অর্থনীতি

রফতানিতে বড় প্রবৃদ্ধি

>> চার মাসে আয় হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে>> প্লাস্টিক, পাট ও পাটজাত পণ্যের প্রবৃদ্ধি কমেছে >> লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রবৃদ্ধি অর্জন ১২.৫৭ শতাংশ

Advertisement

দেশের পণ্য রফতানিতে বড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চলতি (২০১৮-১৯) অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবরে) এক হাজার ৩৬৫ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি।

মঙ্গলবার এই হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। এতে দেখা যায়, তৈরি পোশাক রফতানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি হওয়ার কারণে সামগ্রিক পণ্য রফতানিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এক হাজার ১১৩ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ৯৪৩ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছিল।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে সব ধরনের পণ্য রফতানিতে বৈদেশিক মুদ্রার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার।

Advertisement

ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ২১২ কোটি ডলার। এ সময়ে আয় এসেছে এক হাজার ৩৬৫ কোটি মার্কিন ডলার, লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রফতানি আয় অর্জিত হয়েছিল এক হাজার ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের গত চার মাসে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

একক মাস হিসেবে গত অক্টোবরে ৩৭১ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। এটি গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে ৩০ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি। গত বছরের অক্টোবরে রফতানি হয়েছিল ২৭৯ কোটি ডলারের পণ্য।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের রফতানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে তৈরি পোশাক খাতে পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছে এক হাজার ১১৩ কোটি ৩১ লাখ মার্কিন ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এ খাত থেকে আয় এসেছিল ৯৪৩ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের তুলনায় এ খাতে প্রবৃদ্ধি ২০ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে চার মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় বেড়েছে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ। এর মধ্যে নিটওয়্যার খাতের পণ্য রফতানিতে ৫৮৭ কোটি ৫২ লাখ ডলার আয় হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেড়েছে ১৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

গত অর্থবছরের তুলনায় গত চার মাসে নিটওয়্যার খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ। অন্যদিকে ওভেন গার্মেন্ট পণ্য রফতানিতে ৫৪৫ কোটি ৭৮ লাখ ডলার আয় হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ দশমিক ১৩ শতাংশ বেশি। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ দশমিক ৬১ শতাংশ।

Advertisement

ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের চার মাসে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ৮০ দশমিক ৩৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে কৃষিপণ্য রফতানিতে। এ খাত থেকে আয় এসেছে ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রফতানি আয় বেড়েছে ৬৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। গত চার মাসে হোম টেক্সটাইল খাতে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এ সময় আয় এসেছে ২৬ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের চার মাসে প্লাস্টিক পণ্যে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৩৩ দশমিক ১৪ শতাংশ। এ সময়ে আয় হয়েছে ৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৭ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি।

গত চার মাসে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি কমেছে। একই সঙ্গে অর্জিত হয়নি লক্ষ্যমাত্রা। এ সময়ে এ খাত থেকে আয় এসেছে ২৮ কোটি ডলার। এছাড়া চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কম হয়েছে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ। প্রবৃদ্ধিও গত বছরের চেয়ে ১৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ কম হয়েছে। এ সময়ে আয় হয়েছে ৩৪ কোটি ৫২ লাখ ডলার।

এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বর্তমানে পোশাক শিল্পকে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। আমরা এখন শতভাগ কমপ্লায়েন্স কারখানার দিকে হাঁটছি। ফলে রফতানিতে খুব সন্তোষজনক কিছু অর্জন করা যাচ্ছে না। রফতানি আয়ে কিছুটা প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু প্রতিযোগী দেশগুলো আমাদের চেয়েও এগিয়ে গেছে। তাদের প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, রফতানি খাতগুলোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। তাই সার্বিক বিবেচনায় সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ প্রণোদনার মাধ্যমে সহযোগিতার দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, ইউরোপের বাজারসহ অন্যান্য দেশের ক্রেতা এবং পণ্যের মূল্য ক্রমাগতভাবে হ্রাস পাচ্ছে। মজুরি, জ্বালানি, পরিবহন ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। মজুরি বৃদ্ধির ফলে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় ১৭ দশমিক ১১ ভাগ বেড়েছে। ফলে পোশাক শিল্প নিদারুণ চাপের মধ্যে রয়েছে। প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে অস্তিত্ব এবং আমাদের সক্ষমতা টিকিয়ে রাখা এখন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্সের শর্তানুযায়ী এ শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বিভিন্ন ধরনের সংস্কার কাজে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।

এমএ/জেডএ/পিআর