এমনটা হতে পারে- কেউই কল্পনা করেনি। অন্তত সাম্প্রতিক ফর্ম এবং পারফরম্যান্স সেটা বলে না। ঘরের মাঠে ওয়ানডেতে বাংলাদেশ এখন এক অপ্রতিরোধ্য শক্তির নাম। কিন্তু টেস্টেও তো কম যায় না। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মত দলকে হারিয়েছে। সেখানে জিম্বাবুয়ে! হয়তো বা এই অহমিকাই বড় ধরণের ধ্বংস ডেকে আনছে। প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ের করা ২৮২ রানের জবাবে বাংলাদেশ অলআউট ১৪৩ রানে।
Advertisement
প্রথম ইনিংসেই ১৩৯ রানের লিড নিয়ে নিলো সফরকারী জিম্বাবুয়ে। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ১ রান করার পরই অবশ্য দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ হয়ে যায়। ফলে দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের চেয়ে ১৪০ রান এগিয়ে জিম্বাবুইয়ানরা।
মোট কথা, ব্যাটিং করাই যেন ভুলে গেলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। জিম্বাবুয়ে বোলাররা যেন তাদের সামনে হয়ে উঠলেন এক একজন ওয়াসিম আকরাম, গ্লেন ম্যাকগ্রা, ডেল স্টেইন কিংবা হালের মোহাম্মদ আব্বাস। তাদের বলই যেন পড়তে পারছেন না বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। সিলেট টেস্টের দ্বিতীয় দিনই তাই পরাজয়ের শঙ্কায় পেয়ে বসেছে স্বাগতিক বাংলাদেশকে।
২৮২ রানে জিম্বাবুয়েকে বেধে রাখার পর সবাই ভেবেছিল, যাক অন্তত কম রানেই থামানো গেছে সফরকারীদের। এবার মনের আনন্দে, সন্তুষ্টচিত্তে ব্যাটিং করা যাবে। কিন্তু ব্যাট করতে নামার পর নিজেরাই যেন নিজেকের খোঁড়া গর্তে পড়তে লাগলো সিরিয়াল ধরে। যার ফলশ্রুতিতে মাত্র ১৪৩ রানেই অলআউট হয়ে গেলো বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংসের চেয়ে ১৩৯ রানে পিছিয়ে থাকতে হলো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দলকে।
Advertisement
৭৮ রানে ৬ উইকেট পড়ার পর ১০০ রানও হবে কি না, যখন এই শঙ্কায় পেয়ে বসেছিল বাংলাদেশকে, তখন সেই ১০০ পার করে দিয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ এবং আরিফুল হক। কিন্তু ১০০ পার করার পর যে প্রয়োজনীয় জুটিটা গড়া প্রয়োজন ছিল এ দু’জনের সেটা করতে পারলেন না। ৩০ রানের জুটি গড়ে অবশেষে শন উইলিয়ামসের বলে রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান মেহেদী হাসান মিরাজ। ৩৩ বলে ২১ রান করেন তিনি।
বাংলাদেশের জন্য শেষ পর্যন্ত আপ্রাণ লড়াই করে যান অভিষিক্ত আরিফুল হক। রান করার চেয়ে সময় ক্ষেপণ করাই যেন ছিল তার মূল দায়িত্ব। শেষ পর্যন্ত ৯৬ বলে ৪১ রান করে অপরাজিত ছিলেন তিনি। দলের মধ্যে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হচ্ছেন তিনিই। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩১ রান করেন মুশফিকুর রহীম।
দ্বিতীয় দিন সকালে জিম্বাবুয়েকে মাত্র ২৮২ রানেই থামিয়ে দেয়ার সুখস্মৃতি নিয়ে নিজেদের ইনিংসে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। তাইজুলের ক্যারিয়ারের চতুর্থ পাঁচ উইকেট নেয়ার আনন্দটা বেশিক্ষণ টিকতে দেননি ব্যাটসম্যানরা।
মধ্যাহ্ন বিরতির আগে হওয়া এক ওভারে বিনা উইকেটে ২ রান করেছিল বাংলাদেশ। বিরতি থেকে ফিরে ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই সাজঘরে ফিরে যান ইমরুল কায়েস। টেন্ডাই চাতারার নিরীহ দর্শন এক ডেলিভারিতে ডিফেন্ড করেও উইকেটে আঘাত হানা থেকে বিরত রাখতে পারেননি ইমরুল। ওয়ানডে সিরিজে ব্যাট হাতে চমক দেখানো ইমরুল আউট হওয়ার আগে করেন ৫ রান।
Advertisement
নিজের সঙ্গীর বিদায়ের পরে বেশিক্ষণ থাকেননি লিটনও। ইনিংসের নবম ওভারে কাইল জার্ভিসের বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বসেন তিনি। আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৯ রান।
পরের ওভারে বাংলাদেশকে চূড়ান্ত বিপদে ফেলে দেন চাতারা। ওভারের তৃতীয় বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন নাজমুল হোসেন শান্ত, পঞ্চম বলে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। মাত্র ১৯ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয় নামে বাংলাদেশের ইনিংসে।
পঞ্চম উইকেটে মুশফিকের সাথে আশা দেখিয়েছিলেন বাঁহাতি টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক। দুজন মিলে গড়েন ৩০ রানের জুটি। যখনই মনে হচ্ছিলো ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ, ঠিক তখনই সিকান্দার রাজার বোলিংয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান মুমিনুল। আউট হওয়ার আগে করেন ১১ রান।
উইকেটে বোলারদের জন্য বিশেষ কিছু নেই, টিকে থাকতে পারলেই করা যাবে রান। প্রথম দিনে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং দেখেই বুঝা গিয়েছে এ কথা। কিন্তু উইকেটে টিকে থাকাটাই যেনো বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ দলের জন্য। দলীয় পঞ্চাশের আগেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
৬ষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন মুশফিকুর রহীম। তার কাছেই ছিল সবচেয়ে বেশি আশা-ভরসা। তিনি হয়তো ডুবতে থাকা তরীটাকে টেনে তুলবেন। কিন্তু আরিফুল হকের সঙ্গে ২৯ রানের জুটি গড়ার পর বিদায় নেন মুশফিকও। ৫৪ বল খেলে ৩১ রান করার পর কাইল জার্ভিসের অফ স্ট্যাম্পের বাইরে থাকা বলকে খোঁচা দিতে গিয়েই ব্যাটের কানায় লাগান মুশফিক এবং সেটি গিয়ে জমা পড়ে উইকেটের পেছনে রেগিস চাকাভার হাতে।
৭ম ব্যাটসম্যান হিসেবে মিরাজ বিদায় নেয়ার পর বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে যে আর খুব বেশিদুর যেতে পারবে না, সেটা বোঝাই গিয়েছিল তখন। এরপর আরিফুল হক কিছুক্ষণ চেষ্টা করেছিলেন দৃঢ়তার সঙ্গে প্রতিরোধ করার। কিন্তু তিনি একপাশে যতই দৃঢ় হোন না কেন, অন্য প্রান্তে তো আর কেউ টিকতে পারছেন না।
তাইজুল ইসলাম ৮ রান করে, নাজমুল ইসলাম ৪ রান করে আউট হন। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আবু জায়েদ রাহী আউট হন রানআউটের খাঁড়ায় পড়ে। জিম্বাবুয়ে বোলার তেন্দাই চাতারা এবং সিকান্দার রাজা নেন ৩টি করে উইকেট। ২ উইকেট নেন কাইল জার্ভিস এবং ১ উইকেট নেন শন উইলিয়ামস।
আইএইচএস/পিআর