যে প্রিয়মুখ দর্শনে মানুষের চোখ জুড়ায়, মন কেমন কেমন করে কিংবা যুবকের বুকের বামপাশে জমা হয় একরাশ উদাসী দীর্ঘশ্বাস- তিনিই তো প্রিয়দর্শিনী। হ্যাঁ, ঢাকাই ছবিতে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে দর্শক মুগ্ধ করে এই উপমাটি তিনি নিজের করে নিয়েছেন। তিনি মৌসুমী। আজ শনিবার, (৩ নভেম্বর) এই নন্দিত চিত্রনায়িকার জন্মদিন।
Advertisement
শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকেই মৌসুমী ভেসে যাচ্ছেন ভক্ত-অনুরাগীদের ভালোবাসা আর শুভেচ্ছায়। সেইসঙ্গে পরিবার ও বন্ধুরা কেউ ফোনে, কেউ সরাসরি উপস্থিত হয়ে আরো একটি নতুন বসন্তে স্বাগত জানিয়েছেন তাকে, বললেন মৌসুমী। তবে তার কাছে স্পেশাল হলো নিজের স্বামী ওমর সানী ও দুই সন্তান ফাইজা-ফারদিনের কাছে থেকে পাওয়া শুভেচ্ছা।
নিজের জন্মদিন প্রসঙ্গে মৌসুমী জাগো নিউজকে বলেন, ‘গতকাল রাতে প্রিয়জনদের কাছ থেকে শুভেচ্ছা পেয়েছি। ভক্তরা শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। এই ভালোবাসাটুকুই জীবনের প্রাপ্তি। এভাবেই সবার ভালোবাসা আর দোয়া নিয়ে ভালো থাকতে চাই।’
এদিকে আজ সন্ধ্যায় জন্মদিন উপলক্ষে মৌসুমী ঘরোয়া এক আয়োজন করেছেন। সেখানে উপস্থিত থাকবেন অভিনেত্রীর প্রিয় মানুষ, চলচ্চিত্রের সহকর্মীরা।
Advertisement
মৌসুমীর পুরো নাম আরিফা পারভীন মৌসুমী। ১৯৭৩ সালে ৩ নভেম্বর খুলনায় তার জন্ম। বাবা নাজমুজ্জামান মনি ও মা শামীমা আখতার জামান। মৌসুমী ১৯৯৬ সালের ২ আগস্ট জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ওমর সানীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবন্ধ হন। দাম্পত্য জীবনে তাদের ফারদিন এহসান স্বাধীন (ছেলে) এবং ফাইনা (মেয়ে) নামের দুই সন্তান রয়েছে।
মৌসুমী ছোটবেলা থেকেই একজন অভিনেত্রী এবং গায়িকা হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর তিনি ‘আনন্দ বিচিত্রা ফটো বিউটি কনটেস্ট’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন, যার ওপর ভিত্তি করে তিনি ১৯৯০ সালে টেলিভিশনের বাণিজ্যিক ধারার বিভিন্ন অনুষ্ঠান নিয়ে হাজির হন।
আর চিত্রনায়িকা হিসেবে ঢাকাই চলচ্চিত্রে মৌসুমীর অভিষেক হয় ১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। এই সিনেমায় সালমান শাহের সঙ্গে জুটি হন এ অভিনেত্রী। প্রথম ছবিতেই নিজেদের মেধার জানান দেন সালমান শাহ ও মৌসুমী। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। দুজনেই ঢালিউডে নিজেদের অবস্থান তৈরি করেছেন।
তারপর দুই দশকের বেশি সময় ধরে ঢালিউডে মেধার দ্যুতি ছড়াচ্ছেন মৌসুমী। প্রায় দুই শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। নারগিস আক্তার পরিচালিত ‘মেঘলা আকাশ’ও চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘দেবদাস’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। সালমান শাহের সঙ্গে জুটি বেঁধে ক্যারিয়ার শুরু করা মৌসুমী সফল হয়েছেন ওমর সানী, ইলিয়াস কাঞ্চন, রুবেল, রিয়াজ, ফেরদৌস ও মান্নার সঙ্গে জুটি বেঁধে।
Advertisement
সর্বশেষ তিনি অভিনয় করেছেন আনিসুর রহমান মিলনের বিপরীতে। ছবির নাম ‘রাত্রির যাত্রী’। হাবিবুল ইসলাম হাবিব পরিচালিত এই সিনেমাটি মুক্তি পাবে আসছে ডিসেম্বরে। আর সর্বশেষ মৌসুমী অভিনীত ‘নায়ক’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছে।
অভিনয়ের পাশাপাশি নির্মাতা হিসেবেও সাফল্য পেয়েছেন মৌসুমী। ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’ মৌসুমী পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র। তারপর তিনি ২০০৬ সালে মেহের নিগার চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন। এরপর নির্মাণ করছেন ‘শূন্য হৃদয়’, ‘ভালোবাসবোই তো’ নামের দুটি ছবি।
অভিনয়ের বাইরে একজন মডেল হিসেবেও তার জনপ্রিয়তা আকাশ ছোঁয়া। লাক্স, তিব্বতসহ বিভিন্ন সময় তাকে দেখা গেছে অসংখ্য পণ্যের বিজ্ঞাপনে। বর্তমানে তিনি দেশের বৃহত্তম প্লাস্টিক হাউজহোল্ড, কাস্ট আয়রন, পিভিসি, ইলেকট্রনিক্স ও ফার্নিচার সামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান আরএফএলের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করছেন।
ছোট পর্দায় মৌসুমী সফল হয়েছেন জাহিদ হাসান, মাহফুজ আহমেদ, তৌকীর আহমেদ, অপূর্ব, সজলের মতো জনপ্রিয় তারকাদের বিপরীতে। এখানেও তিনি তৈরি করেছেন দারুণ জনপ্রিয়তা।
শোবিজের বাইরে মৌসুমী একজন আদর্শ গৃহিণী, আদর্শ মা। পাশাপাশি তিনি নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডেও। ‘মৌসুমী ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান দেখাশুনা করেন তিনি। বাংলাদেশের শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জনমত ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইউনিসেফ অ্যাডভোকেটের দায়িত্ব পালন করছেন মৌসুমী।
মৌসুমী-অভিনীত ছবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মৌসুমী, দোলা, আত্মঅহংকার, স্নেহ, প্রথম প্রেম, দেনমহর, অন্তরে অন্তরে, বিদ্রোহী বধূ, মুক্তির সংগ্রাম, হারানো প্রেম, ভাংচুর, সাজন, শেষ খেলা, আত্মত্যাগ, বিশ্ব প্রেমিক, গরিবের রাণী, প্রিয় তুমি, রাক্ষস, সুখের স্বর্গ, আদরের সন্তান, সুখের ঘরে দুঃখের আগুন, লুট তরাজ, আম্মাজান, শান্তি চাই, অন্ধ ভালোবাসা, মিথ্যা অহংকার, ঘাত প্রতিঘাত, সংসারের সুখ দুঃখ, প্রিয় শত্রু, লাট সাহেবের মেয়ে, লজ্জা, তুমি সুন্দর, বাঘের বাচ্চা, রূপসী রাজকন্যা, মোল্লা বাড়ির বউ, গোলাপী এখন বিলাতে, একজন সঙ্গে ছিল ইত্যাদি।
তিনি অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
এলএ/এমএস