অর্থনীতি

স্বর্ণ আমদানিতে ভ্যাট নির্ধারণে কমিটি গঠন

বাংলাদেশে স্বর্ণের বাজারের আরও উন্নয়ন চায় সরকার। এ জন্য স্বর্ণ আমদানি ও রফতানিতে কী পরিমাণ মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) আরোপ যুক্তিযুক্ত হবে তা নির্ধারণে বাণিজ্য সচিবকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি ভ্যাট প্রদান না করে দেশে আসা স্বর্ণকে মূল ধারায় নিয়ে আসতে কী পরিমাণ অর্থ ভ্যাট হিসেবে আদায় করা যায়, সে বিষয়ও সুপারিশ করবে। অর্থ মন্ত্রণালয় বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

Advertisement

কমিটিতে অন্য সদস্যরা- বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের একজন করে প্রতিনিধি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একজন ও বাংলাদেশের ব্যাংকের প্রতিনিধি। এ কমিটি ব্যাগেজ রুলসের বিষয়েও মতামত প্রদান করবে। সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটি অর্থমন্ত্রীর কাছে একটি প্রতিবেদন দাখিল করবে।

সোমবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সভায় উপস্থিতি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, বাণিজ্য সচিব সুভাশীষ বসু, অর্থ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার প্রমুখ।

সূত্র জানায়, স্বর্ণ আমদানিতে ভরি প্রতি ১ হাজার টাকা ভ্যাট আরোপ করতে চান অর্থমন্ত্রী। কিন্তু বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) ভ্যাটের পরিমাণ আরও কমানোর আবেদন করে। এছাড়া ইতোমধ্যেই যেসব স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা ভ্যাট না দিয়ে স্বর্ণ আমদানি করে স্টক করে রেখেছে তাদের স্বর্ণ বৈধ করার জন্য ভরি প্রতি ১ হাজার টাকা করে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু বাজুস এর হার ৩০০ টাকা করার আবেদন জানায়।

Advertisement

এরই প্রেক্ষিতে নব গঠিত কমিটিকে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় বাজারদর বিশ্লেষণ করে এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট মতামত দিতে বলেছে।

এর আগে গত সেপ্টেম্বরে স্বর্ণ নীতিমালা প্রণয়ে তাগিদ দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেন অর্থমন্ত্রী। ওই চিঠিতে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রতি ভরি স্বর্ণ আমদানির ওপর ১ হাজার টাকা করে মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) আরোপ করা উচিত। আর বর্তমানে যাদের কাছে স্বর্ণ আছে, তাদের কাছ থেকেও প্রতি ভরিতে ১ হাজার টাকা করে নিতে হবে।

চিঠিতে স্বর্ণ ব্যবসায়ের আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী। বলেছেন, দেশে কত স্বর্ণ আছে, তার কোনো হিসাব নেই, হিসাবটি করাও যাবে না। তার মতে, এই হিসাব করতে গেলে স্বর্ণের বাজারমূল্য বিবেচনা করে একটি মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। এই মূল্য নির্ধারণের ফলে যাদের কাছে স্বর্ণ আছে, তারা রাতারাতি ধনী হয়ে যাবেন। এই বর্ধিত ধনের ওপর অবশ্য জুতসই লেভি নির্ধারণ করা যায়। তবে লেভি খুব বেশি ধরলে স্বর্ণের ব্যবসায়ের প্রসার হবে না।

অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী লেভি হতে পারে প্রতি ভরিতে ১ হাজার টাকা। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) লেভির পরিমাণ ৩০০ টাকা ধরার অনুরোধ জানালেও এত কমের পক্ষে নন অর্থমন্ত্রী।

Advertisement

দেশে স্বর্ণ কেনাবেচা হয় ভরি, আনা ও রতি হিসেবে। যেমন ১৬ আনায় ১ ভরি ও ৪ রতিতে ১ আনা। বাণিজ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে অর্থমন্ত্রী জানান, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ভরির কোনো অস্তিত্ব নেই। আর দেশীয় হিসাবে ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রামে ১ ভরি হয়। সেই হিসাবে ১ কেজি স্বর্ণের ওজন হলো ৮৫ দশমিক ৭৩৩ ভরি। বিদেশ থেকে দেশে বেআইনিভাবে প্রচুর পরিমাণে স্বর্ণ আসে এবং সেগুলো আবার ভারতে পাচার হয় এবং এক হিসাবে ভারতের স্বর্ণ ব্যবসায়ের জন্য বড় একটি অংশ বাংলাদেশ থেকে যায় বলে অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

অর্থমন্ত্রী চিঠিতে বলেন, ‘বাস্তবতা হলো আমাদের কোনো স্বর্ণ নীতিমালা নেই। এখানে স্বর্ণ আমদানি করা যায়। কিন্তু গত সাত থেকে আট বছরে এক ফোঁটা স্বর্ণও আমদানি হয়নি। আমাদের স্বর্ণকাররা খুবই গুণী এবং তারা স্বর্ণালংকারের একটি সীমিত বাজার পরিচালনা করেন। এসব স্বর্ণই আমাদের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের স্বর্ণ এবং সেগুলোকে প্রায়ই নতুন করে বানানো হয়।’

স্বর্ণ আমদানির ওপর ২০১১ সালে প্রতি আউন্সে (২৮ দশমিক ২৫ গ্রাম) ৩ হাজার টাকা ভ্যাট আরোপ করা হয়েছিল উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রীকে অর্থমন্ত্রী জানান, আগে এই ভ্যাট ছিল ৭০০ টাকা। কিন্তু নতুন ভ্যাট হার আরোপের পর আর কোনো স্বর্ণ আইনগতভাবে দেশে আসেনি।

উল্লেখ্য, গত ৩ অক্টোবর স্বর্ণ নীতিমালা অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা।

এমইউএইচ/জেএইচ/এমএস