আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমাদের নেতা শেখ হাসিনা ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। সরকার হস্তক্ষেপ করবে না। এ বিষয়ে তারা কিছু বলেননি। আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে কাদের বলেন, কিছু কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, কিছু কিছু বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকেও ভদ্রতার সঙ্গে শালীনতার সঙ্গে জবাব দেয়া হয়েছে।
Advertisement
এর আগে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত গণভবনে কথা হয় দুইপক্ষে। সংলাপ শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কামাল হোসেন বলেন, ভালো আলোচনা হয়েছে।সংলাপ থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, অত্যন্ত খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। ড. কামাল হোসেনসহ সবার কথা আমাদের নেত্রী মন নিয়ে শুনেছেন। একজন দুইবার তিনবার চারবার কথা বলেছেন। তিনি একবারও অধৈর্য হননি। আমাদের পক্ষ থেকেও আমাদের সিনিয়র নেতারা বক্তব্য দিয়েছেন।
ঐক্যফ্রন্টের দাবি ছিল সাত দফা। তবে প্রধান দাবি ছিল সংসদ ভেঙে দিয়ে সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। এ প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা সংবিধানের বাইরে যাব না।
ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী তাদের যেভাবে যুক্তি দিয়েছেন তাতে মনে হয়েছে উনাদের অনেকেই কনভিন্সড। ঐক্যফ্রন্ট চাইলে আবারও আলোচনা হবে। তবে আমরা সংবিধানের বাইরে যেতে পারবো না- এটাও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি।
Advertisement
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আলোচনার দুয়ার সবসময় খোলা থাকবে। তারা চাইলে আলোচনা আবারও হবে। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) এও বলেছেন- সরকার নির্বাচনে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, একটা ব্যাপার পরিষ্কারভাবে বলেছি, ড. কামাল হোসেন সাহেবের চিঠির উত্তরেও একটা কথা লেখা ছিল সেখানে। বলা ছিল, সংবিধানসম্মত সকল বিষয়ে আলোচনা হবে, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার বিষয়। কাজেই উই কেন নট গো বিয়ন্ড দ্য কনস্টিটিউশন।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে কাদের বলেন, না, এসব কোনো বিষয়ে আলোচনা হয়নি। আমার মনে হয় প্রাইম মিনিস্টার যেসব যুক্তি দিয়ে কথা বলেছেন, তাদের নেতৃবৃন্দ অনেকেই কনভিন্সড হয়েছেন বলে আমরা মনে করি।
সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের দাবি সংলাপে নাকচ হয়েছে। কাদের বলেন, পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশে সংসদ ভেঙে নির্বাচন হয় না। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের উদাহরণ দেয়া হয়েছে। আসলে নির্বাচন সব দায় দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন। শিডিউল ঘোষণার পরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান ইলেকশন কমিশনের ওপর ন্যস্ত হবে। কাজেই এসব বিষয়ে তাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই, তাদের শঙ্কার কোনো কারণ নেই।
Advertisement
তিনি বলেন, আলোচনা অব্যাহত থাকবে। এখানে কিছু কিছু বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন, সভা-সমাবেশ তথা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। কাদের বলেন, সভা-সমাবেশে বাধা না দেয়ার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে ঐক্যফ্রন্টকে। তবে রাস্তা বন্ধ করে নয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রয়োজনে একটি কর্নার করে দেয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
রাজনৈতিক মামলার বিষয়ে সংলাপে ড. কামাল হোসেন এবং মির্জা ফখরুলের কাছ থেকে তালিকা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আশ্বাস দিয়েছেন সেই তালিকা দেখে যেটা রাজনৈতিক মামলা মনে হবে, সেটা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নির্বাচনে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়টিও কার্যত নাচক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ওবায়দুল কাদের বলেন, ড. কামাল হোসেনকে আমাদের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, আপনিই বলুন, আপনিও তো ইলেকশন করেছেন। স্বাধীনতার পর থেকে বহু নির্বাচনই হয়েছে এই দেশে। এসব নির্বাচনের মধ্যে কেবল মাত্র ২০০১ সালেই একবার সেনাবাহিনীকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এছাড়া কোনো নির্বাচনে বাংলাদেশে সেনাবহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার ছিল না। কাজেই এখন কেন চান?
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি নিয়ে আশ্বাস মেলেনি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটা আইনের ব্যাপার, আদালতের বিষয়। আইন আদালতের বিষয়ের সঙ্গে সংলাপে কোনো বিষয় সংলাপের মধ্যে আসতে পারে না। কাদের বলেন, যে দুটি মামলায় তার সাজা হয়েছে, এটা কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মামলা। আমাদের নেত্রী এটাই বলেছেন, এটা আমি ফাইল করিনি। এটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মামলা। সে সরকারের দায়িত্বে যারা ছিলেন, তারা বিএনপির লোক।
কাদের বলেন, আমাদের নেত্রীর বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা ছিল। সেগুলো তদন্ত করে রিপোর্ট হয়েছে, কোনো মামলা প্রত্যাহার হয়নি।
নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার দাবি প্রসঙ্গে কাদের জানান, সরকার প্রধান বলেছেন, ইভিএম আধুনিক পদ্ধতি, সাপোর্ট করি। তবে এবার ইভিএম হয়তো নির্বাচন কমিশন সীমিতভাবে ব্যবহার করবে। এতে আমাদের সমর্থন থাকবে। তবে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভোট পর্যবেক্ষণে সকারের কোনো আপত্তি থাকবে না বলে জানান কাদের।
ড. কামাল হোসেন প্রাইম মিনিস্টারকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তিনি মন্তব্য করেছেন, আপনি যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তার অনেক কিছু আমি জানতাম না। ছোট পরিসরে বসার ব্যাপারে আমাদের নেত্রী বলেছেন, আমার দ্বার উন্মুক্ত। আগামী ৮ তারিখ পর্যন্ত আরও কয়েকটি সংলাপ আছে। তারা এলেই হবে। তারা যদি মনে করেন আসা দরকার। আমাদের ইনফরমেশন দিলেই চলবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তাদের তিন নম্বর পয়েন্ট হলো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। বিষয়টি নিয়ে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। তাদের ছয় নম্বর দফা হলো বিদেশি পর্যবেক্ষক আসবেন এবং নির্বাচন মনিটরিং করবেন। এই ব্যাপারেও আমাদের কোনো আপত্তি নেই। প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন, এ ব্যাপারে আমাদের সাপোর্ট থাকবে।
এর আগে সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন ১৪ দল এবং ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সংলাপ শুরু হয়।
ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দলে ছিলেন- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস ও ড. মঈন খান, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে সক্রিয় জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমীন, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, সাবেক দুই সংসদ সদস্য এসএম আকরাম ও সুলতান মো. মনসুর আহমেদ, জেএসডির আ স ম আবদুর রব, তানিয়া রব, আবদুল মালেক রতন, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী ও মোস্তফা মহসিন মন্টু, মোকাব্বির খান, জগলুল হায়দার আফ্রিক এবং শফিক উল্লাহ।
অন্যদিকে সংলাপে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন- ২৩ জন প্রতিনিধি, এর মধ্যে আওয়ামী লীগের জোট শরিক দলগুলোর নেতারাও ছিলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, মো. আবদুর রাজ্জাক, কাজী জাফর উল্যাহ, আবদুল মতিন খসরু, রমেশ চন্দ্র সেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, দীপু মনি, আবদুর রহমান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আইনবিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও জাসদের একাংশের সভাপতি মইন উদ্দীন খান বাদল।
এফএইচএস/এএসএস/এমএ/বিএ