‘আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আসলে কার? ভালো কিডনি কর্তনকারী ডাক্তারের নাকি সাধারণ জনগণের? ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ খ্যাত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার শেষ আবেদন অভিযুক্ত ডা. দুলালের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, যাতে ভবিষ্যতে কোনো চিকিৎসক এমন অমানবিক কাজ করতে না পারেন।’ অশ্রুসিক্ত নয়নে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন চিত্রপরিচালক রফিক সিকদার।
Advertisement
মঙ্গলবার বিকেলে বিএফডিসির ফললুল হক স্মৃতি অডিটরিয়ামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. দুলালের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে অনুষ্ঠিত এক প্রেস কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি অভিযুক্ত ডাক্তারের বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফরিয়াদ জানান।
সেখানে আরও বক্তব্য রাখেন প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু, চিত্র পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার, শাহ আলম কিরন, বদিউল আলম খোকন, দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, হাবিবুর রহমান, মোহাম্মদ হোসেন জেমী, সিবি জামান, চিত্রনায়ক ফারুক, ওমর সানী, জায়েদ খান, বাপ্পী চৌধুরী, নিরব, রফিক সিকদারের চাচা সাবেক সচিব ড. মজিবুর রহমান প্রমুখ।
চিত্রপরিচালক রফিক সিকদার তার বক্তব্যে আরও বলেন, ‘‘আমার মায়ের বাম দিকের কিডনিতে কিছু সমস্যা ছিল। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ডা. দুলালের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছিল। ওষুধ খেয়ে তিনি কিছুটা সুস্থ হয়ে গ্রামের বাসায় চলে যান। তার এক সহকারী প্রায় দেড় মাস পর ফোনে মাকে ডেকে আনে। গত ৫ সেপ্টেম্বর তিনি অপারেশন করেন। অপারেশন শেষ হওয়ার পর রাত ১২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, মায়ের ডান পাশের কিডনিটি কাজ করেছে না। দ্রুত আইসিইউতে নিতে হবে। তবে তিনি এটাও জানান, বঙ্গবন্ধুতে আইসিইউ খালি নেই।
Advertisement
একদিন পর ইনসাফ আল-বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার হুমায়ুন রশিদ কবীর সেলিম মায়ের কিডনির অবস্থা পর্যালোচনার জন্য ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে সিটিস্ক্যান করতে বলেন। ল্যাবএইড হাসপাতালে সিটিস্ক্যান করার পর রিপোর্ট মারফত মায়ের পেটে কিডনির অস্তিত্ব নেই বলে জানতে পারি।
অবস্থা বেগতিক দেখে বিআরবি হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান ডা. এমএ সামাদের দ্বারস্থ হই। মেডিকেল রিপোর্ট দেখার পর পর্যালোচনা করে এবং পুনরায় আলট্রাসনোগ্রাম করে কোনো কিডনির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩১ অক্টোবর রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মারা যান আমার মা।
মায়ের মৃত্যুর পর শাহবাগ থানায় মামলা করতে গেলে ওসি সাহেব গরিমসি করেন। তিনি আমাকে কোর্টে মামলা করার পরামর্শ দেন। পরে আমার জোরাজুরিতে তিনি শুধু লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করেন মাত্র। মায়ের মৃত্যু নিয়ে মিডিয়ার খবর প্রচারের পর বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি করে। সেখানে অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদকে প্রধান হিসেবে রাখা হয়।
অথচ তিনি হলেন ডা. দুলালের কাছের বন্ধু এবং ব্যবসায়িক পার্টনার। তাই তদন্ত রিপোর্ট দিতেও কালক্ষেপণ করে গত ৫ নভেম্বর দেন। আর রিপোর্টেও ওই দোষী ডাক্তারকে এক প্রকার বাঁচানোর চেষ্টাই করা হয়েছে এটিকে দুর্ঘটনা দাবি করে। এই সুযোগে ও ক্ষমতার জোরে ডা. দুলাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরও দিচ্ছেন হেসে হেসে। যেন মনে করছেন অপরাধ করলেও এই দেশে কারও ক্ষমতা নেই, তার বিচার করার।’’
Advertisement
প্রধানমন্ত্রীর উপর আস্থা রেখে রফিক সিকদার বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই এই দোষী ডাক্তারকে গ্রেফতারে নির্দেশ দেবেন।’
সংবাদ সম্মেলনে বক্তরা আগামী ১১ নভেম্বর সকাল ১১টায় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচিতে চিত্রপ্রযোজক-পরিচালক-শিল্পী সমিতির নেতৃবৃন্দ ও সদস্যরা অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন রফিক সিকদার।
এলএ/বিএ