লো স্কোরিং ম্যাচে ৫০-৬০ রানের ঘাটতি পোষানোই দায়। সেখানে প্রথম ইনিংসে ১৩৯ রানে পিছিয়ে পড়া যে রীতিমত ব্যাকফুটে চলে যাওয়া। প্রায় খাদের কিনারায় পড়ে যাওয়া সেই দলকে একাই টেনে তুলেছেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল।
Advertisement
তার ম্যাচে পাওয়া ১১ উইকেটই (৬/১০৮ ও ৫/ ৬২) খেলায় ফিরিয়ে এনেছে বাংলাদেশকে। তারপরও জিততে হলে চাই ৩২১ রান। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই যে ব্যাটিং ব্যর্থতা শুরু- তা অব্যাহত এ ম্যাচেও। সেই ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে চতুর্থ ইনিংসে ৩২১ রানের লক্ষ্য যে অনেক বড়, সুকঠিন।
কি ভাবছেন টাইগাররা? টিম বাংলাদেশের ভেতরকার খবর কি? পরাজয়ের শঙ্কা জেঁকে বসেছে? নাকি ড্রেসিংরুম চাঙ্গা। সবাই আত্ববিশ্বাসী? খুব জানতে ইচ্ছে করছে, তাই না? তাহলে শুনুন, বাংলাদেশ ড্রেসিংরুম এখনো চাঙ্গা। পরাজয়ের চিন্তা বাসা বাঁধেনি কারো মনে।
বরং কোচ স্টিভ রোডসের কথা শুনে মনে হচ্ছে, পুরো দল আত্ববিশ্বাসী। তাদের জানা, সামনে যে লক্ষ্যটা আছে- তা আগে কখনো টপকানো সম্ভব হয়নি। এই ৩২১ রানের টার্গেট তাই নতুন চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ সাফল্যের সাথে মোকাবিলায় প্রস্তুত টিম বাংলাদেশ।
Advertisement
আজ সিলেট স্টেডিয়ামে তৃতীয় দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশ কোচ স্টিভ রোডস অনেক কথার ভীড়ে শুরুতেই জানিয়ে দিলেন, ‘দল আস্থা হারায়নি। আত্ববিশ্বাস কমেনি একচুলও। ড্রেসিং রুম চাঙ্গা। সবাই অনুভব করছে, জিততে হলে বড়-সড় স্কোর টপকেই জিততে হবে। যদিও এতবড় স্কোর অতিক্রমের রেকর্ড নেই। তারপরও সবাই প্রথম ইনিংসের চেয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে আরও অনেক ভাল ব্যাটিংয়ের দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।’
স্টিভ রোডসের ধারণা, দুই ওপেনার ইমরুল কায়েস ও লিটন দাস এরই মধ্যে একটা ভীত গড়ে দিয়েছেন। তাই তার মুখে ওপেনারদের প্রশংসা, ‘আমি ইমরুল আর লিটনের ব্যাটিংয়ে বেশ সন্তুষ্ট। তারা পড়ন্ত বিকেলে একটা ভীত রচনা করেছে। আগামীকাল সে ভীত আরও মজবুত করতে হবে।’
খালি চোখে জিম্বাবুয়ে বেশ সুবিধাজনক অবস্থায়। বাংলাদেশ ব্যাকফুটে। কিন্তু কোচ স্টিভ রোডস বিশ্বাস করেন, এখান থেকেই ম্যাচ জেতা সম্ভব। কিভাবে?
খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে এসে নিজের ফর্মুলাও জানিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ কোচ। তার অনুভব ও উপলব্ধি, প্রথম দুই দিন যাই ঘটুক, চালচিত্র যেমনই থাকুক না কেন- পাঁচটি ভাল ও সফল সেশনই পারে বাংলাদেশকে ম্যাচ জেতাতে। স্টিভ রোডসের স্থির বিশ্বাস আগামীকালকে তিন সেশনে ভাল খেলতে পারলে জয়ের মালা টাইগারদের গলায়ই পড়বে।
Advertisement
স্টিভ রোডসের মূল্যায়ন সোমবার শেষ দুটি সেশন ছিল বাংলাদেশের। তার কথা, ‘আমরা আজ টেস্ট জেতার সম্ভাব্য করনীয় স্থির করে ফেলেছি। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, পাঁচ সেশনেই এ টেস্ট জেতার সম্ভাব্য করণীয় চূড়ান্ত আমাদের। আজকের প্রথম সেশনটি ছিল সমান সমানে। আমার মনে হয় তৃতীয় দিনের শুরু ভাল হয়নি আমাদের। কিন্তু পরের দুই সেশন জিতেছি আমরা। আমরা লক্ষ্যের দিকে এগুচ্ছি। এখন আগামী কালকের তিন সেশন ভাল খেলা এবং জেতাই লক্ষ্য।’
বল তেমন ঘুরছে না। মাঝে মধ্যে একটু আধটু টার্ন নিচ্ছে। সেটাও বল পুরনো হবার পরে। এটাকে স্বস্তির কারণ মনে করছেন স্টিভ রোডস। তার ধারণা, ‘পিচে বল খুব একটা ঘুরছে না। পুরনো বল টার্ন করছে। এ উইকেটে খুব বেশী চিন্তায় না ডুবে খেললে অবশ্যই স্পিন আক্রমন সামলানো সম্ভব।’
প্রথম ইনিংসে যে দুই জিম্বাবুয়ান বোলার বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে সর্বাধিক সমীহ আদায়ের পাশাপাশি বেশী উইকেট দখল করেছিলেন, সেই টেন্ডাই চাতারা আর সিকান্দার রাজার বিপক্ষে আজ শেষ দিকে দুই ওপেনার লিটন দাস ও ইমরুল কায়েসের আত্ববিশ্বাসী ও আস্থাপূর্ণ ব্যাটিং দেখে সন্তুষ্ট স্টিভ রোডস। তার কথা, ‘আজ শেষ ঘন্টায় জিম্বাবুয়ের দুই ফ্রন্টলাইন বোলার চাতারা ও সিকান্দার রাজাকে বেশ ভাল ভাবেই সামলেছে। তাদেরকে ঠিক মত সামলাতে পারলে অতি অবশ্যই রান চাকা সচল থাকবে।’
বাংলাদেশ কোচের আশা, কয়েকটি লম্বা পার্টনারশিপই পারে বাংলাদেশকে ম্যাচ জেতাতে। তাইতো মুখে এমন কথা, ‘আমরা কয়েকটি ভাল পার্টনারশিপ গড়ার কথা চিন্তায় আছি। আমি বিশ্বাস করি যদি একাধিক বা কয়েকটি বড় জুটি গড়ে ওঠে তাহলে আমরা জিততে পারবো।’
স্টিভ রোডসের শেষ কথা, ‘৩২১ রানের লক্ষ্যটা বেশ কঠিন। তবে এমন নয় যে তা ছোয়া যাবে না। অবশ্যই ঐ স্কোর টপকে ম্যাচ জেতা সম্ভব।’
দেখা যাক টাইগাররা কোচের আস্থার প্রতিদান দিতে পারেন কিনা?
এআরবি/এসএএস/এমএস