রাজনীতি

বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণায় আ.লীগের সায়

বিভিন্ন রাজনৈতিক জোটের বিরোধিতা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) নির্বাচন কমিশন যে তফসিল ঘোষণা দিতে যাচ্ছে তার প্রতি সরকারের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনার কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম।

Advertisement

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে বুধবার সন্ধ্যায় সাংবাকিদের এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর এই রাজনৈতিক উপদেষ্টা।। বিকেল রাজধানীর আগারগাঁয়ের নির্বাচন ভবনে বৈঠকটি হয়। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইসির সঙ্গে নানা বিষয়ে মতবিনিময় করে দলটি।

এইচটি ইমাম বলেন, নির্বাচন শিডিউল অর্থাৎ তফসিল ঘোষণার এখতিয়ার একমাত্র নির্বাচন কমিশনের। কবে, কখন, নির্বাচন হবে, কীভাবে হবে? সেটি ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। যেহেতু নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে যে, আগামীকাল (৮ নভেম্বর) তারা নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা করবেন, আমরা তাদের বলেছি, এ ব্যাপারে আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ সমর্থন থাকবে।

তিনি বলেন, এর এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনেরই। তারা যেদিন তা করতে চাইবে তাই করবে। আমরা কোনো ক্রমেই বলব না এটি পিছিয়ে দিন বা এগিয়ে দিন। প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, এর আগে যুক্তফ্রন্ট ও সম্মিলিত জাতীয় জোটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক জোট ও দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাত করেছে। তাদের কেউই নির্বাচন কমিশনকে হেয় প্রতিপন্ন করেনি কিংবা ভয়ভীতি প্রদর্শনও করেননি। কিন্তু এর একমাত্র ব্যতিক্রম ঘটিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। যার মধ্যে অনেক অনিবন্ধিত দলের নেতৃবৃন্দ ছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন যেভাবে অমার্জিত এবং কুরুচিপূর্ণভাবে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলেছেন তাতে জনগণ বিস্মিত ও হতবাগ হয়েছে। দলমত নির্বিশেষে সকলেই এটির ধিক্কার জানিয়েছে। কেউ কেউ তর্জনী উঠিয়ে নির্বাচন কমিশনকে ভয়ভীতিও দেখিয়েছেন। আমরা সুষ্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই- বাংলাদেশে জনগণ নির্বাচন কমিশনের প্রতি এ ধরনের আচরণ সহ্য করবে না। এর জবাব দেবে ভোটের মাধ্যমে। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েত সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে ইসির সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। তবে আওয়ামী লীগ কখনও সেনবাহিনী মোতায়েনের বিপক্ষে নয়। বর্তমান আইন অনুযায়ী যেভাবে সেনাবাহিনী মোতায়েন হয় সেই পক্ষেই আওয়ামী লীগ।

Advertisement

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে ইসির পক্ষ থেকে বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে এইচ টি ইমামের নেতৃত্ব বৈঠকে প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মশিউর রহমান, রাশিদুল আলম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপদফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য এস এম কামাল হোসেন, রিয়াজুল কবীর কাওছার, গোলাম রাব্বানী চিনু, কেন্দ্রীয় নেতা তানভীর ইমাম, ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পী, সেলিম মাহমুদ ও মুস্তাফিজুর রহমান বাবলা।

এর আগে বুধবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে নির্ধারিত তারিখে তফসিল ঘোষণা, ইভিএম ব্যবহার বন্ধ করাসহ আট দফা দাবি জানায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোট।

বুধবার বেলা সোয়া ১১টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টার এই বৈঠকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের সম্মিলিত জাতীয় জোটের ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা এবং অন্য নির্বাচন কমিশনাররাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

Advertisement

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক জোট ও দল ইসির সঙ্গে বৈঠকের দাবি জানায়। এর আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় পার্টির নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক করে ইসি। বৈঠকে ঐক্যফ্রন্ট একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল পেছানোর দাবি করলেও যুক্তফ্রন্ট এর বিরোধিতা করেছে। যুক্তফ্রন্ট তফসিল পেছানোর বিপক্ষে মত দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গত ৩০ অক্টোবর থেকে নির্বাচনকালীন সময়ের ক্ষণ-গণনা শুরু হয়েছে। তবে ডিসেম্বরের মধ্যেই ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে বদ্ধপরিকর নির্বাচন কমিশন। এজন্য ১ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি জানিয়েছে ইসি।

এদিকে বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে- আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

এইচএস/জেডএ/জেআইএম/এমএস