সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেতে চাইলে বিএনপি নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। আলোচনার পথ খোলা আছে।
Advertisement
রোববার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক ইস্যুতে প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
শোনা যাচ্ছে সরকার হয়তো খালেদা জিয়ার জামিনে আর বাধা দেবে না- এমন কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আছে কিনা প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বিষয়টা এমন নয় যে এটা কোনো সাধারণ মামলা। ১০ বছর ধরে দুটি মামলা চলছে। সময়মতো হাজিরা দিলে এ মামলা দুটির রায় অনেক আগেই হয়ে যেত। অহেতুক একটা বিলম্ব তারা করেছেন। সেজন্য মামলার কাজ বিলম্বিত হয়েছে। মামলার সঙ্গে নির্বাচনকে সম্পৃক্ত করার কোনো যুক্তি নেই।’
‘মামলা আমরা করিনি। বেগম জিয়াকে আমরা দণ্ড দেইনি। কাজেই আমরা যেখানে দণ্ড দেইনি সেখানে আমরা তো মুক্তি দিতে পারি না। এখন তারা আইনিভাবে চেষ্টা করুক। যদি কোনো অপশন থাকে আদালতে যেতে পারে। এর আগে প্রায় ৩০ মামলায় বেগম জিয়া জামিন পেয়েছেন। সেগুলোতে তো আমরা বাধা দেইনি। এখন যে মামলার রায়ে দণ্ড প্রদান করা হয়েছে, সেখানে জামিন দেবে কিনা- সেটা উচ্চ আদালত বলতে পারবেন। এজন্য আইনিভাবে এগুতে হবে।’
Advertisement
চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সেটা তারা বলতে পারেন। প্যারোলে মুক্তি যদি তিনি চান তাহলে আলোচনা তো খোলামেলা। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হতেই পারে। তবে তার চিকিৎসা নিয়ে বিএনপি অনেক রাজনীতি করেছে। বাস্তবে বেগম জিয়ার অসুস্থতার বিষয়ে কোনোভাবে কারা কর্তৃপক্ষ অবহেলা করেনি। এখন তো চিকিৎসা নিয়ে কোনো কথা নাই।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণায় দেরি করবে কিনা সেটা নির্বাচন কমিশনের বিষয়। ইসি চাইলে তফসিল ঘোষণা বিলম্বিত করতে পারবে। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাধা দেয়া হবে না। ইসি যদি ঐক্যফ্রন্টের চিঠিকে গুরুত্ব দিয়ে মনে করে তফসিল ঘোষণা দেরিতে করা প্রয়োজন তাহলে সেটা তারা করবে। তবে নির্বাচন তো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই করতে হবে। তফসিল পিছিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তারা যদি নির্বাচনের আয়োজন করতে পারে সেটা তাদের এখতিয়ার।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সংলাপে আমরা আর বেশি সময় দিতে চাচ্ছি না। কারণ এখন তো আমাদের ইলেকশন রিলেটেড কিছু কাজ করতে হবে।’
ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আবার বসবেন বলা হয়েছিল- এ প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখান থেকে আমরা সরিনি। স্বল্প পরিসরে আলোচনা করা যায়। আলোচনা করাই যায়। আলোচনার দুয়ার এখনও বন্ধ হয়নি।’
Advertisement
কবে নাগাদ আবার সংলাপ হতে পারে- এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ না বলেও তিনি বলেন, ‘আমরা ৭ তারিখের পর যেতে চাইছি না। কারণ বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল ২০০ কাছাকাছি। এর মধ্যে আলোচনা তো অনেকেই করতে চায়।’
অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সংলাপ আর আন্দোলন একসঙ্গে চলতে পারে না। এটা একদম পরিষ্কারভাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। আমিও বলছি সংলাপে যখন তারা আবারও বসতে চান তাহলে আন্দোলন কেন?’
উল্লেখ্য, চলমান সংলাপ কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দিয়েছে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। শনিবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বরাবর ড. কামাল হোসেন স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত একটি আবেদন নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে দাখিল করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চলমান সংলাপের বিষয়টি উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, আপনারা প্রধানমন্ত্রীর সংলাপের বিষয়টি অবগত আছেন এবং সেদিকে নজর রাখছেন। সেই প্রেক্ষাপটে আমরা মনে করি, তফসিল ঘোষণার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়টি চলমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়া। এজন্য সংলাপ না হওয়া পর্যন্ত কমিশনের অপেক্ষা করাই শ্রেয়।
গত ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সংলাপ করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তবে এতে তেমন কোনো সমাধান না পাওয়ায় আবারও সংলাপে বসতে চায় ঐক্যফ্রন্ট।
এজন্য ফের আলোচনায় বসতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বরাবর চিঠি দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন স্বাক্ষরিত ওই চিঠি আওয়ামী সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। রোববার দুপুর ১২টার দিকে চিঠিটি গ্রহণ করেন কার্যালয়ের অফিস সহকারী জি এম মাসুদুল হাসান ও আলাউদ্দিন আহমেদ।
ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে চিঠিটি নিয়ে যান গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য জগলুল হায়দার আফ্রিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ও ম শফিক উল্লাহ ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ।
এমইউএইচ/এসআর/আরআইপি/এমএস