দেশজুড়ে

নজর কেড়েছে ট্রেন স্কুল

ট্রেন চলেছে, ট্রেন চলেছে, ট্রেনের বাড়ি কই? কবি শামসুর রাহমানের কবিতার মতোই ট্রেন থেকে নামছেন যাত্রীরা। কিন্তু এ যাত্রী সে যাত্রী নয়, আর এ ভ্রমণও সে ভ্রমণ নয়। এই ভ্রমণের যাত্রীদের গন্তব্য আলোর পথে। এরাই একদিন হবে আলোর দিশারী। বই, খাতা ও কলম হাতে দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা যাদের।

Advertisement

ঠিক ট্রেনের আদলে রং করা হয়েছে তাদের বিদ্যালয়। এর ফলে প্রাথমিক এ বিদ্যালয়টি জেলায় এখন ‘ট্রেন স্কুল’ নামে পরিচিত।

টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার দিগরবাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি যেন চলন্ত ট্রেন। এর কারুশিল্পী প্রধান শিক্ষক তারেকুল ইসলাম নিজ হাতে রেলগাড়ির মতো নকশা করেছেন বিদ্যালয়ের দেয়াল। এ কর্মযজ্ঞে সহযোগিতা করেছেন বিদ্যালয়ের পিয়ন শাহিন আলম। স্লিপ অনুদানের টাকায় বিদ্যালয়টিতে করা হয়েছে এমন শৈল্পিক আয়োজন।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মধুপুর উপজেলার দিগরবাইদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ এলাকাবাসী জানান, ট্রেনের সাজে রং করায় বিদ্যালয়টি পুরো উপজেলাসহ জেলাজুড়ে সাড়া জাগিয়েছে। নজর কেড়েছে সকলের। অনেকেই দিগরবাইদে আসছেন বিদ্যালয়টি দেখতে। বিদ্যালয়টি দেখে মুগ্ধ হয়েও ফিরছেন তারা। এ শৈল্পিকতার ফলে বিদ্যালয়টি এখন উপজেলার দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।

Advertisement

বিদ্যালয়ে আগত দর্শনার্থী ফরিদা ইসমিন ও আব্দুস ছালাম জানান, বিদ্যালয়টি দেখে খুবই ভালো লেগেছে, মুগ্ধও হয়েছি। এ ধরনের উদ্যোগ মনযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলেও মনে করেন তারা।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মোখছিদুল আলম রাফি আবেগাপ্লুত হয়ে বলে, ট্রেন স্কুলে পড়ার সুযোগ পেয়ে আমি গর্বিত। এছাড়াও আমাদের বিদ্যালয়টির দর্শনীয় রূপ দেখতে মানুষ এখানে আসছেন এটা ভেবেও গর্ববোধ করি আমরা।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রোকসানা খাতুন ও উম্মে সালমা জানান, আমাদের প্রধান শিক্ষক অত্যন্ত পরিশ্রমী ও মেধাবী। তারই পরিশ্রম আর মেধায় এখন দিগরবাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি দর্শনীয় ট্রেন স্কুল হয়ে উঠেছে। তিনি খুবই যত্ন সহকারে বিদ্যালয়ের দেয়ালগুলোতে রং করেছেন। যার ফলস্বরূপ এখন এলাকাবাসীসহ অনেকেরই প্রশংসা পাওয়া যাচ্ছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তারেকুল ইসলাম জানান, কবি শামসুর রাহমানের বিখ্যাত কবিতা ‘ট্রেন’র বাস্তব চিত্র শিক্ষার্থীদের বুঝানোর জন্যই আমি বিদ্যালয়টি ট্রেনের মতো করে রং করেছি। শিক্ষার্থীরা যাতে মজা পেয়ে লেখাপড়ায় মনযোগী হতে পারে সেই চিন্তা থেকেই বিদ্যালয়টি ট্রেনের মতো আকর্ষণীয় রূপে সাজানো হয়েছে।

Advertisement

তিনি আরো জানান, এ ব্যাপারে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা বিভাগ, বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী সার্বিক সহযোগিতা করেছেন।

এ প্রসঙ্গে মধুপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ.এইচ.এম রেজাউল করিম জানান, আমাদের বিদ্যালয় আমরা গড়ব স্লোগানে প্রতিটি বিদ্যালয় আকর্ষণীয় রূপে সাজাতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ স্লোগানেরই অংশ হিসেবে দিগরবাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি রং করে ট্রেনের আদলে আনা হয়েছে। বিদ্যালয়ের এ পরিবর্তন ইতোমধ্যেই জেলা ও উপজেলাবাসীর নজর কেড়েছে।

আরিফ উর রহমান টগর/এফএ/পিআর