বিনোদন

শিল্পীদের দাবি, চ্যানেলগুলোই নাটক ধ্বংস করছে

ছোটপর্দা টিকে আছে নানা রকম সংকটের মধ্য দিয়ে। বারবার এসব সংকট থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজেছেন এই অঙ্গণের মানুষরা। সেই ধারাবাহিকতায় ‘পেশাদারিত্বের সংকটে দেশের টেলিভিশন নাটক ও অভিনয় শিল্প’ নামের একটি মুক্ত আলোচনার আয়োজন করেছিল ‘অভিনয় শিল্পী সংঘ’। যেখানে ছোটপর্দার নানা সংকটের কথা তুলে ধরা হয়।

Advertisement

এসব সংকটে টিভি চ্যানেলগুলোকেই দায়ী বলে উল্লেখ করা হয়। নাটক তথা ছোটপর্দার সমস্যা টিভি চ্যানেলগুলো থেকেই সৃষ্ট বলে মনে করে অভিনয় শিল্পী সংঘসহ অন্যান্য সংগঠন। চ্যানেলগুলোর অব্যবস্থানা, শিল্পের প্রতি উদাসীনতা, অতিমাত্রায় বাণিজ্যভাবনাই এত সংকট তৈরি করেছে, দর্শককে টিভি চ্যানেল থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে বাজেট কমিয়ে, অতিরিক্ত বিজ্ঞাপন প্রচার, ভুল ও মনগড়া টিআরপি রেটিংয়ের আড়ালে দেশীয় নাটক ধ্বংস করছে টিভি চ্যানেলগুলো- এমনটাই দাবি করলেন শিল্পীরা।

শুক্রবার বিকালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে এই আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন অভিনয় শিল্প সংঘের সভাপতি ও অভিনেতা শহীদুল আলম সাচ্চু, সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব নাসিম, হিল্লোল,আজাদ আবুল কালাম, চয়নিকা চৌধুরী, সুইটি, চিত্রলেখা গুহ, মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী, মোহন খান, তানিয়া আহমেদ, সুমন আনোয়ারউর্মিলা শ্রাবন্তী কর, জাকিয়া বারী মম, শামিমা তুষ্টি, রওনক হাসান,আহমেদ রুবেল, মাজনুন মিজান, বৃন্দাবন দাস, এস এ হক অলিক, কে এস ফিরোজ, মৌটুসি বিশ্বাস, লুতফুর রহমান জর্জ, এজাজ মুন্না, মোস্তফা মনন প্রমুখ।

প্রবীন অভিনেতা ও নাট্য নির্মাতাদের মধ্যে ছিলেন মামুনুর রশিদ,ড. এনামুল হক, আবুল হায়াত, দিলারা জামান, মাসুম আজিজ, আফরোজা বানুসহ আরও অনেকে।

Advertisement

অনুষ্ঠানে দশটি বিষয়ের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এগুলো হলো- ১. টেলিভিশন ও টেলিভিশন নাটককে শিল্প ঘোষণা করা ২. সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অভাব ৩. নাটকের মান নিয়ন্ত্রণে অধিকাংশ টেলিভিশন চ্যানেলের ব্যর্থতা কিংবা উদাসীনতা ৪. নাটকে কতিপয় মধ্যস্বত্বভোগীদের হস্তক্ষেপ ৫. নাটকের মূল্য কমে যাওয়া ৬. চরিত্রাভিনেতাদের হারিয়ে যাওয়া ৭. বিজ্ঞাপন বাণিজ্য এবং তথাকথিত টিআরপি ৮. ত্রিপক্ষীয় চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়া (২০১৭ সালের জুলাইয়ে চুক্তি হয়েছিল) ৯. নাট্য নির্মাণে বহুমুখী নিম্ন প্রতিযোগিতা ১০. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব। 

এ অনুষ্ঠানে মোশাররফ করিম বলেন, ‘অনেক কাজ করি কিন্তু তৃপ্তি পাই না। অনেক টাকা রোজগার করি, কিন্তু সেটা একটা ভালো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে করতে চাই। নাটকের পেছনে যারা কাজ করছে, তাদের যথাযথ সম্মানী দিতে হবে। আর এ জন্য নাটকের বাজেট বাড়াতে হবে।’

চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘পেশাদারিত্ব বলতে আমি বুঝি, যে কাজটি করে আমি বাঁচতে চাই। সেই কাজটি করে বাঁচার জন্য অভিনয় শিল্পী সংঘে যে নয়শো জন শিল্পী আছেন, প্রতেক্যের যার যার দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে আমরা যে কাজটি করছি সেটা আসলে পেশাদারিত্বের মতো যাওয়ার কাজ কিনা।’

চঞ্চল আরও বলেন, ‘সংকট সমাধানে দেশের চ্যানেলগুলোর সাথে কথা বলা যেতে পারে, বিভিন্ন সংগঠন আছে তাদের সাথে কথা বলে একটা সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে। সংগঠন যে সিদ্ধান্ত নিবে সেভাবেই আমরা চলতে রাজি আছি। সংগঠন যদি মনে করে যে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা কাজ করবো না, একটি মানুষও কাজ করবো না। প্রমাণ করবো যে শিল্পী সংঘে আমরা যারা আছি তারাও আসলে মানুষ। নাটকের সঙ্গে জড়িত সবাইকে একত্রিত হতে হবে।’

Advertisement

কীভাবে নাটকের পেশাদারিত্ব সংকট দূর করা যায় সেটা নিয়ে আলোচনার আয়োজন করে অভিনয় শিল্পী সংঘ। এর সাথে নাট্যকার সংঘ, ডিরেক্টর গিল্ড, প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন একাত্মতা প্রকাশ করে তাদের নেতা কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।

এমএবি/এলএ/এমএস