অর্থনীতি

কী শেয়ার কিনছে আইসিবি?

>> পুরো দুই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে আইসিবি>> ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ করতে আইসিবিকে পরামর্শ>> এগিয়ে আসতে হবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদেরও

Advertisement

পুঁজিবাজারে গতি ফেরাতে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশকে (আইসিবি) দুই হাজার কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ ক্ষেত্রে অন্যতম একটি শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। বন্ড বিক্রির কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে তাদের।

এই হিসাবে বন্ড বিক্রি করে কমপক্ষে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের কথা আইসিবির। তবে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী সানাউল হক জানিয়েছেন, বন্ড বিক্রির পুরো দুই হাজার কোটি টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হবে।

এদিকে আইসিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, বন্ড বিক্রির অর্থ দিয়ে পুঁজিবাজার থেকে শেয়ার কেনা শুরু হয়েছে। তবে কোন কোন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার আইসিবি কিনছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

Advertisement

আরও পড়ুন >> বাড়বে তারল্য, ফিরবে কি আস্থা?

সূত্র বলছে, একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে বন্ড বিক্রির টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। শেয়ার কিনে যাতে আইসিবি লোকসানে না পড়ে সে বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আইসিবির কাছে ইতোমধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার রয়েছে, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সেই প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও তারল্য সংকটে দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজারে মন্দাভাব বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে বাজারে আইসিবির বড় অঙ্কের বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত খুবই ভালো উদ্যোগ। তবে আইসিবিকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। বাজারে তারল্য বাড়ানোর পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা যদি না বাড়ে তাহলে বাজারে তারল্য বাড়লেও খুব একটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে না।

এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটু জাগো নিউজকে বলেন, ‘আইসিবির বন্ড কেনার জন্য কয়েকটি ব্যাংক ইতোমধ্যে অনুমোদন দিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। তবে আইসিবির বন্ড বিক্রির টাকা একবারে বিনিয়োগ হবে না। অল্প অল্প করে এ টাকা বিনিয়োগ হবে।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘আইসিবির বিনিয়োগের ফলে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করছি। কারণ আইসিবির ঘোষিত বিনিয়োগের পরিমাণ দুই হাজার কোটি টাকা হলেও এর মনস্তাত্বিক প্রভাব অনেক বেশি। তবে আমরা চাই আইসিবির বিনিয়োগের কারণে কেউ যেন অতি উৎসাহী হয়ে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। বিনিয়োগের লক্ষ্য হতে হবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানো।’

আরও পড়ুন : নিষ্ক্রিয় আইসিবি

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আইসিবিকে গত ১৭ জুলাই দুই হাজার কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার অনুমোদন দেয় বিএসইসি। গত ১১ অক্টোবর বিএসইসির কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, বন্ড বিক্রির কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ অর্থ আইসিবিকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্সে ১৯৯৬’এর ২ সিসি ক্ষমতা বলে এ সিদ্ধান্ত নেয় হয়।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ সিদ্ধান্তের ফলে বন্ড বিক্রি করে আইসিবিকে কমপক্ষে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে। তবে ২৩ অক্টোবর স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত জরুরি বৈঠকের পর আইসিবির এমডি কাজী সানাউল হক ঘোষণা দেন, বন্ড বিক্রির ৭৫ শতাংশ অর্থ নয় পুরো দুই হাজার কোটি টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হবে।

আইসিবির বিনিয়োগের বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে বিএসইসি প্রায় আইসিবিকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করে। বন্ড বিক্রি করে সেই অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে আইসিবিকে বিএসইসি বাধ্যতামূলক যে নির্দেশনা দিয়েছে তা খুবই ভালো সিদ্ধান্ত। তবে আইসিবির এ বিনিয়োগ হতে হবে ভালো শেয়ারে। পচা শেয়ারে যাতে বিনিয়োগ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’

আরও পড়ুন : দর পতনের শীর্ষে আইসিবি

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মো. রকিবুর রহমান বলেন, ‘আইসিবি বন্ড বিক্রির টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা শুরু করেছে। আবার কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছে বিক্রি করা শেয়ারের অর্থ ডিএসইর ব্রোকারেজ হাউসগুলো হাতে পেতে শুরু করেছে। তবে বাজারে এর তাৎক্ষণিক প্রভাব দেখা যায়নি। এছাড়া আইসিবির বিনিয়োগ এখনও সেভাবে শুরু হয়নি। আমরা আশা করছি, একটু সময় নিলেও এটি অবশ্যই বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’

তিনি বলেন, ‘তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, শুধু আইসিবি বিনিয়োগ করলে হবে না। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদেরও এখন বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে হবে। আইসিবি বিনিয়োগ করলো, কিন্তু অন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নিষ্ক্রিয় থাকলো তা হলে ভালো ফল পাওয়া যাবে না।’

এমএএস/এএইচ/এমএআর/জেআইএম