন আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রামের সঙ্গে পার্টনারশিপ এমওইউ আছে।
এমএএস/আরএস/এমএস