জাতীয়

কোনো গুজবে কান দেবেন না : কওমি মাহফিলে প্রধানমন্ত্রী

কওমির আলেম-ওলামাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আপনারা কোনো গুজবে কান দেবেন না। গুজব বিশ্বাস করবেন না। সোশ্যাল মিডিয়াতে নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হয়। এই অপপ্রচার বন্ধে ইতোমধ্যে আমরা সাইবার ক্রাইম আইন করেছি। কেউ যদি এ ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার চালায়, সঙ্গে সঙ্গে সেই আইন দ্বারা তাদের বিচার হবে, গ্রেফতার করা হবে।’

Advertisement

“আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি'আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ”- এর উদ্যোগে আয়োজিত শুকরানা মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আরও পড়ুন >> সামনে নির্বাচন, আমার জন্য দোয়া করবেন : প্রধানমন্ত্রী

রোববার সকাল ১০টা ৪৮ মিনিটে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মো. জয়নুল আবেদীন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক সংগঠনের মহাসচিব আল্লামা আবদুল কুদ্দুস।

Advertisement

আল্লামা আহমদ শফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আল্লামা আশরাফ আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ আবদুল্লাহ, মাওলানা মাজহার আলী, মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ, মাওলানা রুহুল আমীন, মাওলানা আবদুল লতিফ, মাওলানা নুরুল ইসলাম প্রমুখ। বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্রেস্ট উপহার দেয়া হয়।

সাধারণ শিক্ষার মতোই স্বীকৃতিপ্রাপ্ত কওমি শিক্ষার্থীদের দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বক্তৃতা শুরু করেই মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়ন ও আলেম-ওলামাদের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে ইসলামিক ফাউন্ডেশন, টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার জায়গা প্রদানসহ বিভিন্ন অবদানের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ধর্মীয় শিক্ষা সংযুক্ত হলেই একটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গ হয়। কেউ যেন কওমি স্বীকৃতি বাতিল করতে না পারে সেজন্য এই আইন (স্নাতকোত্তর স্বীকৃতি) করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কওমি মাদরাসার মাধ্যমেই মুসলমানরা শিক্ষা গ্রহণ শুরু করে। এই মাদরাসার শিক্ষার্থীরাই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। দেশের প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে সরকার কাজ করছে। কওমি শিক্ষার্থীদের দেশ ও জাতির জন্য কাজ করতে হবে।’

Advertisement

ধর্মীয় বিষয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দিলে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ধর্ম ইসলাম এবং নবী করিম (সা.) সম্পর্কে কেউ কোনো (অবমাননাকর) কথা বললে, আইন দ্বারাই তার বিচার হবে।’

আরও পড়ুন >> ‘আমার কর্মকৌশল রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার সুযোগ নেই’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আইন নিজের হাতে তুলে নেব না। আইনের মাধ্যমে তাদের বিচার করে উচিত শিক্ষা দেয়া হবে, যাতে তারা কোনোভাবে এ ধরনের অপপ্রচার চালাতে না পারে।’

‘হাতেগোনা কয়েকটি লোক ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে ইসলাম ধর্মের বদনাম করে’ উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি যখনই কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যাই, কেউ যদি বলে ইসলামিক টেররিস্ট, আমি সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ জানাই। আমি বলি, এটা বলতে পারবেন না। কারণ সবাই টেররিজমে বিশ্বাস করে না বা সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের শান্তি বিঘ্নিত হোক তা আমরা চাই না। দেশে শান্তি থাকলেই উন্নতি হবে। উন্নতি থাকলে সবাই লাভবান হবেন।’

শোকরানা মাহফিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘কওমি জননী’ উপাধিতে ভূষিত করেন কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড গওহরডাঙ্গার চেয়ারম্যান এবং গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদরাসার মহাপরিচালক মুফতি রুহুল আমীন। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা আপনি স্বীকৃতি দিয়েছেন, সবকিছু উপেক্ষা করে। অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন, তার জবাব দিয়েছেন। ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর জননীর ভূমিকা আপনি (শেখ হাসিনা) পালন করেছেন। আজ কওমি মহাসমুদ্রে আমি ঘোষণা করতে চাই, আপনি কওমি জননী। আজ থেকে আপনাকে এ উপাধি দিলাম। আপনার মাতৃত্বের ভূমিকা না থাকলে দেশবিরোধী, সাহাবাদের শত্রু, জামায়াত-মওদুদীবাদীরা এ দেশে (স্বীকৃতি) তা হতে দিত না।’

আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ আবদুল্লাহ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কওমি জননী হলে আপনারা কী? সন্তান। আপনারা সন্তান হলে সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার যেমন দায়িত্ব আছে, তেমনি জননীর প্রতিও সন্তানদের দায়িত্ব রয়েছে। আপনাদের সহযোগিতা চাই।’

এফএইচএস/এমএআর/জেআইএম