অর্থনীতি

যেসব শর্তে কর ছাড় পাচ্ছেন ডিএসইর সদস্যরা

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কৌশলগত বিনিয়োগকারী চীনের দুই প্রতিষ্ঠান শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ কনসোর্টিয়ামের (জোট) কাছ থেকে পাওয়া অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের শর্তে মূলধনী মুনাফার ওপর থেকে ১০ শতাংশ কর ছাড়া দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

Advertisement

আইন অনুযায়ী শেয়ার হস্তান্তরজনিত মূলধনী মুনাফার ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। তবে শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ কনসোর্টিয়ামের কাছে ডিএসইর শেয়ার বিক্রি করে যে মুনাফা হয়েছে তার ওপর থেকে ৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। এ কর ছাড় দেয়ার ক্ষেত্রে এনবিআর ছয়টি শর্তজুড়ে দিয়েছে।

শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে-

১. শেয়ারহোল্ডারকে শেয়ার বিক্রির সম্পূর্ণ অর্থ বাংলাদেশের কোনো স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে হবে।

Advertisement

২. প্রত্যেক শেয়ারহোল্ডারকে একটি ডেজিগনেটেড ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং নতুন বেনিফিশারি ওনার অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। শেয়ার বিক্রির করে পাওয়া সম্পূর্ণ অর্থ সরাসরি ডেজিগনেটেড ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করতে হবে।

৩. ডেজিগনেটেড ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করা অর্থ জমা হওয়ার তারিখ থেকে ছয় মাসের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে হবে।

৪. সম্পূর্ণ অর্থ বিনিয়োগের তারিখ থেকে তিন বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ থাকবে।

৫. নতুন বেনিফিশারি ওনার অ্যাকাউন্টে লেনদেনের মাধ্যমে পাওয়া অর্থও তিন বছর পর্যন্ত তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ থাকতে হবে। তবে বিনিয়োগ থেকে পাওয়া লভ্যাংশ আয় ডেজিগনেটেড ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে স্থানান্তর করা যাবে।

Advertisement

৬. বিনিয়োগ থাকা তিন বছরে প্রতি বছরের ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে বিনিয়োগকারীকে তার নতুন বেনিফিশারি ওনার অ্যাকাউন্টের সংশ্লিষ্ট বছরের ক্লাইন্ট লেজার ডিটেলস এবং ডেজিগনেটেড ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিবরণী সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনারের নিকট দাখিল করতে হবে।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনের দুই প্রতিষ্ঠান শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ কনসোর্টিয়াম ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ারের বিপরীতে ৯৬২ কোটি টাকা জমা দেয়। এর মধ্য থেকে সরকারের কোষাগারে স্ট্যাম্প ডিউটি বাবদ ১৫ কোটি টাকা জমা দেয় ডিএসই। বাকি ৯৪৭ কোটি টাকা সদস্য ব্রোকারদের পাওয়ার কথা।

কিন্তু কৌশলগত বিনিয়োগকারীরার কাছে শেয়ার বিক্রির বিপরীতে ক্যাপিটাল গেইন হওয়ায় ১৫ শতাংশ ট্যাক্সের বিষয় চলে আসে। এই ট্যাক্স ছাড় চেয়ে সদস্য ব্রোকারদের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীর কাছ আবেদন করা হলে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে পাওয়া অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের শর্তে ১০ শতাংশ ট্যাক্স ছাড়া দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে গত ১২ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজেই এ ঘোষণা দেন। এরই প্রেক্ষিতে এনবিআর থেকে মূলধনী মুনাফার ওপর থেকে ১০ শতাংশ কর ছাড়া দিয়ে এসআরও জারি করা হয়েছে।

এদিকে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে পাওয়া টাকা গত মঙ্গলবার থেকে সদস্যদের বুঝিয়ে দেয়া শুরু করেছে ডিএসই। ডিএসইর ২৫০ জন সদস্যকে দুই ভাগে ভাগ করে এ চেক দেয়া হচ্ছে। এক অংশের সদস্যদের পাওনা টাকার ওপর থেকে কোনো ধরনের ট্যাক্স কাটা হচ্ছে না। আর অন্য অংশের সদস্যদের পাওনা টাকা থেকে ৫ শতাংশ হারে ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স কেটে রাখা হচ্ছে।

ট্যাক্স কাটা হচ্ছে না ডিএসইর এমন সদস্য রয়েছেন ৩৬ জন। এই ৩৬ জন সদস্যের প্রত্যেকে প্রায় তিন কোটি ৮০ লাখ টাকা করে পাচ্ছেন। বাকি ২১৪ জন সদস্য পাচ্ছেন প্রায় তিন কোটি ৬০ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার ডিএসইর পরিচালক শরিফ আতাউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, যারা প্রথমদিকে সদস্য পদ কেনেন তাদের লেগেছিল এক লাখ টাকা করে। কিন্তু পরবর্তীতে পদস্য পদ কিনতে ৩২ কোটি টাকার ওপরে খরচ হয়েছে। ৩২ কোটির ওপরে খরচ করে সদস্য পদ কেনাদের কোনো ক্যাপিটাল গেইন হয়নি। বরং তাদের আরও লোকসান হয়েছে। এমন সদস্য রয়েছে ৩৬ জন। এ সদস্যের কাছ থেকে কোনো ট্যাক্স টাকা হচ্ছে না।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ কনসোর্টিয়ামের কাছ শেয়ার বিক্রি করে যে মূলধনী মুনাফা হয়েছে, তার ওপর থেকে ডিএসই কর কেটে রাখবে। পরবর্তীতে ডিএসই থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে করের সেই অর্থ জমা দিতে হবে।

এমএএস/বিএ/জেআইএম