কোচ স্টিভ রোডস তৃতীয় দিন খেলা শেষেই বাতলে দিয়েছিলেন, কি করলে এ ম্যাচ জেতা সম্ভব? সোমবার দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে এসে বাংলাদেশ কোচ জানিয়ে দিয়েছিলেন, চতুর্থ দিন তিন সেশনে জিম্বাবুইয়ানদের ওপর কর্তৃত্ব ফলানোই হতে পারে জয়ের রসদ।
Advertisement
তিনি আজ তিন সেশনে জিততে চেয়েছিলেন। তার অনুভব-উপলব্ধি ছিল এমন- তৃতীয় দিন শেষ দুই সেশনটি ছিল টাইগারদের। যা তাদের খাদের কিনারায় পড়ে যাওয়া অবস্থা থেকেও উঠে দাঁড়াতে শিখিয়েছে। আর মঙ্গলবার চতুর্থ দিনতিন সেশনে জিততে পারলেই হাসা যাবে শেষ হাসি; কিন্তু তা আর হলো কই? প্রথম সেশনেই ৫ উইকেট হারিয়ে সর্বনাস। আর পরের সেশন পুরো হবার আগে বাকি অর্ধেকটা খুইয়ে উল্টো দুই সেশনেই হেরে বসা।
তবে কি কোচের লক্ষ্য-পরিকল্পনার কথা বোঝেননি ক্রিকেটাররা? নাকি বুঝেও মাঠে না বোঝার মত পারফর্ম করেছেন? আসলে পরিকল্পনাটা কি ছিল? খেলা শেষে সে প্রশ্নের মুখোমুখি হলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অনেক কথার ভিড়ে রিয়াদ বলে বসেন, ‘প্ল্যান ঠিকই ছিল; কিন্তু আমরাই বাজে ব্যাটিং করে সর্বনাশ ডেকে এনেছি।’
রিয়াদের কথা, ‘প্ল্যান তো সফল হয়নি। কারণ গতকাল আমাদের টার্গেট যখন সেট হয়, তখন আমরা মাঠে আলোচনা করেছিলাম আমরা পজেটিভ থাকব। ম্যাচ জেতার জন্যই খেলব। কারণ উইকেট ভালোই ছিল। কোন রকম অজুহাত দেয়া উচিত হবে না এবং দেয়া ঠিকও না। আমরাই বাজে ব্যাটিং করেছি। আমরা মোটেও ডিসিপ্লিন ছিলাম না। এই কারণেই আমাদের ব্যাটিং ব্যর্থতা। তবে আমরা বিশ্বাস করি আমরা নিজেরা যদি চিন্তা করি, একটি গ্রুপ হিসেবে, আমরা অবশ্যই ভালভাবে ফিরতে পারব। এই বিশ্বাসটা আমাদের সবার মধ্যেই আছে।’
Advertisement
একজন ব্যাটসম্যানও ভাল বলে আউট হননি। বরং অনেকের আউট হবার ধরন ছিল দৃষ্টিকটু। তা অকপটে স্বীকার করে টাইগার ক্যাপ্টেন বলেন, ‘আমরা অনেকগুলো বলে খুব লেইম আউট হয়েছি, খুব বাজে আউট হয়েছি। আউটগুলো হয়তো দৃষ্টিকটু। ওই জিনিসগুলো ঠিক না বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে।’
কেন এমন বাজে বলে আউট হওয়া? সরাসরি মন্তব্য না করলেও কথা শুনে মনে হচ্ছে রিয়াদের ধারনা, ব্যাটিংয়ে ডিসিপ্লিনের অভাব সুস্পষ্ট। এছাড়া মনোযোগ-মনোসংযোগেও আছে কমতি। সেটা দলগতভাবে নয়, এক একজনের সাথে কথা বলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করার প্রয়োজনীয়তার তাগিদও অনুভব করছেন। এছাড়া বাংলাদেশ অধিনায়ক মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন, ‘৩২১ রানের লক্ষ্য ছুঁতে অতি অবশ্যই লম্বা ও বড় জুটি দরকার। পার্টনারশিপ গড়ে তোলা ওই রান টপকানোর পূর্ব ও অন্যতম প্রধান শর্ত। সেটা হয়নি একদমই।’
তাইতো এমন সংলাপ, ‘ডিসিপ্লিন ও কনসেন্ট্রেশনের ইস্যু আছে। আমাদের প্রতিটা ইন্ডিভিজুয়ালের সাথে কথা বলতে হবে, তাঁরা কি চিন্তা করছিলাম এসব ভাবতে হবে। যদি পারসোনালি বলি, আমি আজ বেশ পজেটিভ ছিলাম। ভেবেছিলাম আমি হয়তোবা ভাল খেলে বড় জুটি গড়লে টার্গেটের কাছাকাছি যেতে পারব, আমরা ওই বড় পার্টনারশিপটাই করতে পারিনি। আপনি বড় জুটি না গড়তে পারলে ম্যাচ জিতবেন না।’
ধৈর্য্য ধরে উইকেটে আগলে থাকার কাজটি হয়নি। বলের মেধা বিচার করে আলগা বলগুলো থেকে যতটা সম্ভব রান তোলার চেষ্টা করা উচিৎ ছিল। তাও হয়নি। শট সিলেকশন বা নির্বাচনেও ছিল না দুরদর্শিতা। কেউ কেউ মনে মনে করেন, শট সিলেকশনে দূর্বলতাও ব্যাটিং বিপর্যয়ের বড় কারণ।
Advertisement
সত্যিই কি তাই? মাহমুদউল্লাহ ঠিক এমন চিন্তার সাথে একমত নন। তার ব্যাখ্যা এরকম, ‘শট না খেললে তো রান করতে পারবেন না। আর রান না করলে ম্যাচ জিতবেন কীভাবে?’
তবে নিজের প্রতি অসন্তুষ্ট রিয়াদ মানছেন লাঞ্চের আগে তার শটটি ঠিক ছিল না। ওই সময় তিনি ওভাবে সুইপ খেলার জন্য কমিটেড নাও থাকতে পারতেন। তার ধারনা, তাকে যে ফাঁদে ফেলা হয়েছে, তিনি তখন তা ঠিকমত বুঝে উঠতে পারেননি।
রিয়াদ বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল ম্যাচ জেতার। আমাদের দলের মধ্যেও যা কথা হয়েছে আমাদের বিশ্বাস ছিল। আমি বিশ্বাস করি টেস্ট ক্রিকেট এমন একটা খেলা যেখানে ইতিহাস তৈরি করা যায়। তারমানে এই না যে আমরা দমে যাব। আমরা অবশ্যই ফিরে আসব। আর শট যদি প্রয়োগ করতে না পারেন এটা আপনার পারসোনাল এক্সিকিউশনের বিষয় যে কেন আমি পারিনি। আমি মনে করি নেক্সট টাইম আমিও চিন্তা করব কেন এট হলো। কারণ তখন লাঞ্চের আগে ছিল। আমার মনে হয় আমার বড় একটা ভুল ছিল। তারা একটা প্লান বদলেছে আমি সেই ফাঁদে পড়েছি।’
এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম